রাসূলের প্রতি সাহাবীদের অনুসরণ | rasuler proti sahabider anusoron | islamic post

রাসূলের প্রতি সাহাবীদের অনুসরণ | rasuler proti sahabider anusoron

বাংলা হাদিস

islamic post | bangla hadis


সাহাবীরা রাসূলের কতটা অনুসরণ করতেন? | sahabira rasuler kotota manno korten? | islamic post


সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ও আদর্শের প্রকৃত ধারক-বাহক ছিলেন। তাঁদের জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তারা এক-একটি সুন্নাতের আশেক ছিলেন।


সেই ইশক- মহব্বতের রং মেখে তাঁরা নবীজির প্রতিটি কথা ও কর্মকে সংরক্ষণ করেছেন। তারা প্রকৃত অর্থেই সুন্নাতের অনুসারী ছিলেন। এই অনুসরণ এতটা পরিপূর্ণ ও অর্থবহ ছিল যে, বিবেক হতবুদ্ধি হয়ে যায়। কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি আপনিও উপলব্ধি করতে পারবেন।


প্রথম ঘটনা: হাদীছে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিসে বসা ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) তাঁকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে বসে আছেন। বাইরে থেকে একলোক এসে দেখল, পুরো মজলিসের সবাইকে একই রকম দেখা যাচ্ছে। পোশাক এক, কথা-বার্তা, চলাফেরা সবই এক। সবার চেহারায় এক অবর্ণনীয় নূরের জ্যোতি ঝলমল করছে। তাদের মাঝে বড়-ছোট, রাজা-প্রজার পার্থক্য বোঝার কোনো উপায় নেই। অবশেষে বাধ্য হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করতে হলো, ‘আপনাদের মাঝে আল্লাহর নবী কোনজন?”


চিন্তার বিষয় হলো, নবীজির অনুকরণ কত মাত্রায় পরিপূর্ণ ছিল, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কী পরিমাণ অনুকরণ করতেন যে, একজন বাইরের লোক পার্থক্য করতে পারেননি, কে গোলাম আর কে মনিব?


এটাই ছিল প্রকৃত অনুসরণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁরা প্রকৃত অর্থেই নবীজির অনুসারী ছিলেন। নিজের কথায়-কাজে, চলনে-বলনে, ওঠা- বসায় সর্বক্ষেত্রে তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতেন।

আরো পড়ুন>> উহুদ যুদ্ধের ইতিহাস


দ্বিতীয় ঘটনা: সাহাবায়ে কিরামের ইত্তিবায়ে সুন্নাত তথা সুন্নাতের অনুসরণ এতই নিখুঁত ছিল যে, একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) হজ্বের সফরে যাচ্ছিলেন। পথে একস্থানে তিনি সাওয়ারী থামিয়ে নেমে পড়লেন। নিকটবর্তী একটা জায়গায় গিয়ে এমনভাবে বসলেন, যেন প্রস্রাব করছেন। কিন্তু তিনি প্রস্রাব করলেন না।


কিছুক্ষণ এভাবে থেকে ফিরে এসে সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন। সফরসঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করল, হে সাহাবীয়ে রাসূল! আপনি সেখানে গিয়ে কী করেছেন ? প্রস্রাব করেছেন বলে তো মনে হয়নি?

আরো পড়ুন>> এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন


উত্তরে হযরত ইবনে ওমর (রাযি.) বললেন, একবার আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফর সঙ্গী ছিলাম। তিনি এখানেই প্রাকৃতিক কাজ সেরে এগিয়ে গিয়েছিলেন। আজ সেই স্থান চোখে পড়তেই আমার পা আটকে গেল। আমার প্রিয় রাসূল এখানে একটি আমল করেছিলেন। যদিও আমার প্রয়োজন নেই; কিন্তু সাধ্যমতো অনুকরণ না করে মনে প্রশান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই সেখানে ছুটে গিয়ে যেভাবে নবীজি বসেছিলেন, সেভাবে কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে এসেছি।


আমার অন্তরে এখন প্রশান্তি চলে এসেছে। আমার প্রিয় রাসূলের একটি সুন্নাত আদায় করার সৌভাগ্য আমার হয়ে গেছে । আলহামদুলিল্লাহ!

আরো পড়ুন>> সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম


তৃতীয় ঘটনা: এক সাহাবী ছিলেন হাবশী – নিগ্রো ও কালো। শরীরের আকার-গঠন ছিল অদ্ভুত। মাথার চুলগুলো ছিল ছোট ও কোঁকড়ানো। এ জাতীয় চুলে সিঁথি কাটা যায় না। আমার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথায় বাবরী চুল ছিল এবং তিনি মাথার মাঝখানে সিঁথিও কাটতেন।


এই হাবশী সাহাবী নবীজির মাথার চুল দেখতেন আর আফসোস করতেন, হায়! আমার মাথায়ও যদি এভাবে সিঁথি কাটা যেত, তবেই নবীজির চুলের সঙ্গে আমার চুলের সাদৃশ্য হয়ে যেত! এর জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দু’আও করতেন।


একদিন এ নিয়ে তাঁর অন্তর আবেগে এতটাই উদ্বেলিত হয়ে উঠল যে, গোসল শেষ করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি দিয়ে অনেক্ষণ সিঁথি কাটার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাতে কিছুই হলো না।


অবশেষে একটা লোহার টুকরা নিয়ে আগুনে পুড়লেন। লোহা গরম হয়ে যখন টকটক করছিল, তখন উঠিয়ে সেটি মাথার ঠিক মাঝখানে চেপে ধরলেন। সঙ্গে-সঙ্গে চুলও জ্বলে গেল, মাথার চামড়াও পুড়ে গেল।


চামড়া পুড়ে যাওয়ার কারণে মাথার মাঝখানে একটা সাদা দাগ পড়ে গেল। সাথী সাহাবীরা বললেন, তোমার এত কষ্ট করার কী দরকার ছিল?


তিনি বললেন, চামড়া জ্বলার কষ্ট তো একদিন দূর হয়ে যাবে; কিন্তু পরম তৃপ্তির বিষয় হলো, আজ থেকে আমার মাথা আমার প্রিয় রাসূলের মাথার সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! জান কুরবান হোক এমন নবীপ্রেমের জন্য।

আরো পড়ুন>> তাওবা করার উপকারিতা


চতুর্থ ঘটনা: হাদীছের কিতাবে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা । একবার হযরত হুযাইফাতুল ইয়ামান (রাযি.) পারস্য গিয়েছিলেন। এক বন্ধু তাকে খানা খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। সেখানে আরও অনেক বিধর্মী লোক আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন।


খেতে বসে হযরত হুযাইফাতুল ইয়ামান (রাযি.) এর হাত থেকে একটি লুকমা মাটিতে পড়ে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি তা উঠিয়ে খেয়ে ফেললেন। কেউ একজন বলল, আরে এ কী করছেন? এখানকার অনেক আমীর-ওমারা এভাবে পড়ে যাওয়া খানা উঠিয়ে খাওয়া অপছন্দ করেন। আপনি কাজটি না করলেও পারতেন।


উত্তরে হযরত হুযাইফাতুল ইয়ামান (রাযি.) আবেগদীপ্ত কণ্ঠে বললেন—

تَرُكُ سُنَّةَ حَبِيبِي لِهَؤُلَاءِ الْحَمَقَاءِ .

‘এই নির্বোধদের জন্য আমি আমার প্রিয় রাসূলের সুন্নাত ছেড়ে দেব নাকি?’


চিন্তা করে দেখুন, সাহাবায়ে কেরাম এক-একটি সুন্নাতের ওপর কী পরিমাণ মহব্বত ও ভালোবাসা নিয়ে আমল করেছিলেন। তাঁরা নবীজির ইলমেরও উত্তরসূরী ছিলেন, আমলেরও উত্তরসূরী ছিলেন। এভাবেই এই ইলম সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পর্যন্ত ঠিক সেই অবয়বে পৌঁছেছে, যেই অবয়বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গিয়েছিলেন।


আল্লাহ আমাদের সকলকে রাসূল সা. এর সুন্নত মতো জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন।

*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।

Leave a Reply