শবে মেরাজ ২০২৩ | sobe meraj 2023
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মেরাজ যাত্রা সংগঠিত হওয়ার ব্যাপার মুসলিমদের বিশ্বাস রাখা ফরজ। কারণ, বিষয়টি পবিত্র কোরআন এবং হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
শবে মেরাজ ২০২৩
রাসূল সা. রজব মাসের ২৭ তারিখ অর্থাৎ ২৬ দিবাগত রাতে মেরাজ সফর করেন। আমাদের বাংলাদেশে ২৪ জানুয়ারি, রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আমরা বলতে পারি আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রোজ শনিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।
মেরাজ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মেরাজ যাত্রা সংগঠিত হওয়ার নির্দারিত তারিখের ব্যাপারে ইতিহাসবীদগণের বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো কারো মতে নবুওয়াতের পঞ্চম বছর, আরেক টি গ্রহনযোগ্য মতে নবুওয়াতের একাদশ সনে বিশ্ব নবীর মেরাজ অনুষ্ঠিত হয়।
মেরাজ যাত্রা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের এরটি বড় মুজিযা, সে জন্য বছরটি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী এ বছরই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে মর্যাদা পূর্ণ শোভাযাত্রার মাধ্যম সম্মানিত করা হয়।
সফর শুরুর কথা।
এক রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বুখারীর এক বর্ণনায় হাতিমে কাবায়) (বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় নিজের বাসভবনে) শুয়ে ছিলেন। এমন সময় হযরত জিব্রাইল আ. ও হযরত মিকাইল আ. এসে বললেন; ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সা. আমাদের সাথে চলুন, অতপর রাসূল সা. কে বোরাক নামক এক বাহনে আরোহন করানো হল। যার চলার গতি এত দ্রুত ছিল যে, যতদূর দৃষ্টি পৌঁছছিল , সেখানে তার কদম পড়ছিল।
এরূপ দ্রুত গতিতে চলে প্রথমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সিরিয়ার মসজিদে আকসায় নিয়ে যায়। সেখানে আল্লাহ তায়ালা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য পূর্ববর্তী সকল নবীকে একত্রিত করে রেখেছিলেন। এখানে আসার পর হযরত জিবরাই আ. আযান দিলেন, আজানের পর সকল নবী ও রাসূলগণ নামাজ আদায় করার জন্য কাতার বদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু, কে নামাজ পড়াবে এই বিষয়ে সকলেই অপেক্ষায় ছিলেন। হযরত জিবরাইল আ. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হাত ধরে সামনে বাড়িয়ে দিলেন।
সেখানে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সমবেত সকল নবী, রাসূল এবং ফেরেশতাগণের ইমাম হয়ে নামাজ পড়ালেন। বোরাকের পিঠে চড়ে পার্থিব জগতের সফর এখানে শেষ হয়।
সফরের দ্বিতীয় ধাপ:
এরপর শুরুহল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উর্ধ্বজগতের ভ্রমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে একের পর এক সকল আকাশে সফর করানো হয়। তিনি প্রথম আকাশে হযরত আদম আ. এর সাথে, দ্বিতীয় আকাশে হযরত ঈসা আ. তৃতীয় আকাশে হযরত ইউসুফ আ. চতুর্থ আকাশে হযরত ইদ্রিস আ. পঞ্চম আকাশে হযরত হারুন আ. ষষ্ঠ আকাশে হযরত মূসা আ. এবং সপ্তম হযরত ইব্রাহিম আ. এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন।
জান্নাত সফর:
এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন করেন, পথে হাউসে কাউসার অতিক্রম করে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি আল্লাহ তাআলার কুদরতি হাতের সৃষ্টি এমন সব বিস্ময়কর অপূর্ব সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেন যা আজ পর্যন্ত কোন চোখ দেখেনি, কোন কান তা শ্রবন করেনি এবং কোন মানুষের ধারণ কল্পনাও সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি।
জাহান্নাম সফর:
এরপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে জাহান্নাম উপস্থিত করা হলো, সব ধরনের আজাব ও ভয়াবহ এবং কঠিন আগুনে তা ভরপুর করা ছিল। যে আগুনের লোহা বা পাথরের মত শক্ত ও কঠিন বস্তুর ও অস্তিত্ব বলতে কিছুই বাকী থাকে না।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে একদল লোককে দেখতে পেলেন, তারা মৃত জন্তু-জানোয়ার খাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন; এরা কারা? জিব্রাইল আ. উত্তর দিলেন, এরা হচ্ছে সেসব লোক যারা দুনিয়ায় মানুষের গোশত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গীবত বা পরনিন্দা করত। অতঃপর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো।
সফরের তৃতীয় ধাপ:
তারপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো সামনে এগিয়ে যান। কিন্তু জিব্রাইল আলাই সাল্লাম এখানেই রয়ে গেলেন। কেননা, এখান থেকে আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি হযরত জিব্রাইল আ. এর ছিল না।
মহান রবের দীদার:
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে মহান আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হন। বিশুদ্ধ মত এটাই যে, আল্লাহ তায়ালাকে তিনি শুধু অন্তর দ্বারা অনুভব করেননি বরং চোখ দিয়ে প্রত্যক্ষ করার সুযোগও লাভ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও সকল বিজ্ঞ সাহাবী ও ইমামদের এ বিষয়ে এটাই অভিমত।
সেখানে পৌঁছে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে সেজদায় পড়ে যান এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথোপকথনের সৌভাগ্য লাভ করেন। এ সময় নামাজ ফরজ করা হয়। এরপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসেন সেখান থেকে।