যুবতীর চুলের খোঁপার রহস্য | jubotir chuler khopar rohosso
যুবতীর চুলের খোঁপার রহস্য | islamic history and culture | islamic post –
বসরা নিবাসী কোন এক কাজী সাহেবের কন্যা কোনও ওয়াজে সদকা-খয়রাতের ফযীলতের কথা শুনিয়া আসিয়াছিলেন। একদা এক ভিক্ষুক তাঁহাদের বাড়ির দরজায় আসিয়া সওয়াল করিল। কাজীর বেটি বলিলেন, তোমাকে দান করার মত নগদ কিছুই আপাততঃ আমার নিকট নাই। তবে আম্মা আমার মাথার খোঁপার সঙ্গে দুইটি মুক্তা পড়াইয়া দিয়াছেন, তুমি চট্ করিয়া তাহাই খুলিয়া নিয়া যাও।
কাজীর বেটির চুলের খোঁপা হইতে এইভাবে মুক্তা খুলিয়া নিতে ভিক্ষুকের সংকোচবোধ হইল। ভিক্ষুকের দ্বিধাগ্রস্ততা দেখিয়া কন্যা পিতার ভয়ে তাঁহার অলক্ষে নিমিষের মধ্যে নিজের পুরা খোঁপাটি কাটিয়া ভিক্ষুককে দিয়া দিলেন।
কোন কুট্না লোক কন্যার অলক্ষ্যে এই ঘটনা দেখিয়া ফেলিল এবং কাজী সাহেবের নিকট যাইয়া বলিল- হুযূর, আপনার বেটির একটু খবর নিন; তিনি গোপনে গোপনে • সব কাণ্ডই না করিতেছেন; এক ভিক্ষুকের সাথে তাঁহার খুব ভাব জমিয়া উঠিয়াছে। এই তো, কালই ভিক্ষুকটি তাঁহার চুলের খোঁপা কাটিয়া লইয়া গিয়াছে। হুযূর, ইহা তো আপনার বেটির খোঁপা নয়, বরং আপনারই নাক কাটিয়া নেওয়া।
এই সংবাদ শুনিয়া কাজী সাহেবের ভীষণ গোস্বা হইল। তৎক্ষণাৎ কণ্যাকে ডাকাইয়া বজ্রকণ্ঠে সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন। কন্যা বলিলেন- আল্লাহ্র কাছে পানাহ্ চাই! আপনি এসব কি ভাবিতেছেন?
আরো পড়ুন>> ভিক্ষুকের দোয়ার পাওয়ার জানলে অবাক হবেন
কাজী সাহেব ঝাঁঝালো সুরে বলিলেন- সত্যবাদিনীই বটে; তবে দেখি তোমার খোঁপাটি! কন্যা দারুণ ফাঁপড়ে পড়িলেন, বলিলেন- খোঁপা দেখাইতেছি, তবে তার আগে দুই রাকআত নামায পড়ার অনুমতি আমাকে দিন। পিতা বলিলেন- বেশ, পড়িয়া লও।
মহান আল্লাহ তায়ালার গায়বী সাহায্য।
কন্যা নামাযে লিপ্ত হইলেন, সিজদায় যাইয়া নিতান্ত কাকতি-মিনতি সহকারে করুণভাবে ফরিয়াদ করিতে লাগিলেন- ইয়া আল্লাহ! এই বিপদকালে একমাত্র তোমার উপরই আমার ভরসা। তোমার নামেই আমি ভিক্ষুককে আমার খোঁপা কাটিয়া দিয়াছি। তুমি দয়া করিয়া আমাকে পিতার সামনে শরমিন্দা এবং বে-ইজ্জত করিও না।
বান্দার কাকতি-মিনতি ও দীনতা-হীনতা প্রকাশ আল্লাহ্র নিকট খুবই পছন্দনীয়। ইহা নিয়মের কথাই যে, কাহারও নিজের অধিকারে কোন জিনিস না থাকিলে তাহার স্বভাবতই ঐ জিনিসের প্রতি একটা চাহিদা থাকে এবং সে ঐ জিনিসকে পছন্দনীয় মনে করে, উহা যতই মামুলী জিনিস হউক না কেন।
আরো পড়ুন>> আল্লাহর সাথে ব্যবসা
তদ্রূপ আল্লাহ তা’আলার দরবারে সবকিছুই আছে, নাই কেবল আজেযী ইনুকেসারী বা কাকতি-মিনতি। তিনি কাহার কাছে মিনতি করিবেন? কাহার দয়ার তিনি মোতাজ? এজন্যই তিনি বান্দার আজেযীকে খুব পছন্দ করেন।
একে দশ গুন:
যাই হউক, কাজী সাহেবের কণ্যা আল্লাহ্ দরবারে সিজদায় পড়িয়া কাঁদিয়া জার-জার হইতেছেন, অন্যদিকে আল্লাহ্ রহমতের দরিয়া উথলিয়া উঠিল। মুহূর্তের মধ্যে দশগোছা বেনী এবং প্রতি বেনীতে একটি করিয়া মূল্যবান মতিযুক্ত এক খোঁপা কন্যার মাথায় আসিয়া জড়াইয়া গেল। তখন কন্যা নির্বিকারচিত্তে পিতার সামনে আসিয়া দাঁড়াইলেন।
পিতা কন্যার খোঁপা দেখিয়া তাজ্জব হইলেন, আর বলিলেন, সত্যই, যে একটি নেকী করে আল্লাহ্ তাহাকে দশগুণ বদলা দেন, অতঃপর কাজী সাহেব সেই কুট্না লোকটিকে শাস্তি দিতে চাহিলেন, কিন্তু কন্যার সুপারিশে মাফ করিয়া দেন।
আরো পড়ুন>> কোনআনে বর্ণিত ঈসা নবীর ইতিহাস
দেখিলেন তো, আল্লাহ্র নামে দান-খয়রাত করার মাহাত্ম্য কতখানি! এইজন্যই আল্লাহ তা’আলা উক্ত উপমা দিয়াছেন।
*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।