সত্যিই কি চাঁদ দ্বিখন্ডিত? | ‍sotti ki chad dikhondito? | islamic post

সত্যিই কি চাঁদ দ্বিখন্ডিত? | ‍sotti ki chad dikhondito?

চাঁদ

– islamic post | bangla hadis –

কুরাইশ কাফেরদের অবিশ্বাস:

অবিশ্বাসীর দল হৈ চৈ জুড়ে দিল। এতক্ষণ যে তারা শত মুখে ওয়াদা করেছিল, ঘটনা ঘটার পর তা বেমালুম ভুলে গেল। তাদের হাঁকডাকে এক হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। তারা খুব বড় মুখে, আত্ম-বিশ্বাসের সাথেই ওয়াদা করেছিল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত রাসূল, নিজেকে নবী দাবি করে তার প্রমাণ আজ জনসম্মুখেই হয়ে যাবে।


যদি আকাশের দীপ্তিমান চাঁদটিকে সে দুটুকরা করে দিতে পারে তাহলে শুধু তাকে রাসূল বলেই মানব না, তার ওপর ঈমান আনতেও আমাদের আর কোনো দ্বিধা, কোনো সংকোচ থাকবে না। তার অনুসারী মুসলমানরা যেমন মানে, সর্বান্তকরণে তার ওপর ঈমান আনে, বিশ্বাস রাখে আমরাও তখন তার অনুগামী হয়ে যাব। তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করব।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াদার কথা বারবার তাদের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করালেন। কারণ পূর্বাপর অভিজ্ঞতা একবারও তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না। বিভিন্ন ঘটনায় তারা ইতঃপূর্বে অনেকবার ঈমান আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষার ন্যূনতম সদিচ্ছার পরিচয় তারা দেয়নি। কোনো না কোনে।ছিদ্র তালাশ করে টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছে। ধোঁকাবাজীর পথে হেটেছে।


বিভ্রান্তি ও পথ ভ্রষ্টতার চোরাবালিতে বারবার তলিয়ে গিয়েছে। সেই সব দুঃখজনক অভিজ্ঞতার স্মৃতি সামনে ছিল বলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াদার ব্যাপারটির ওপর এমন জোর দিলেন।

আরো পড়ুন>> রাসূলের ইশারায় গাছের চলাচল


কিন্তু অবস্থা তথৈবচ । ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যথারীতি তারা স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করল। তাদের স্বভাব চরিত্রের কোনো পরিবর্তন পাওয়া গেল না। কথায় বলে, স্বভাব যায় না মরলেও। যাদের অন্তরে মোহর পড়ে গিয়েছে, যাদের চোখ গোমরাহীর পর্দায় আচ্ছাদিত, হেদায়াতের স্বর্ণোজ্জ্বল রাজপথের পদযাত্রায় শরীক হওয়া যাদের নিয়তির লিখন ছিল না তারা কিভাবে ওয়াদা রক্ষা করবে?


সত্যিই কি চাঁদ দ্বিখন্ডিত? | islamic post | bangla hadis –

রাসূল সা. এর আঙ্গুলের ইশারায় দ্বিখন্ডিত চাঁদ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অঙ্গুলির ইশারায় প্রস্ফুটিত পূর্ণাঙ্গ চাঁদটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যখন দুই পাহাড়ের আড়ালে দু’টি টুকরা ছিটকে পড়ল তখন অবিশ্বাসী কুরায়শরা ওয়াদামতো ইসলাম গ্রহণের পরিবর্তে নতুন করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে শুরু করল।

আরো পড়ুন>> নবীজির তায়েফ সফরের ঘটনা


ঘটনাকে রাসূলের মু’জিযা হিসাবে গ্রহণ না করে তাকে যাদু, ভেল্কিবাজী বলে আখ্যায়িত করতে লাগল। আওয়াজ উচ্চকিত করল, মুহাম্মদ ভেল্কিবাজ, বড় যাদুকর! আমাদের এখানে উপস্থিত সকলের চোখেই সে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা যা অবলোকন করেছি, সবই ভেল্কিবাজী। অতএব তার ওপর ঈমান আনার প্রশ্নই উঠে না। কোনো ভেল্কিবাজ, যাদুকর, নবী হতে পারেন না।


এ সমস্ত অযাচিত, অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে লাগল। রাসূলের পক্ষে দাঁড়ানোর লোকের অভাব থাকলেও প্রতিপক্ষের দল ভীষণ ভারী। দেখতে দেখতে ব্যাপারটি উলটা মোড় নিল। কোরায়শদের মধ্যে যারা কিছুটা ধৈর্যশীল, বয়সে পরিণত ও বুদ্ধিতে পরিপক্ক, কেবলমাত্র উদ্ভট চিন্তায় তাড়িত হয় না এমন দু’ একজন এগিয়ে আসল।

আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর মক্কা বিজয়ের দিন


তারা বুদ্ধি বাতলে দিল, এক কাজ করা যাক। বিষয়টি অপাতত মুলতবি রাখা হোক। যদি যাদুর প্রভাবে হয়ে থাকে তাহলে তা প্রমাণ করা খুবই সহজ। কারণ, আমরা সবাই জানি, যাদু বিদ্যা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই কার্যকর থাকে। নির্দিষ্ট আওতার বাইরে যাদু কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারে না। তাই যদি হয়, তাহলে তো মুহাম্মদের যাদুমন্ত্র শুধু উপস্থিত লোকদের ওপরই প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। যারা এখানে নেই, যারা তার যাদুর আওতার বাইরে আছে তাদের দ্বারাই ব্যাপারটি চূড়ান্ত ফায়সালা হতে পারে।


এখন অনর্থক কথা না বাড়িয়ে আগামীকাল প্রত্যুষে যে সকল বাণিজ্য কাফেলা মক্কায় প্রবেশ করবে আমরা তাদের শরণাপন্ন হব। তারা যদি বলে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার এই অভিনব ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করেছে, তাহলেই কেবল আমরা মুহাম্মদের কথা সত্য বলে মেনে নিব। অন্যথায় ধরে নিতে হবে সব কিছু নিতান্তই মুহাম্মদের ভেল্কিবাজী, তার যাদুর খেলা।


এই কথার ওপর সেদিনকার মত হৈ হাঙ্গামার সাময়িক পরিসমাপ্তি ঘটল। প্রতিক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়। তদুপরি রাতের আঁধার পেরিয়ে এক সময় সকালের মিষ্টি রোদে পৃথিবী ঝলমলিয়ে উঠল। পাখিদের কলরব আর কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে উঠল চারপাশ। পাহাড়ের প্রান্ত ছুয়ে রোদেলা কিরণ হানা দিল পথে প্রান্তরে, লতাগুল্ম, পত্রপল্লবিত গাছগাছালিতে, মানুষের বসতবাড়িতে। আড়মোড়া ভেঙ্গে একটি নতুন দিবসের যাত্রা হলো।


অনুপস্থিত লোকদের সাক্ষ্য:

রাত জাগা বাণিজ্য কাফেলার ক্লান্ত বিধ্বস্ত মুসাফিররা ধীরে ধীরে মক্কা নগরীর কোলাহল ও মুখরতার ভিতর প্রবেশ করতে লাগল। কিন্তু আজ আর অন্য দিনের মধ্যে কোথায় যেন বিস্তর ব্যবধানের আঁচ পাচ্ছে তারা। আজ মক্কার প্রতিটি নাগরিক যেন তাদের সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে প্রতীক্ষায় ছিল। সকলের চোখেমুখে যেন কি এক জিজ্ঞাসা, অনন্ত কৌতুহল।

আরো পড়ুন>> রাসূলের মক্কী জীবনের কষ্টের ঘটনা


তাদেরকে ঘিরে আজ অন্য রকম এক ব্যস্ততা, ফিসফিস-কানাকানি । সকলেই আজ তাদেরকে ঘিরে ধরেছে। বয়স্ক যারা ধীরস্থির, তারাই প্রথম নিরবতা ভঙ্গ করে জিজ্ঞেস করল, গতকাল রাতে তোমরা তো ছিলে মক্কা নগরী থেকে বহু ক্রোশ দূরে। তোমাদের মাথার ওপর স্বচ্ছ ও অবারিত আকাশ। নিশ্চয় তোমরা তখন চলমান মুসাফির ছিলে। রাতের আকাশ, আকাশের নক্ষত্ররাজী তোমাদের দৃষ্টি সীমার আড়ালে ছিল না।


রাত জাগা চাঁদ নিশ্চয় তোমাদের এগিয়ে চলার পথ দেখাচ্ছিল। চাঁদের অপার স্নিগ্ধতার অপরূপ মাধুর্য নিশ্চয় তোমরা উপভোগ করছিলে। একটু মনে করে দেখ তো, সেই অপূর্ব মোহময় ক্ষণটিতে তোমাদের দৃষ্টিতে কোন অস্বাভাবিক দৃশ্য ধরা পড়েছে কিনা? চাঁদের স্বাভাবিকতা কোনভাবে বাধাগ্রস্থ হয়েছে, এমন কোনো ঘটনা কি তোমাদের চোখে পড়েছে? তোমাদের কি মনে হয়েছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক চলার পথে কোথাও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে? অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা ঘটেছে?


অসংখ্য প্রশ্নের মুখামুখি দাঁড়িয়ে মুসাফির দলের প্রত্যেকের চোখে মুখে যেন কি এক জ্যোতি ঝিলিক দিয়ে উঠল । তারা এতক্ষণ তাদের কৌতুহল ও উচ্ছাস কোনো ক্রমে দমিয়ে রাখলেও এখন তা উগড়ে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। তাদের অভিব্যক্তি, তাদের চাহনী, তাদের অঙ্গভঙ্গি এক গভীর রহস্য উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল।


সকল কৌতুহলের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে তারা বলল, হ্যাঁ, গত রাতে আমরা এমন এক বিস্ময়কর বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি যা বর্ণনা করলে মানুষ আমাদের কথা বিশ্বাস তো করবেই না; বরং আমাদেরকে উম্মাদ, পাগল আখ্যা দিবে। প্রথমে আমরা এতটাই বিস্মিত হয়েছিলাম যে, আমরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।


তবে কি আমরা জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখছি? অবাক বিস্ময়ে আমরা তাকিয়ে দেখলাম যে, রাতের পূর্ণ চাঁদটি অকস্মাৎ দ্বি-খণ্ডিত হয়ে দুই পাহাড়ের আড়ালে দু’টি খণ্ড ছিটকে পড়ল। কেউ একা নই, আমরা সকলেই এই অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা সকলেই ছটফট করছিলাম কখন মক্কায় পৌছব? কখন নগরবাসীর নিকট ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করব? আপনারাও কি এই অবিশ্বাস্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন?


এই কঠিন বাস্তবতা ও সত্যের মুখামুখি হয়েও অবিশ্বাসী কোরায়শদের অবস্থা তথৈবচ। তাদের ঘারের উপর উদ্ধত মাথাগুলো নুয়ে পড়লেও মনের আঁধার কাটল না। লা জবাব হয়ে, কথা হারিয়ে ফেলে একে একে যার যার গন্তব্যে কেটে পড়ল। অপমান, লজ্জায় বিধ্বস্ত প্রতিটি অসহায় চেহারা তখন মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে লুকানোয় ব্যস্ত।


***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***

Leave a Reply