বদর যুদ্ধের আশ্চর্য ইতিহাস | history of battle of badr | bangla hadis

বদর যুদ্ধের  আশ্চর্য  ইতিহাস | history of battle of badr 

বদরের যুদ্ধ

 islamic post | bangla hadis

বদর যুদ্ধের আশ্চর্য ইতিহাস | islamic post | bangla hadis

বদর যুদ্ধ ছিল একটি অসম লড়াই। একপক্ষে নিরস্ত্র মুসলিম বাহিনী, অন্যপক্ষে সশস্ত্র মুশরিক দল। বদর যুদ্ধের ধারাবাহিক ঘটনা তাই ইতিহাসের একটি চমকপ্রদ অধ্যায়।


উভয় বাহিনীর বদর প্রান্তরে আগমন :

যুদ্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। মুহাজির মুসলিমগণের প্রায় সকলে যুদ্ধে অংশ নিলেন। আনসার মুসলিমগণও যুদ্ধযাত্রা করলেন। যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে গুটিকতক তীরধনু, কোষবদ্ধ তরবারী, হাতে গোনা কয়েকজন অশ্বারোহী সৈনিক, বাকি সকলেই পদাতিক। অধিকাংশই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণহীন। সবমিলিয়ে ৩১৩জন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (স)-এর সঙ্গে যুদ্ধ যাত্রা করলেন।


মহানবী (স) তাঁর বাহিনী নিয়ে মদীনার কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত বদর প্রান্তরে উপনীত হলেন এবং এখানেই তাবু স্থাপন করলেন। আল-ওয়াকিদী বলেন, “হযরত (স) মুসলিম সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটি স্থান বেছে নিলেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ শুরু হলে কোনো মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্যকিরণ পড়বে না।


মুসলমানদের শিবির স্থাপন :

মহানবী (স) বদর প্রান্তরে মদীনার দিকবর্তী আরিশ পাহাড়ের পাদদেশে শিবির স্থাপন করেন। হযরত (স) পানি সংরক্ষণের জন্য মুসলিম শিবিরের নিকটে কতিপয় গর্ত খনন করেন এবং খাল খনন করে গর্তগুলোর সাথে অদূরবর্তী জলাশয়ের সংযোগ সাধন করেন। এতে জলাশয়ের সমস্ত পানি এসে গর্তগুলোতে জমা হয়। ফলে মুসলিম বাহিনীর পানীয় জল পাওয়ার বিশেষ সুবিধা হয় এবং শত্রুসৈন্যদের নিদারুণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। মহানবী (স) শিবির স্থাপনে এবং যুদ্ধের এলাকা নির্বাচনে অনন্য দূরদর্শিতা প্রদর্শন করেন।

আরো পড়ুন>> উহুদ যুদ্ধের ইতিহাস


শত্রুসৈন্যরা অদূরবর্তী উপত্যকার দক্ষিণাংশে তাদের শিবির স্থাপন করে। তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার।


হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষণ :

১৩ মার্চ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ সকালে যুদ্ধের পূর্বে হযরত মুহম্মদ (সা.) তাঁর স্বল্পসংখ্যক সৈন্যকে সারিবদ্ধভাবে ময়দানে দণ্ডায়মান করে তাদেরকে আসন্ন বিপদ মোকাবিলার জন্য কতিপয় উপদেশ প্রদান করেন।


তিনি বলেন, “তোমরা কেউ সারি ভেঙে এগিয়ে যেও না এবং আমার আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু করো না। আয়ত্ত্বসীমার বাইরে অবস্থিত শত্রুসৈন্যদের ওপর তীর নিক্ষেপ করে তীরের অনর্থক অপচয় করো না। শত্রুরা আয়ত্ত্বের ভেতর আসলেই কেবল তাদের ওপর তীর নিক্ষেপ করো।


শত্রুরা নিকটবর্তী হতে থাকলে প্রথমে হাত দ্বারা তাদের ওপর প্রস্তর নিক্ষেপ করো, তারা আরও নিকটবর্তী হলে তাদের ওপর বর্শা ও বল্লম নিক্ষেপ করো। তারা হাতাহাতি সীমার মধ্যে আসলে কেবল তখনই তাদের ওপর তরবারীর আঘাত হানিও।

আরো পড়ুন>> ইমানদার ও বেইমানের মৃত্যু প্রার্থক্য


সৈন্যদের প্রতি উপদেশ দান শেষ হওয়ার পর রাসূল (সা.) তাদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরগায় বিশাল কুরাইশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের এ যুদ্ধে জয়লাভের জন্য মু নাজাত করেন। তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান কাফিররা আমাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করুক, তাহলে আপনার ইবাদতের লোক আর থাকবে না।


দ্বন্দ্বযুদ্ধে কুরাইশ কাফেরদের পরাজয় :

আরবের তৎকালীন পরিচিত রেওয়াজ অনুসারে যুদ্ধের সূচনায় কুরাইশ গোত্রের তিন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা শাইবা, উতবা ও ওয়ালিদ বিন উতবা ময়দানে উপস্থিত হয়ে মুসলিম সেনা নায়কদের সম্মুখ যুদ্ধের আহ্বান জানালেন। এ আহ্বান গ্রহণ করে মুসলিম বাহিনীর হযরত উবায়দা (রা), হযরত হামজা (রা) ও হযরত আলী (রা) তাদের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। তারা প্রত্যেকে কুরাইশ যোদ্ধাদের পরাজিত ও নিহত করেন।


পারষ্পরিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ :

মল্লযুদ্ধের ফলাফল মুমিনদের দারুনভাবে উজ্জীবিত করে। ওদিকে মুশরিকরা মল্লযুদ্ধে অংশগ্রহণের সাহস হারিয়ে ফেলে। মুসলমানদের হাতে নিজেদের দুর্ধর্ষ যোদ্ধা নেতৃবৃন্দকে এভাবে ধরাশায়ী হতে দেখে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন>> মুছা ও খিজির আ. এর ঘটনা


তখন মুশরিক নেতা আবু জাহল সম্মিলিত সর্বাত্মক হামলার আদেশ দেয়। মুশরিক বাহিনী সম্মিলিতভাবে মুসলিম বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে যুদ্ধক্ষেত্রের সকল কিছু মুসলিমদের অনুকূলে চলে আসে।


মুসলিমগণ যে ভূমিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তা ছিল বালুকাময়। মুশরিকদের এলাকা ছিল শক্ত এঁটেল মাটি। যুদ্ধকালীন সময়ে বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিত বদলে যায়। বালুকাময় ভূমি শক্ত হয়ে যায় আর এঁটেল মাটির এলাকা হয়ে পড়ে পিচ্ছিল। যা যুদ্ধে একান্তভাবে মুশরিকদের বিপক্ষে চলে যায়।


এ ছাড়াও যুদ্ধকালীন সময়ে আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (স) এক মুঠো ধূলি নিয়ে মুশরিকদের দিকে নিক্ষেপ করেন। এ ধূলি প্রতিজন মুশরিক যোদ্ধার চোখে পৌঁছে যায় এবং যুদ্ধে মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।


কেবল তাই নয়, আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতাদের একটি দলও মুমিনদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কুরআনের বিভিন্ন ঘোষণায় ফেরেশতাদের দলটির সংখ্যা এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন>> কীভাবে সৃষ্টি হল জমজম কূপ ?


প্রাসঙ্গিক এত সুবিধা এবং মল্লযুদ্ধের প্রাথমিক বিজয় মুমিনদেরকে দারুন উদ্বুদ্ধ করে। তাঁরা শহীদী জোশে মুশরিকদের বিরুদ্ধে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ শুরু করেন।


মুশরিকদের ক্ষতি:

ভীষণ যুদ্ধে মুশরিকদের ভয়ানক ক্ষতি হয়। তাদের নেতা আবূ জাহলসহ ৭০ জন বীরযোদ্ধা নিহত হয়। বন্দি হয় আরো ৭০ জন। মুসলিমদের পক্ষে ১৪ জন মুজাহিদ শহীদ হন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মুশরিকরা একজন মুসলিম যোদ্ধাকেও বন্দি করতে পারেনি। শেষপর্যন্ত বিপুল জনবল ও অস্ত্রবলের ক্ষতি স্বীকার করে নিয়ে মুশরিকরা মক্কায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আর প্রায় নিরস্ত্র মুসলিম বাহিনী লাভ করে অভূতপূর্ব ও অভাবিত মহান বিজয়।

***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***

Leave a Reply