এক পতিতা সুন্দরী রমণীর ঘটনা | potitar hedayet paoyar ghotona | islamic post

এক পতিতা সুন্দরী রমণীর ঘটনা | potitar hedayet paoyar ghotona

islamic post

islamic post | islamic history

এক পতিতা সুন্দরী রমণীর ঘটনা | islamic post | islamic history –

একবার এক চরিত্রহীনা পতিতা সুন্দরী রমণী কোথাও হইতে ‘বোস্তান’ শহরে আসিয়া লোকদের পাপকর্মে লিপ্ত করিতে লাগিল। প্রতিবার দেহভোগের বিনিময়ে তাহাকে দুইশত দিরহাম করিয়া দিতে হইত। তাহার রূপ ও সৌন্দর্য এতই মোহনীয় ও আকর্ষণীয় ছিল যে, এই বিরাট অংক ব্যয় করিতে বিত্তশালী গ্রাহকরা মোটেই কুণ্ঠাবোধ করিত না।

একমাস কাল শহরের বুকে তাহার এই হারাম ব্যবসা চলিতে থাকার কুফল এই দাড়াইল যে, অনেক সমৃদ্ধশালী পরিবার সর্বস্বান্ত এবং অনেক লোক চারিত্রিক দিক হইতে ধ্বংস হইয়া চলিল।


হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ)-এর কৌসল:

এই অবস্থায় সমাজের শুভাকাঙক্ষী চিন্তাশীল লোকেরা তৎকালের মশহুর ওলী-আল্লাহ হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ)-এর নিকট হাজির হইয়া এই বিষয়ে তাঁহাকে বিস্তারিতভাবে জানাইল। লোকেরা তাঁহার নিকট আরজ করিল- হুযূর, দয়া করিয়া শহরের বুক হইতে এই পাপ নিবারণের কোনও সুরাহা করুন। নতুবা অল্পকালের মধ্যেই শহর ধ্বংস হইয়া যাইবে।

আরো পড়ুন>> আল্লাহর সাথে ব্যবসা


লোকদের মুখে এই ঘটনা শুনিবার পর একদা মাগরিবের নামাযান্তে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রাহঃ) দুইশত দিরহাম সঙ্গে লইয়া ঐ রমণীর বাড়ির দিকে রওয়ানা হইলেন এবং তাহার ঘরের দরজার সামনে পৌঁছিয়া সেখানেই বসিয়া রহিলেন।


যথাসময়ে যথারীতি গ্রাহকদের আগমন শুরু হইল; কিন্ত গৃহদ্বারে হযরত বায়েজীদকে বসা দেখিয়া সকলেই ফিরিয়া গেল। আনুমানিক রাত দশটা পর্যন্ত ঘরে কোন গ্রাহক প্রবেশ না করায় রমণীর মনে ভাবনা জাগিল যে, অন্যান্য দিন এতক্ষণে গ্রাহকদের অস্বাভাবিক ভীড় লাগিয়া যায়, অথচ আজ একজনও আসিল না; ইহার কারণ কি? সে তখন নিজের ভৃত্যকে অবস্থা জানার জন্য বাহিরের দিকে পাঠাইয়া দিল।

আরো পড়ুন>> আল্লাহর সবচে অপছন্দের গোনাহ


ভৃত্য ঘরের দরজায় আসিয়া দেখিল, হযরত বায়েজীদ বসিয়া রহিয়াছেন আর লোকেরা দরজা পর্যন্ত আসিয়া তাঁহাকে দেখিয়া যাইতেছে। সকলের মনেই বিস্ময় যে, হযরত বায়েজীদ (রহঃ) আজ এই দেহ-পসারিণীর গৃহদ্বারে কেন আসিয়াছেন! ভৃত্যটি হযরত বায়েজীদকে নিশ্চয়ই চিনিত না।


সে ঘরের ভিতর যাইয়া রমণীকে খবর দিল যে, মিস্কীন বেশের একব্যক্তি ঘরের দরজায় বসিয়া রহিয়াছে আর তাহাকে দেখিয়া অন্যান্য লোক আসিয়া ফিরিয়া যায় ।

আরো পড়ুন>> বিসমিল্লাহ বদলে দিবে আপনার জীবন


এই খবর পাইয়া রমণীটি ঐ ভৃত্যের মারফত নবাগত লোকটিকে (হযরত বায়েজীদ) জিজ্ঞাসা করিল- আপনি কিরূপে এখানে আসিলেন? আমার এখানে তো গরীব লোকের আসার কথা নয়। কারণ এখানকার ‘রেট্’ অনেক চড়া। বলুন, আপনি কি উদ্দেশ্যে আসিয়াছেন?


হযরত বায়েজীদ (রহঃ) বলিলেন- আমি রমণীর সাথে সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছি। একথাটি শুনিয়া ভৃত্যটি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলিল- আরে জনাব, ইনি খুব উঁচু দরের রমণী। দুইশত দিরহামের কম হইলে ইনি কাহারও সাথে কথাও বলেন না। তখন হযরত বায়েজীদ বলিলেন- আমি দুইশত দিরহাম দিতে প্ৰস্তুত আছি।


মোটকথা, হযরত বায়েজীদ (রহঃ) ঘরের ভিতর তশ্রীফ নিলেন এবং নগদ দুইশত দিরহাম আদায় করতঃ মহিলাটিকে বলিলেন- আজিকার জন্য তুমি আমার হইয়া গিয়াছ। সুতরাং আমি যাহা বলিব, তোমাকে তাহা মানিতেই হইবে।

আরো পড়ুন>> ভিক্ষুকের দোয়ার পাওয়ার জানলে অবাক হবেন


মহিলা উত্তর করিল- জী হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলিয়াছেন। তখন তিনি বলিলেন- প্রথমে তুমি তোমার পরিধানের এই সমস্ত রেশমী পোশাক বদলাইয়া সাদা পোশাক পর, তারপর ওযূ করতঃ একখানি জায়নামায সহ আমার নিকট চলিয়া আস।


বায়জীদ বোস্তামীর দোয়া:

তাঁহার নির্দেশ অনুসারে মহিলাটি কাপড় বদলাইয়া ওযূ করতঃ জায়নামায লইয়া তাঁহার সম্মুখে হাজির হইল। তিনি হুকুম করিলেন- জায়নামাযে কিলামুখি হইয়া দাঁড়াও। সে হুকুম তামিল করিল। তাহাকে কিলামুখী অবস্থায় জায়নামাযে দাঁড় করাইয়া দিয়া হযরত বায়েজীদ (রহঃ) অত্যন্ত কাকতি-মিনতির সহিত আল্লাহর দরবারে এই বলিয়া মোনাজাত করিতে লাগিলেন- ইয়া আল্লাহ! তুমি সর্বজ্ঞ; সবকিছুই তুমি দেখ। আমার সাধ্য যতটুকু ছিল, তাহা আমি করিয়াছি। ব্যভিচারের ঘৃণ্য পর্যায় হইতে টানিয়া আনিয়া আমি তাহাকে নামাযীর বেশে জায়নামাযে দাঁড় করাইয়া দিয়াছি। আমার দায়িত্ব আমি পালন করিয়াছি, বাকী আছে শুধু তাহার মনের গতি ফিরাইয়া দেওয়া, ইহা তোমারই করণীয়। কাজেই এবার তুমি তোমার

দায়িত্ব পুরা কর ।


অর্থাৎ, আমার যাহা করণীয় ছিল, আমি সমাধা করিয়াছি; ব্যভিচার হইতে টানিয়া নামাযের পর্যায়ে আনিয়া দিয়াছি । এখন বাকী আছে তাহার দিলকে ঘুরাইয়া দেওয়া। ইহা তো তোমারই কাজ। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তোফায়লে তুমি তাহার দিলকে পাল্টাইয়া দাও-তাহার চিন্তাধারার মোড় ঘুরাইয়া দাও।


আল্লাহর ওলীর দোয়ায় পতিতার দিলে পরিবর্তন-

রমণীটি দেখিল, পতিতালয়ে বসিয়াও এই লোকটি খোদাকে ভুলেন নাই, বরং তাহার হেদায়াতের জন্য আল্লাহর দরবারে করুণ ফরিয়াদ জানাইতেছেন! এই অভাবণীয় ব্যাপার দেখিয়া রমণীর মনে ভাবান্তর ঘটিল, আল্লাহর ভয়ে অন্তরাত্মা কাঁপিয়া উঠিল; নিজের আজীবনের সমস্ত গুনাহের কথা স্মরণ করিয়া অনুশোচনায় ভরা ভীতি-বিহ্বল অন্তরে ভাবিতে লাগিল- নিজে তো পাপিয়সী আছিই, আল্লাহর বহু বান্দাকেও পাপে লিপ্ত করিয়াছি।


দিবা-রাত্রি শুধু পাপের খেলাই করিয়াছি, এই অবস্থায় আমার না জানি কি দশা ঘটিবে? এসব কথা ভাবিতে ভাবিতে হঠাৎ এক মুহূর্তে সজোরে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করিয়া সে হযরত বায়েজীদ রহ. এর নিকট নিবেদন করিল- হুযূর, আমাকে তওবা করান এবং আপনার ‘খাদেমা’ (সেবিকা) রূপে এই হতভাগিনীকে গ্রহণ করুন।


হযরত বায়েজীদ (রহঃ) তাহাকে তওবা করাইলেন। সে ঐ মুহূর্ত হইতেই যাবতীয় গুনাহের কাজ ছাড়িয়া দিল এবং শেষ পর্যন্ত ঐ জমানার ইবাদতগুজার ও সাধ্বী মহিলা হিসাবে অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী হইল।


মু’মিন ভাই-বোনেরা আমার! ভাবিয়া দেখুন, আল্লাহ্ ভয় ঐ পাপিয়সী রমণীকে কোন্ অবস্থা হইতে কোন্ অবস্থায় পৌঁছাইয়া দিয়াছে।


বস্তুতঃ আল্লাভীতির এমনই মাহাত্ম্য। এইজন্যই পাক-কালামে এরশাদ হইয়াছে- সাভারে অর্থাৎ, হে মানুষ! তোমরা তোমাদের পরওয়ারদেগারকে ভয় কর।


*** আল্লাহ আমাদের সকল কে হেদায়াত দান করূন। (আমিন) ***

*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।

Leave a Reply