ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন | eyajuj majuj somporke janun
– bangla hadis | islamic post –
কখন আসবে ইয়াজুজ মাজুজ ?
অতীত কালে এই দুই পর্বতের মধ্যে একটি গিরিপথ ছিল। এই পথে ইয়াজুজ মাজুজ বাহির হইয়া আসত এবং পার্শ্ববর্তী জনবসতির উপর অকথ্য অত্যাচার ও জুলুম করিত। তৎকালীন নবী ছিলেন হযরত জুলকারনাইন। তাহার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সেই গিরিপথটি ৬০ গজ প্রশস্ত এবং পর্বতের চূড়া বরাবর সু-উচ্চ অষ্টধাতু নির্মিত একটি মজবুত প্রাচীন দ্বারা বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়।
এই ঘটনার কথা উল্লেখ করিয়া পবিত্র কোরানের সূরা কাহাফে,
মহান আল্লাহ ইরশাদ করিয়াছেন
ইয়াজুজ মাজুজ কর্তৃক অত্যাচারিত একটি জনপদ হযরত জুলকারনাইনকে বলিল, হে জুলকারনাইন! ইয়াজুজু মাজুজের দল দেশে খুবই উৎপাত করিতেছে। তাহাদের অত্যাচার এতই বাড়িয়া গিয়াছে যে, আমাদের টিকিয়া থাকা দায় হইয়া পড়িয়াছে। আপনি কি আমাদের ও তাহাদের মধ্যস্থলে একটি সুদৃঢ় প্রাচীন নির্মাণ করাইয়া তাহাদের অত্যাচারের পথ বন্ধ করিয়া দিতে পারেন? এই কাজে সহায়তার জন্য আমরা কি চাঁদা তুলিবার ব্যবস্থা করিব?
আরো পড়ুন>> কেয়ামত কখন হবে ?
প্রত্যুত্তরে তিনি বলিলেন, তোমাদের শারীরিক সাহায্যই আমার কাম্য। আল্লাহ পাক আমাকে যাহা দান করিয়াছেন, তাহাই সেই কাজের জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ টাক-পয়সা অভাব নাই। তোমরা যদি আমাকে শারীরিক পরিশ্রম দ্বারা সাহায্য দান কর তাহা হইলে আল্লাহর রহমতে তোমাদের হেফাজতের জন্য এবং তাহাদের অত্যাচার হইতে নিষ্কৃতির জন্য একটি প্রাচীন নির্মাণ করিয়া দিতে পারি।
তারপর তাহার নিদের্শক্রমে বহু লোহার পাত একত্রিত করা হইলে এইগুলি দ্বারা তিনি পাহাড়ের চূড়া বরাবর সুউচ্চ একটি প্রাচীর নির্মাণ করিলেন। তারপর সকলকে আগুন জ্বালাইতে আদেশ করিলেন। উত্তপ্ত আগুনে তামা গলান হইল এবং পরে তামা লৌহ পাতের জোড়ায় জোড়ায় এবং ছিদ্রগুলিতে ঢালিয়া দেয়া হইল। ফলে ইয়াজুজ মাজুজের দল বাহির হওয়ার জন্য ছিদ্র খুঁজিয়া পাইবে না এবং উহাতে ছিদ্র করিতে সক্ষম হইবে না।
সুতরাং মজবুত প্রাচীরের আড়ালে পড়িয়া তাহারা বাহির হইবার পথ পাইতেছে না। প্রাচীর ভাঙ্গিয়া কিংবা ছিদ্র করিয়া বাহির হইবার জন্য তাহারা সর্বদাই চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু সমস্ত দিন কঠোর পরিশ্রম করিয়া তাহারা যতখানি ছিদ্র করিয়া নিতান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া পড়ে, তাহার পর দিবস আসিয়া দেখে যে আল্লাহর কুদরতে তাহা আবার পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে। এইভাবে দিনভর দেওয়াল কাটে এবং রাত্রে তাহা পূর্বের মত ঠিক হইয়া যায়। সেই জন্যই তাহারা সেই দেওয়ালের আড়ালে আবদ্ধ হইয়া রহিয়াছে এবং পৃথিবীবাসী তাহাদের অত্যাচারের সকল কবল হইতে রক্ষা পাইতেছে।
তারপর যখন তাহাদের বাহির হওয়ার সময় আসিবে তখন আল্লাহর হুকুমে প্রাচীর ভাঙ্গিয়া পড়িবে এবং তাহারা বাহির হইয়া আসিবে। তাহারা সংখ্যায় এত বেশী হইবে যে, তাবরিয়া নামক হ্রদের পানি যাহার পরিধি ৪৯-১০০ ক্রোশ হইবে, তাহাদের প্রথম দল খাইয়া নিঃশেষ করিয়া ফেলিবে। পরবর্তী দল সেখানে আসিয়া হ্রদের অবস্থা দেখিয়া বলিবে যে, মনে হয় এখানে কোন সময় পানি ছিল না। তাহাদের উপদ্রব হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুদৃঢ় দুর্গ কাজে আসিবে। তাহারা হত্যা ও অবাধ লুটতরাজ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাইবে।
আরো পড়ুন>> কে সেই ইমাম মাহদী?
মনে রাখা দরকার যে, দাজ্জাল নিহত হওয়ার পর এবং ইমাম মাহদীর (রাঃ) পরলোক গমনের পর হযরত ঈসার (আঃ) নেতৃত্বে মানবজাতি যখন মহাসুখে ও শান্তিতে কাল যাপন করিতে থাকিবে তখন ইয়াজুজ মাজুজের দল বাহির হইবে। তাহাদের বাহির হওয়ার কিছু সময় পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আঃ)-কে অহীযোগে জানাইবেন-হে ঈসা! আমি দুনিয়াতে কতকগুলি শক্তিশালী প্রাণী পাঠাইতেছি, তাহাদিগকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা মানুষের নাই।
ইয়াজুজ-মাজুজ থাকা কালিন হযরত ইসা আ. যেখানে আশ্রয় নিবেন
সুতরাং তুমি আমার ধর্মপরায়ণ বান্দাদিগকে লইয়া তুর পাহাড়ে উঠিয়া আশ্রয় গ্রহণ কর। আল্লাহ পাকের নির্দেশ লাভের পর ঈসা (আঃ) মুসলমানদিগকে সঙ্গে লইয়া তুর পাহাড়ের দুর্গের আশ্রয় গ্রহণ করিবেন, যাহা আজও বিদ্যমান রহিয়াছে। অপরদিকে ইয়াজুজ মাজুজের দল পৃথিবীবাসীদের উপর লুট-পাট, বন্দী ও হত্যা করা পুরাদমে চালাইতে থাকিবে।
এমন অবস্থা হইবে যে, তাহারা ব্যতীত পৃথিবীতে আর কোন মানুষই থাকিবে না। তারপর তাহারাঁ সিরিয়ার নিকটস্থ খমর নামক পর্বতের নিকট আসিয়া অহঙ্কার করিয়া বলিবে, পৃথিবীবাসীকে শেষ করিলাম, এইবার চল আকাশবাসীকে খতম করিয়া দেই। এই বলিয়া তাহারা আকাশের দিকে তীর ছুঁড়িতে থাকিবে।
আল্লাহ পাকের নির্দেশে সেই তীরগুলি রক্তমাথা অবস্থায় ফিরাইয়া দেওয়া হইবে। ফলে তাহারা মনে করিবে যে, আকাশবাসীগণকে ধ্বংস করা হইয়াছে। তখন তাহাদের আস্ফালন ও উল্লাসের অন্ত থাকিবে না।
আরো পড়ুন>> দাজ্জালের পরিচয় জেনে আতংকিত হবেন
হযরত ঈসা (আঃ) তাহার সাথীগণসহ তুর পাহাড়ের দুর্গে অবস্থান করিতে থাকিবেন। সেখানে তাহারা ভীষণ অন্নকষ্টে পতিত হইবেন। এমন কি সেই সময় তাহাদের নিকট একটি গরুর কল্লা ১০০ স্বর্ণমুদ্রা অপেক্ষা অধিক মূল্যবান হইবে। পাহাড়ের উপর তাহাদের কষ্টের সীমা থাকিবে না। পরিশেষে তাহারা নিরুপায় হইয়া আল্লাহ পাকের দরবারে ইয়াজুজ- মাজুজের দল ধ্বংস হওয়ার জন্য প্রার্থনা করিবেন।
যেভাবে ইয়াজুজ মাজুজদের মৃত্যু হবে
পরম দয়াময় তাহাদের দোয়া কবুল করিবেন। ফলে আল্লাহ পাক ইয়াজুজ-মাজুজের গ্রীবাদেশে ‘নাগাফ’ নামক এক প্রকার কঠিন রোগ সৃষ্টি করিবেন। সুতরাং এ রোগে আক্রান্ত হইয়া একরাত্রে ইয়াজুজ-মাজুজের দল ধ্বংস হইয়া যাইবে। তাহাদের মৃত্যু সংবাদ জানিবা মাত্রই হযরত ঈসা (আঃ) প্রকৃত অবস্থা জানিবার জন্য লোক পাঠাইবেন এবং সঙ্গীগণসহ পাহাড় হইতে নামিয়া আসিবেন।
কিন্তু ইয়াজুজ-মাজুজের মৃত লাশের পঁচা দুর্গন্ধে দুনিয়ার দাঁড়ানো মুস্কিল হইয়া পড়িবে। সেই দুর্গন্ধের হাত হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈসা (আঃ) সঙ্গীগণসহ পুনরায় প্রার্থনা করিবেন। আল্লাহ পাক তখান ‘আনকা’ নামক উটের ন্যায় দীর্ঘ ঘাড় বিশিষ্ট এক প্রকার প্রাণী প্রেরণ করিবেন। উহারা কোন কোন মৃতদেহ ভক্ষণ করিবে এবং অবশিষ্টগুলিকে সমুদ্রে ও দ্বীপাঞ্চলে নিক্ষেপ করিবে।
কেয়ামতের পূর্বে মাটির বরকত প্রকাশ
আর তাহাদের পচা রক্ত ও দুর্গন্দ দূর করিবার জন্য একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত হইবে। ফলে সমস্ত পৃথিবী পরিষ্কার ও নির্মল হইয়া যাইবে। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাইবে এবং ফল ও ফসলে পৃথিবী ভরিয়া যাইবে।
এমন সময় হইবে যে, একদল লোক একটি আনার ফল ভক্ষণ করিয়া পরিতৃপ্তি হইবে এবং একটি আনারের বাকলের ছায়াতলে কয়েকজন লোক আশ্রয় গ্রহণ করিতে সক্ষম হইবে।
আরো পড়ুন>> কবরের আযাব থেকে বাচাঁর উপায়
দুগ্ধবতী পশুদের দুধ এতই দৃদ্ধি পাইবে যে, একদল লোক একটি বকরীর দুধ পান করিয়া শেষ করিতে পারিবে না। সমস্ত মানুষ আরাম ও শান্তিতে বসবাস করিবে এবং জীবিত লোকগণ তাহাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণ করিয়া বলিবে— হায়! আজ যদি তাহারা বাঁচিয়া থাকিতেন, তাহা হইলে তাহারাও আমাদের সহিত আনন্দে শরীফ হইতেন।
তখন মুসলমান ছাড়া পৃথিবীতে আর কেহই বাঁচিয়া থাকিবে না। সকলেই আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন হইবে। ধন- সম্পত্তির প্রাচুর্য এতই অধিক হইবে যে, দান, ছদকা ও জাকাত দেওয়ার মত লোক খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। সাপ, বিচ্ছু ও হিংস্র জন্তুগুলির দ্বারা কাহারও কোন প্রকার অনিষ্ট হইবে না। ইয়াজুজ-মাজুজের পরিত্যক্ত তীর ও ধনুকগুলি পৃথিবীর লোকগন জ্বালানী হিসাবে বহুদিন যাবত ব্যবহার করিবে। (তিরমিযী, বোখারী, মুসলিম ও আহমদ)