বনি ইসরাইলের অবাক করা আচরন | boni israiler abak kora acharon | al quran bangla tafsir

বনি ইসরাইলের অবাক করা আচরন | boni israiler abak kora acharon

বনি ইসরাইল

al quran bangla tafsir | islamic post-

আল্লাহ তায়ালার বাণী:-

মহা প্রজ্ঞামায় আল্লাহ-তাবারাক ও তা’আলার সহিত অঙ্গীকার করিয়া বনী ইসরাঈলরা তাহা ভঙ্গ করিয়াছিল। যেমন ইরশাদ হইয়াছে—

لَقَدْ اَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَاعِيلَ وَاَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ رُسُلًا كُلَّمَا جَاءَهُمْ رَسُولُ بِمَا لَا تَهْوَى أَنْفُسُهُمْ فَرِيقًا كَذَّبُوا وَفَرِيقًا يَقْتُلُونَ – وَحَسِبُوا الَّا تَكُونَ فِتْنَةٌ فَعَمُوا وَصَمُّوا ثُمَّ تَابَ اللهُ عَلَيْهِمْ ثُمَّ عَمُوا وَصَمُّوا كَثِيرُمِنْهُمْ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ.

অর্থ : আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অঙ্গীকার নিয়াছিলাম এবং তাহাদের কাছে অনেক পয়গম্বর পাঠাইয়া ছিলাম। যখনই তাহাদের কোন কোন পয়গম্বর এই রকম নির্দেশ নিয়া আসিত যাহা তাহাদের মনে চাহিত না, তখন তাহাদের অনেকের প্রতি তাহারা মিথ্যা আরোপ করিত এবং অনেককে হত্যা করিয়া ফেলিত।


তাহারা ধারণা করিয়াছে যে, কোন অনিষ্ট হইবেনা। ফলে তাহারা আরও অন্ধ ও বধির হইয়া গেল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের তওবা কবুল করিলেন। এরপরও তাহাদের অধিকাংশই অন্ধ ও বধির হইয়া রহিল। আল্লাহ্ তা’আলা দেখেন আহারা যাহা কিছু করে।(সূরা মায়েদা : ৭০-৭১)


বনি ইসরাইলের অবাক করা আচরন | al quran bangla tafsir | islamic post-

নবীগনের সাথে বনি ইসরাইলের অবাক করা আচরন:-

আমি বনী ইসরাঈলের কাছ হইতে প্রথমে তাওরাতের মাধ্যমে সকল পয়গম্বরকে সত্য বলিয়া জানিবার এবং তাহাদের আনুগত্যের অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম এবং এই অঙ্গীকার স্মরণ করাইয়া দেওয়ার জন্য তাহাদের কাছে অনেক পয়গম্বর প্রেরণ করিয়াছিলাম।


কিন্তু তাহাদের অবস্থা এই ছিল যে, যখনই তাহাদের নিকটে কোন পয়গম্বর এমন আদেশ নিয়া আগমন করিতেন, যাহা তাহাদের। মনঃপুত নহে। তখনই তাহারা তাহাদের বিরোধিতা করিত। মোটকথা, তাহাদের এক দলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিত এবং অন্য দলকে নির্বিবাদে হত্যাই (শহীদ) করিয়া ফেলিত।


আর প্রত্যেক বার প্রত্যেক দুস্কৃত কর্মের পর যখন কিছুদিন অবকাশ দেওয়া হয়, তখন তাহারা এই ধারণাই করিয়া থাকে যে, (ইহাতে আমাদের) কোন শাস্তিই হইবে না এই ধারণার কারণে তাহারা আরও অন্ধ ও বধির (এর মত) হইয়া গেল। ফলে পয়গম্বরগণের সত্যতার প্রমাণাদি দেখিল না এবং তাহাদের কথাবার্তা ও শুনিল না।

আরো পড়ুন>> নবীজীর হাত থেকে পানির নহর


অতঃপর (এইভাবে) কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহ তা’আলা তাহাদের প্রতি অনুকম্পাসহ মনোনিবেশ করিলেন- অর্থাৎ অন্য একজন পয়গম্বর পাঠাইলেন যাহাতে তাহারা এখন ও সঠিক পথে ফিরিয়া আসার সুযোগ পায়,কিন্তু ইহার পরেও সবাই না হইলেও তাহাদের অধিকাংশই পূর্ববৎ অন্ধ ও বধির হইয়া রহিল।


বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা’ আলাতাহাদের এইসব কাজকর্ম প্রত্যক্ষকারী। অর্থাৎ তাহাদের ধারণা ভ্রান্ত ছিল। সময়ে সময়ে তাহাদের শক্তি ও দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু তাহাদের রীতিনীতি তাহাই ছিল। এখন আপনার সহিত ও সেই মিথ্যারোপ ও বিরোধিতার ভূমিকাই পালন করিয়াছে।(তফসীরে মা’রেফুল কোরআন, সূরা মায়েদাহ : ৭০-৭১)


অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের নিকট তাহাদের রাসূল যখন কোননির্দেশ নিয়া আসিতেন যাহা তাহাদের রুচিবিরুদ্ধ হইত,তখন ওয়াদা ভঙ্গকরিয়া তাহারা আল্লাহ্ তা’আলার সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করিতে শুরু করিত এবং নবীগণের মধ্যে কাহারো প্রতি মিথ্যারোপ করিতএবং কাহাকেও হত্যা তথা শহীদ করিত।

আরো পড়ুন>> উটের সাথে রাসূল সা. এর কথা বলা


ইহাই ছিল আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি বিশ্বাস ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে তাহাদের অবস্থা। এখন পরকালের প্রতি বিশ্বানের অবস্থা ইহা দ্বারা অনুমান করা যায় যে, এতসব নির্মম অত্যাচার ও বিদ্রোহী মূলক অপরাধে লিপ্ত হইয়াও তাহার সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া থাকিত। তাহারা ভাবিত, এই সমস্ত কুকর্মের কোন সাজাই ভোগ করিতে হইবে না এবং নির্যাতন ও বিদ্রোহের কুপারিণাম কখনো সামনে আসিবে না।


এ হেন ধারণার বশবর্তী হইয়া তাহারা খোদায়ী নিদর্শন ও খোদায়ী হুঁশিয়ারী হইতে সম্পূর্ণ অন্ধ ও বধির হইয়া যায় এবং গর্হিত কাজ তাহাই করিতে থাকে। এমন কি কতক পয়গম্বরকে তাহারা হত্যা করে এবং কতককে বন্ধীকরে।


অবশেষে আল্লাহ তা’আলা বাদশাহ বখতে নছরকে তাহাদের উপর চাপাইয়া দেন। অতঃপর দীর্ঘদিন অতীত হইলে জনৈক পারস্য সম্রাট তাহাদেরকে বখতে নছরের লাঞ্ছনা ও অবমাননার কবল হইতে উদ্ধার করিয়া বাবেল হইতে বায়তুল মোকাদ্দাসে ফিরাইয়া আনেন।


তখন তাহারা তওবা করিয়া অবস্থা সংশোধনে মনোনিবেশ করে। আল্লাহ তা’আলা তাহাদের সেই তওবা কবুল করেন! কিন্তু কিছুদিন যাইতে না যাইতেই তাহারা পুনরায় বিভিন্ন কুকর্মে মাতিয়া উঠে এবং অন্ধ ও বধির হইতে হযরত যাকারিয়া ও হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) কে কতল (হত্যা) করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে।


অতঃপর তাহারা ঈসা (আঃ) কেওহত্যা করিতে উদ্যত হয়। (ফাওয়ায়েদে উসমানী) মরিয়ম (আঃ)-এর পুত্র মসীহ্ (আঃ)-এর উপাস্যতা খণ্ডন।


al quran bangla tafsir | islamic post-

আল কোরআনুল মাজীদে ইরশাদ হইয়াছে—

অর্থাৎ অন্যান্য পয়গম্বর যেমন পৃথিবীতে আগমন করিবার পর কিছু দিন অবস্থান করিয়া এইস্থান হইতে লোকান্তরিত হইয়া গিয়াছেন এবং স্থায়িত্ব লাভ করিতে পারেন নাই যাহা উপাস্য হওয়ার লক্ষণ, এমনিভাবে হযরত মসীহ্ (আলাইহিস্ সালাম) যিনি তাহাদের মতই একজন মানুষ স্থায়িত্ব ও অমরত্ব লাভ করিতে পারেন নাই। কাজেই তিনি উপাস্য হইতে পারেন না।

আরো পড়ুন>> মাছ আগুনে না পোড়ার আশ্চর্য ঘটনা


একটু চিন্তা করিলে বুঝা যায় যে, যেই ব্যক্তি পানাহারের মুখাপেক্ষীসেই ব্যক্তি পৃথিবীর সকল কিছুরই মুখাপেক্ষী। মাটি,বাতাস, পানি, সূর্য এবং জীবজন্তু হইতে সে পরান্মুখ হইতে পারে না। খাদ্য শস্য উদরে পৌছা এবং হজম হওয়া পর্যন্ত চিন্তা করুন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কতকিছু প্রয়োজন। অতঃপর খাওয়ার যেই প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে, তাহা কতদূর পর্যন্ত পৌছে। পরমুখাপেক্ষীতার এই দীর্ঘ পরস্পরার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া আমরা মসীহ ও মরিয়ম (আঃ)-এর উপাস্যতা খণ্ডনকল্পে যুক্তির আকারে এইরূপ বলিতে পারি-


হযরত মসীহ্ ও মরিয়ম (আঃ) পানাহারের বস্তু প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র হইতে মুক্ত ছিলেন না। এই বিষয়টি চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা ও লোক পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত। যে ব্যক্তি পানাহার হইতে মুক্ত নহে, সে ব্যক্তি পৃথিবীর কোন বস্তু হইতেই নিস্কৃতি লাভ করিতে পারে না। এখন আপনিই বলুন-যে সত্তা মানব-মণ্ডলীর মত স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে জগত হইতে পরাম্মুখ নয় সে সত্তা কিভাবে আল্লাহ হইতে পারে?


এই শক্তি শালী ও সুস্পস্ট যুক্তিটি জ্ঞানী ও মুর্খ সবাই সমভাবে বুঝিতে পারে। অর্থাৎ পানাহার করা উপাস্য হওয়ার পরিপন্থী- যদিও পানাহার না করা উপাস্য হওয়ার প্রমাণ নয়। নতুবা সকল ফেরেশতা ‘আল্লাহ’ হইয়া যাইবে। (ফাওয়ায়েদে উসমানী)


***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***

Leave a Reply