বৃদ্ধার মুখে রাসূলের মুজিযার বর্ণনা | rasuler mujija | islamic post
বৃদ্ধার মুখে রাসূলের মুজিযার বর্ণনা
মুসলমানরা গোটা এলাকায় আক্রমণ চালিয়েছে। একটি গ্রামকে বাদ দিয়ে তার চতুর্দিকে প্রতিটি লোকালয়কে কেন্দ্র করে তাদের সাঁড়াশি হামলা অব্যাহত রেখেছে। আশ্চর্যজনকভাবে বাদ পড়া এই গ্রামটির লোকজনের মনে হাজারো প্রশ্ন।
আমরা তো মুসলমান হইনি, মুসলমানদের সাথে তো আমাদের কোনো চুক্তিও হয়নি। আমরা তো আত্মসমর্পণ করিনি বা মুসলমানদেরকে কর দিতেও রাজি হইনি। তাদের সাথে আমাদের সন্ধিচুক্তিও নেই। তারপরও তাদের হামলা থেকে বাদ পড়ার কারণ কি? এর পিছনে কি আরও বড় কোনো দূরভিসন্ধি কাজ করছে? কি সেই দুরভিসন্ধি! নাকি এটা কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস? প্রচণ্ড ঝড়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ার আগে যেমন সব স্তব্ধ হয়ে যায় তেমনি? ইত্যাকার নানান প্রশ্ন গ্রামবাসীর মনে সঙ্গত কারণেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ভয় ও শঙ্কা দানা বাঁধছে। তারা মনে মনে কোনো অশুভ পরিণতির অপেক্ষা করতে লাগল।
সেই গ্রামে থাকতেন অশীতিপর এক বৃদ্ধা। গ্রামের সকলেই তাকে এক ডাকে চিনে। মুরুব্বি হিসাবে গোটা এলাকার মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তিনি সব সময় পেয়ে থাকেন। গাছের প্রথম ফল, ক্ষেতের প্রথম ফসল, ভালমন্দ ঘরে যাই তৈরি হয় নিজেরা খাওয়ার পূর্বে সবাই এই মহিলার ঘরে পাঠায়।
সেই মহিলাই গ্রামের সবাইকে ডাকলেন। সবাই আসার পর তিনি বললেন, আমার প্রিয় গ্রামবাসী! শোনো, আমার মনে হয় আমার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখিয়েই মুসলমানরা এই গ্রামে হামলা করছে না। তারা ইচ্ছা করলে যখন তখন হামলা করে তোমাদেরকে তছনছ করে দিতে পারে।
আরো পড়ুন>> একবার পানে সারা জীবনের পিপাসা নিবারন
আর যুদ্ধের রীতিনীতির আলোকে তা করা তাদের জন্য আইনবিরুদ্ধও হবে না। কারণ, তোমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র না চালানোর বা যুদ্ধ বিরতির কোনো চুক্তি বা সমঝোতা হয়নি। হামলা করাই স্বাভাবিক। তারপরও তা করছে না। এটা আমাদের উপর মুসলমানদের বদান্যতা, তাদের মহানুভবতার প্রকাশ।
আমার পরামর্শ যদি তোমরা মান, আমার কথা যদি তোমাদের ভাল লাগে তাহলে তোমাদেরকে আমি একটি প্রস্তাব করতে চাই। আর তার জন্যই আজ আমি তোমাদেরকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছি।
আমার প্রস্তাব হলো- তোমরা মুসলমান হয়ে তাদের এই বদান্যতার প্রতিদান দাও। সারা বিশ্বই জানে তোমরা আরব মায়ের সন্তান। আর আরবরা কোনো দিন প্রতিদান দিতে কুণ্ঠিত হয় না।
বৃদ্ধার কথায় সকলেই বিস্মিত ও অবাক হচ্ছিল। একেক জনের মনের ভিতর একেক ধরনের কৌতুহলের আনাগোনা চলছিল বিরামহীন। তা নিবৃত্ত করতেই বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের বান ধেয়ে আসতে লাগল তার দিকে।
আরো পড়ুন>> চারটি বিষয় মানলে জান্নাত পাওয়া যাবে
তারা জিজ্ঞেস করল, আপনি কি তাদের চিনেন? আপনাকে তারা চিনে? মুসলমানদের সাথে কি আপনার সাক্ষাৎ হয়েছে? আপনি কি তাদের নিকট গিয়েছিলেন? নাকি তাদের কেউ আপনার নিকট এসেছিল? মুসলমানদের সাথে এমন কি ঘটেছে যার ফলে আপনি আজ এমন কথা বলছেন?
বৃদ্ধা বললেন, হ্যাঁ তাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটেছিল। সাক্ষাতে এমন ঘটনা ঘটেছে যার কারণে আমি স্থির সিদ্ধান্তে পৌছতে বাধ্য হয়েছি যে, মুহাম্মদ হয়তো পৃথিবীর সেরা জাদুকর না হয় সে প্রকৃতই সত্য নবী সকলেই সমস্বরে বলে উঠল, আমরা জানতে চাই কী সেই ঘটনা? তখন বৃদ্ধা যা বর্ণনা করলেন তার মর্ম ছিল এমন-
বৃদ্ধার মুখে রাসূলের মুজিযার বর্ণনা | islamic post | bangla hadis–
একবার আখেরী নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরাট এক কাফেলা নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তার সাথে অনেক লোক। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি সকলের চেহারায় পরিস্ফুট। ক্ষুৎ-পিপাসায় সবাই কাতর। খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিরতিহীন ধুধু মরুভূমির সফর যে কী বিভীষিকাময় তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে।
আরো পড়ুন>> সরাসরি আল্লাহর কুদরত প্রকাশ
মরীচিকার মায়া হাতছানিতে মন প্রলুব্ধ হয়ে দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করা যায়। পিপাসা ও ক্লান্তি তাতে আরও বেড়ে যায়। কিন্তু পানি বা জীবনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি তদুপরি অনাহার ও ক্ষুধার তাড়নায় সকলেরই দুঃসহ অবস্থা। এমনি সময় হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলো, কাফেলার কারো কাছেই পানি নেই। যতটুকু ছিল তাও শেষ হয়ে গিয়েছে। সকলেই পিপাসায় কাতর। এখনই পানি না পেলে জীবন বাঁচানো কঠিন।
হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হযরত আলী (রা.) এর সাথে একজন লোক দিয়ে বললেন, তোমরা দু’জন যাও। তালাশ করে দেখো, আশপাশে কোথাও পানির সন্ধান পাও কিনা! কথামতো তারা দ’জন বেরিয়ে পড়লেন।
পানির সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে এই বৃদ্ধা মহিলার সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়ে গেল। বৃদ্ধা তখন উটের সাহায্যে মশক ভরে পানি নিয়ে ফিরছিলেন। তারা প্রথমে মহিলার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। তার সাথে কথাবার্তা বললেন। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন। এখান থেকে পানির ঝরণা কতটুকু দূরে?
বৃদ্ধা তখন বললেন, বাবারা! তোমরা কোত্থেকে এসছ? পানি তো বহু দূরে, এখান থেকে উটচলা পথে গোটা দুই দিনের দূরত্ব। পানি আনতেই আমি গিয়েছিলাম। যেতে আসতে আমারও দু দিনের বেশি সময় লেগেছে। তোমাদেরকে পিপাসায় খুব কাতর মনে হচ্ছে। কিছু করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু আমারও যে কোনো উপায় নেই। গোত্রের লোকেরা পানির প্রত্যাশায় আমার পথপানে চেয়ে আছে। এই পানি ছাড়া যে আমাদেরও জীবন চলে না।
আরো পড়ুন>> এখনই জেনে নিন কিয়ামত কথন হবে ?
পানি না পেলেও বৃদ্ধার আন্তরিক সহানুভূতি পেয়ে তারা মুগ্ধ হলেন। গোটা পরিস্থিতি বর্ণনা করে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে উটসহ হুজুরের সামনে নিয়ে গেলেন। হুজুরের সামনে বৃদ্ধার সাথে সাক্ষাৎ ও তার হৃদ্যতাপূর্ণ সহানুভূতির অদ্যোপান্ত তুলে ধরলেন।
সব শুনে হুজুর একটি পাত্র আনতে বললেন। পাত্র আনা হলে ‘মশক থেকে অল্প একটু পানি সেই পাত্রে নিয়ে কুলি করলেন এবং পাত্রের পানিটুকু মহিলার মশকে ঢেলে দিয়ে মশকের উপরের মুখ বন্ধ করে দিয়ে নিচের মুখ খুলে দিলেন। এরপর কাফেলার সমস্ত লোককে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা নিজ নিজ প্রয়োজন মিটিয়ে না’।
একে একে সকলেই মনভরে তৃপ্তি মিটিয়ে পান করল। পরিপূর্ণ পরিতৃপ্ত হলো। কেউ তো বরতন ভরে রাখল। সকলের ভিতর আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এলো। বৃদ্ধা কাছে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা অবলোকন করছিলেন আর কষ্টার্জিত পানির দুরবস্থার কথা ভেবে শঙ্কিত হচ্ছিলেন।
তার এত কষ্টের পানি এরা লুট করে নিচ্ছে তারই চোখের সামনে। তিনি অসহায়ের মতো দেখছেন। কিছুই করতে পারছেন না আবার ঘটনার আকস্মিকতায় মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না। কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। তাই চুপ থাকাই সমীচীন মনে করলেন।
আরো পড়ুন>> দাজ্জালের পরিচয় জেনে আতংকিত হবেন
সামনে দেখতে দেখতে বৃদ্ধার আতংক বিস্ময়ে রূপ নিল। তার চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেল। এক অপার্থিব, অলৌকিক দৃশ্যের নীরব দর্শক হয়ে রইলেন। চোখের এই বিপুল সংখ্যক লোক একে একে যার যার প্রয়োজন মিটিয়ে নিল। যে যেভাবে সম্ভব সঞ্চয় করল। কিন্তু কী অবাক কাণ্ড! মশকের পানি একটুও কমেনি, বরং তা যেন পূর্বের তুলনায় আরো বেশি উপচে পড়ছে। মশক এখনো পানিতে টইটম্বুর।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথিদের লক্ষ্য করে বললেন, এই মহিলার জন্য তোমরা কিছু হাদিয়ার ব্যবস্থা করে দাও। নির্দেশমত সাহাবায়ে কেরাম খেজুর, আটা, সাতু, ইত্যাদি অনেক কিছুই সংগ্রহ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে স্তুপাকারে পেশ করলেন।
সাহাবায়ে কেরামের প্রাণ-মন উজাড় করা স্বেচ্ছা হাদিয়া দুনিয়ার বড় বড় সম্রাট, রাজা বাদশাহদের দরবারে পাঠানো বিপুল পরিমাণ উপহার উপঢৌকন ও রত্নখচিত ধনভাণ্ডারকেও তুচ্ছ করে দেয়। কারণ সেখানে থাকে স্বার্থ চিন্তা আর পার্থিব প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির জটিল সব সমীকরণ। আর এখানে তো শুধুই পরিতৃপ্ত আত্মার প্রাণোচ্ছলতার প্রকাশ।
হাদিয়াগুলো জমা করে বৃদ্ধার হাতে উঠিয়ে দিয়ে প্রিয় নবী সা. বললেন, আল্লাহর কুদরত দেখলেন! আমরা আপনার পানিও খরচ করিনি আবার সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে পরিতৃপ্ত হয়েছি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য কত সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বান্দার ওপর কত দয়ালু।
গ্রামবাসীর সামনে পুরা ঘটনা বর্ণনা করে মহিলা বললেন, এই মুহাম্মদ কি সাধারণ কোনো মানুষ হতে পারেন? আমি তো সেদিন থেকেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে তিনি আল্লাহর নবী। তোমাদের জন্য মঙ্গল হবে, তাঁর কথা বিশ্বাস করে, তাকে মেনে নিয়ে তোমরা মুসলমান হয়ে যাও।
*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।