এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন | ek glass dudhe shotadhik loker vojon | bangla hadis

এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন | ek glass dudhe shotadhik loker vojon

দুধ

islamic post | bangla hadis

এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন | islamic post | bangla hadis –

হযরত আনাস রা. মনে মনে ঘাবড়ে গেলেন। দুশ্চিন্তা আর মন খারাপের কারণগুলো একসাথে এসে তার মনে বাসা বাধতে লাগল। হায় হায় করে উঠল প্রাণ। হাহাকারে ভরে গেল মন। দুদিন যাবৎ কোনো খাবার জুটে না। রাস্তায় পথে প্রান্তরে পড়ে যায় ক্ষুৎ পিপাসার তাড়নায় বেহুঁশ হয়ে। সময় কাটতে চায় না। দিন ফুরায় রাতের প্রতীক্ষায়। আর রাত কাটে ক্ষুৎ পিপাসার যন্ত্রণায় নিদ্রাহীন। একেকটি প্রহর যেন অনন্ত সময়।


হযরত আনাস রা.-এর ভাষায়—

একান্ত অপারগ হয়ে আজ শিকায়াত করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে। আমার ক্ষুধার্ত মলিন মুখের পানে তাকিয়ে হুজুর যখন দুনিয়া মোহিত করে মুচকি হাসি দিলেন তখন আনন্দে, খুশিতে আমার অন্তর নেচে উঠেছিল।

আরো পড়ুন>> যে যুদ্ধের ইতিহাসে এখনো মানুষ আশ্চর্য 


তারপর যখন একজন সাহাবীর বাড়ি থেকে এক গ্লাস দুধ আসল তখনও মনের ভিতর স্বপ্নের জাল বুনেছি, এখনই বুঝি আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। ক্ষুধার সুতীব্র জ্বালা অন্তত লাঘব হবে। ক্ষুৎ পিপাসার তীব্রতায় সামান্য প্রলেপ তো পড়বে।


এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের পরিতৃপ্তি ভোজন:

কিন্তু হায়! সব স্বপ্ন বুঝি ধুলায় লুটিয়ে যায়। কত আশা- প্রত্যাশায় মন ভরে উঠেছিল, সবই বুঝি মাটি হয়ে যায়। মাত্র এক গ্লাস-দুধ। হাতে আসার পর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, যাও আসহাবে সুফফার সকলকে ডেকে নিয়ে এসো। তাদেরকে বলবে, আমি সকলকে মেহমানদারির জন্য দাওয়াত করছি। কেউ যেন বাদ না থাকে।


আসহাবে সুফফার সদস্য সংখ্যা তখন শতাধিক। এত বিশাল সংখ্যক লোকের জন্য এক গ্লাস দুধ বিশাল সমুদ্রে এক ফোটা পানি বা প্রান্তহীন তপ্ত মরুভূমিতে এক গ্লাস পানি ছিটিয়ে দেওয়ার মতো।


তদুপরি আরও নির্মম ও কঠিন বাস্তবতা হলো যে, এই দুধটুকু সকলকে খাওয়ানোর দায়িত্ব বর্তাবে যথারীতি আমার ওপর। একে একে সবাই খাওয়ার পর যদি অবশিষ্ট কিছু থাকে, তাহলে হয়তো আমার ভাগ্যে জুটতে পারে।

আরো পড়ুন>> উহুদ যুদ্ধের ইতিহাস


এই সকল নানাবিধ আশঙ্কার কথা আমার অস্থির মনে আলোড়িত হতে লাগল। মনের শত শঙ্কাকে পাথর চাপা দিয়ে রাখছিলাম। কারণ মনের ভাব প্রকাশ করার কোনো উপায় ছিল না।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে হুকুম করেছেন, সেখানে অন্য কিছু চিন্তা করাও তো অপরাধ। তাই মনের কালিমা মনেই আড়াল করে ছুটলাম আসহাবে মুক্তাকে খবর দিতে।


একে একে সকলেই আসলেন। শতাধিক লোক জমায়েত হয়ে গেলেন। সকলেই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমানদারির দাওয়াতে সাড়া দিতে এসেছেন। আসহাবে সুফফার প্রতিটি সদস্য ক্ষুধার্ত। কেউ দু’দিন যাবৎ অনাহারে কেউ একদিন যাবৎ ক্ষুৎপিপপসায় কাতর, ক্লান্ত বিধ্বস্ত।

আরো পড়ুন>> রাসূলের ইশারায় গাছের চলাচল


ক্ষুধার তাড়নায় সকলের চেহারা মলিন হয়ে আছে। এক গ্লাস দুধ তাদের সকলের ক্ষুধা নিবারণের একমাত্র উপায়। তারাও যদি বুঝতে পারে যে, তাদের সকলের মেহমানদারির সম্বল কেবলমাত্র এক গ্লাস দুধ, তাহলে হয়তো তাদেরও অনেকের মন ভেঙ্গে যাবে। সাত পাঁচ চিন্তা করে আমি তাদেরকে আর সব কথা খুলে বললাম না। সকলকেই ডেকে এনে হাজির করলাম।


এদিকে হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাবলেশহীন সৌম্য চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই। দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনার কোনো ছায়া রেখাপাত করেনি। ক্ষুধার্তকে অন্নে পরিতৃপ্ত করতে পারার কী এক সুখ ও স্বস্তিতে যেন তার চাঁদমুখ ঝলমল করছে। নিঃশেষে দান করার ভরপুর আনন্দ-অভিব্যক্তি তার চেহারায় ভেসে বেড়াচ্ছে। একে একে সকলের আগমন তিনি অবলোকন করলেন। আসহাবে সুফফার সর্বশেষ সদস্যটি আসা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন।

আরো পড়ুন>> বৃদ্ধার মুখে রাসূলের মুজিযার বর্ণনা

অতঃপর হযরত আনাসের মনের আশঙ্কা ও দুর্ভাবনাটিই সত্য হলো। যথারীতি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক চুমুক দুধ পান করে গ্লাসটি হযরত আনাসকে দিয়ে বললেন, এই গ্লাস থেকে সকলকে পান করাও। একজনও যেন বাদ না থাকে। সকলকে লক্ষ্য করে বললেন, যার যতটুকু খুশি পান কর। পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি সহকারে পান কর।


আল্লাহর গায়বী সাহায্য:

এরপরের ঘটনা তো শুধুই অলৌকিকতার বিস্ময়কর চাদরে আচ্ছাদিত। মানুষের কল্পনার দৌড়ও বুঝি এত দুরন্ত গতিতে ছুটতে পারে না। এক গ্লাস দুধ। শতাধিক মানুষ! উপরন্তু সকলেই ক্ষুধার্ত পিপাসার্ত। পানাহারের অভাবে ক্লান্ত বিধ্বস্ত। ক্ষুৎ পিপাসায় কাতর। একে একে সকলেই পান করলেন।


বরকতের এই অমীয় শরাব যতটুকু পারলেন, পান করলেন। তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন। তখনও হযরত আনাসের হাতে গ্লাস। দুধে পরিপূর্ণ। দুধ কমেনি, বরং গ্লাস উপচে পড়ার উপক্রম। হযরত আনাস রা. নিজের মনে উকি দেওয়া আশঙ্কার কথা মনে করে লজ্জিত হলেন।


মর্মপীড়া ও অনুশোচনায় দগ্ধ হলেন। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় দুঃসহনীয় কষ্টে তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন এটা নববী দরবার। লোক লৌকিকতার কোন আচার আচরণ এখানে চলে না। আশেক আর মাশুকের সম্পর্কে যেখানে পর্দা নেই। কুদরত আর মু’জিযা যেখানে একাত্ম হয়ে যায় সেখানে কি অসম্ভব বলে কিছু আছে? থাকতে পারে?

***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***

Leave a Reply