সরাসরি আল্লাহর কুদরত প্রকাশ | allahor qudrot prokas
সরাসরি আল্লাহর কুদরত প্রকাশ | allahor qudrot prokas | islamic post
ছহীহ্ বোখারী শরীফ ৩০৯ নং হাদীস : হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আসহাবে সুফফাগণ ছিলেন নিতান্ত গরীব ও অসহায়। নবী করীম সা. একবার তাদের সম্পর্কে সাহাবাকেরামদের বললেন।
যাদের কাছে দু’জনের খানা আছে, সে যেন তিনজন আসহাবে সুফ্ফাকে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চার জনের খানা আছে, সে যেন পাঁচজন অথবা ছয়জনকে নিয়ে যায়।
অতঃপর উক্ত আদেশ অনুযায়ী হযরত আবু বকর রা. তিনজন আসহাবে সুফ্ফাকে মেহমান হিসেবে নিয়ে গেলেন। আর নবী করীম একাই দশজন নিয়ে গেলেন। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. বলেন, ঐ সময় আমাদের ঘরে আমি আমার স্ত্রী, আমার মা, বাবা ও একজন খাদেম ছিল।
আমাকে পিতা হুকুম করলেন, তুমি এই মেহমানদের খেদমত করিও। আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর দরবারে যাচ্ছি । আমার জন্য কোনরূপ অপেক্ষা না করে মেহমানদের খানা খাওয়ানো শেষ করে ফেলো।
এ কথা বলে হযরত আবু বকর রা চলে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে অনেক সময় কাটালেন। এমনকি সেখানেই তিনি খানা খাদ্য খেলেন এবং এশার নামায আদায় করলেন। তারপর যখন নবী করীম সা. এর নিদ্রা যাওয়ার সময় হলো তখন তিনি সেখান হতে বাড়ী ফিরলেন।
আরো পড়ুন>> হযরত আলীর হত্যাকারীর শাস্তি
এদিকে বাবার নির্দেশ অনুযায়ী মেহমানদের খানা উপস্থিত করে তাঁদের খেতে অনুরোধ করলাম। তারা জিজ্ঞেস করল মেযবান কোথায়?
আমি তাদেরকে অনুরোধ করলাম, আপনারা খানা-পিনা সেরে নিন । তারা বললেন, তিনি না আসা পর্যন্ত আমরা খাব না । আমি তাদেরকে বললাম, তিনি যদি এসে দেখেন আপনাদের খাওয়া হয়নি তবে আমার প্রতি অত্যধিক রাগ হবেন।
আরো পড়ুন>> সাহাবীর আশ্চর্য পানি পানকরা
এতকিছু বলার পরেও তারা খেতে চাইলেন না। আমার পিতা হযরত আবু বকর রা. যখন বাড়ী এলেন তখন আমি ভয়ে পালিয়ে রইলাম, আমার মা উম্মে রুম্মান আমার পিতা আবু বকর রা.-কে বললেন, মেহমানদেরকে ছেড়ে এত সময় কোথায় কাটালেন?
তিনি হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এখনও কি মেহমানদের খানা-পিনা হয়নি? আমার মা বললেন খাবার দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খানা খেতে রাজি হয়নি । আমার পিতা অত্যধিক রাগ হয়ে আমাকে বলল, হে নিকৃষ্ট, তোর নাক কাটা যাক ইত্যাদি বাক্য দ্বারা আমাকে ডাকলেন।
আরো পড়ুন>> সরাসরি আল্লাহর কুদরত প্রকাশ
পরে বললেন, অতিসত্তর উপস্থিত হও। নতুবা ভাল হবে না। আমাকে গালিগালাজ করতে লাগলেন। আমি চুপ করে পালিয়ে রইলাম। তিনি কয়েকবার আমাকে ডাকলেন, অতঃপর আমি উপস্থিত হলাম এবং বললাম, আপনি মেহমানদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
তারা বললেন, আবদুর রহমানের কোন দোষ নেই, সে ঠিকই বলছে। আমাদের জন্য খানা পিনা হাজির করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা খেতে রাজি হইনি।
আরো পড়ুন>> দাজ্জালের পরিচয় জেনে আতংকিত হবেন
তখন আমার পিতা আবু বকর রা. বললেন, আপনারা খেয়ে নিন, আল্লাহ্র কসম এ রাতে আমি আর খাব না। মেহমানগণও শপথ করে বসলেন, আপনি না খেলে আমরাও খাব না। তখন হযরত আবু বকর রা. একটু শান্ত হয়ে বসলেন।
এরূপ ঘটনাতো আমার কাছে মহাবিপদ হয়ে গেল, আপনারা কেন খাবার গ্রহণ করবেন না? খানা হাযির করার জন্য আদেশ করলেন এবং বললেন, রাগন্বিত অবস্থায় কথাবার্তার মধ্যে শয়তানের ধোকা ছিল। এ বলে খানা খাওয়া শুরু করলেন। পরে সকলেই খানা খেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. বলেন, আল্লাহ্র কসম করে বলছি, আমরা এক লোকমা খাদ্য পাত্র হতে উঠাবার সাথে সাথেই খাদ্য-বস্তু পরিমাণে বেড়ে যেতে লাগল। এমন কি উপস্থিত সকল মেহমান পরিতৃপ্তির সাথে খানা খেলেন। এদিকে খাদ্যবস্তু আগের চেয়ে অনেক বেশী দেখা গেল।
হযরত আবু বকর রা. এ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী উম্মে রুম্মান রা.কে ডাকলেন। তিনিও আশ্চর্য হয়ে বললেন, বর্তমান খাদ্যবস্তু পূর্বের তুলনায় তিনগুণ বেশী।
হযরত আবু বকর রা. বুঝতে পারলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ পক্ষ হতে বরকত নাযিল হয়েছে। তা অতি বরকতময় মোবারক খাদ্য। তিনি পেট ভরে খেলেন এবং পূর্বের ভুলের কথা স্মরণ করে বললেন, রাগ অবস্থায় যে কসম করা হয়েছিল তা শয়তানের ধোকাই হয়েছিল বলে আর এক লোকমা খেলেন।
পাত্রে আরো খাদ্য অবশিষ্ট ছিল পরে তা রাসূলুল্লাহ সা. এর দরবারে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সেগুলো সকাল পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সালার এর কাছে মওজুদ ছিল।
বর্ণনাকারী হযরত আবদুর রহমান বলেন,
পরের দিন সকালে আমাদের ও অপর এক গোত্রের মধ্যে একটি শালিসীর বৈঠক ছিল। উক্ত বৈঠকে বারজন ব্যক্তিকে মীমাংসার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল তাদের সাথে অনেক লোক ছিল তারা সকলে তৃপ্তির সাথে ঐখানা খেলেন। অর্থাৎ উক্তখানা দ্বারা বিরাট এক মেহমানদারী সমাপ্ত করা হল।
***আল্লাহ আমাদের সকল কে বেশি বেশি মেহমানদারি করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)***
***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।