সাপ দ্বারা রাসূল সা. কে সাহায্য | sap dara rasul ke sahajjo | islamic post

 সাপ দ্বারা রাসূল সা. কে সাহায্য | sap dara rasul ke sahajjo 

সাপ

-islamic post | bangla hadis- 

কাফেরদের ভয়:

আবু জেহেল দেখল, নজর ইবনে হারিস উলটা দিক থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে। চেহারায় সন্ত্রস্ত ভাব, পদক্ষেপ এলোমেলো, ভীতির ছাপ। চোখ দুটো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। ভয়ংকর কিছু যেন তাকে তাড়া করে নিয়ে আসছে। উদভ্রান্তের মতো ছুটে ছুটে আসছে আর ঘাড় বাকিয়ে বার বার পিছন দিকে ফিরে ফিরে দেখছে। ভয় ও আতঙ্কে তার অবস্থা শোচনীয়। প্রাণ হাতে নিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে। কোন দিকে তাকানোর মত সামান্য হীতাহীত জ্ঞানটুকু তার নেই।


একেবারে কাছাকাছি আসার পর বিস্মিত আবু জেহেল হাতের ইশারায় তাকে থামতে বলল। তার গতি রুদ্ধ করে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার নজর! উদভ্রান্তের মতো এমন হন্তদন্ত হয়ে কোত্থেকে ছুটে আসছ? কাবিলার কোনো সমস্যা হয়েছে? গোত্রের ওপর কেউ হামলা করেছে? নাকি কারো সাথে বিবাদে জড়িয়েছ?


আবু জেহেলের ইশারায় গতি রুদ্ধ হলেও বুকের ধড়ফড়ানী ও আতঙ্কের কারণে তার মুখ দিয়ে স্বাভাবিক কোনো কথা বের হচ্ছে না। হাঁপরের মতো বুক উঠানামা করছে। সে শুধু হাতের ইশারায় পিছন দিকে দেখাচ্ছে আর রগ কাটা পশুর ন্যায় তার গলা দিয়ে গরগর আওয়াজ বের হচ্ছে। অস্থির না হয়ে আবু জেহেল তাকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিল। গলা ভেজানোর জন্য পানি এগিয়ে দিল।

আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর স্বপ্নের বর্ণনা


সামান্য স্থির হওয়ার পর আবু জেহেল আবার বলল, নজর! ব্যাপার কী? একটু খুলে বল তো?

: সাপ! সাপ! সরদার! সাপ!

: কোথায় সাপ! কি আবোল তাবোল বকছ? মাথা খারাপ! এখানে সাপ আসবে কোত্থেকে ?

: মাথা খারাপ হয়নি সরদার ! ইয়া বড় বিষাক্ত সাপ। ফণা তুলে হা করে আসছে। ঐ তো আমি পরিষ্কার দেখছি। ঐ তো সরদার! তুমিও তাকিয়ে দেখো ৷


: বুঝতে পারছি, কোথাও কিছু ঘটেছে। গোলমেলে ব্যাপার মনে হচ্ছে। এসো আমার সাথে। মাথা ঠাণ্ডা করে ঘটনা খুলে বল। শুনি কি হয়েছে?


আবু জেহেলের কথায় নজর ইবনে হারিস কিছুটা স্বস্তি পেল। ততক্ষণে তার শ্বাস-প্রশ্বাসও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ভীতি ও সন্ত্রস্ত ভাবটাও কেটে গিয়েছে। কথাবার্তা ও আচরণে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। উভয়ে গিয়ে একটি টিলার কাছে পাথরের উপর বসল। কিছুটা আত্মস্থ হয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে তার কাহিনী বলতে আরম্ভ করল-

( islamic post | bangla hadis )


কাফেরদের হত্যার ব্যার্থ চেষ্টা:

: সরদার! আপনি তো জানেন, মুহাম্মদ যখন নবী দাবি করেছে তখন থেকেই আমি তার পিছনে লেগে আছি। অষ্টপ্রহর আমার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হলো, কিভাবে মুহাম্মদের অনিষ্ট করা যায়। তার বিরুদ্ধে এমন কোনো কাজ নেই যা আমি করিনি। যখনই সুযোগ পেয়েছি তাকে কষ্ট দিয়েছি। সমস্যায় ফেলেছি। সব সময় অপেক্ষায় থেকেছি, তাকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার মতো সুযোগ কখন হাতে এসে যায়।

আরো পড়ুন>> আবু জেহেল কেন নবীজীকে ভয় পেত?


আজ তেমনি এক সুযোগ পেয়েছিলাম। সরদার! দেখতেই পারছেন! গরমের তীব্রতা আজ কত বেশি। মরুভূমির প্রতিটি তপ্ত বালুকণা থেকে যেন আগুনের হলকা বের হচ্ছে। বাতাসের ছিটা ফোটাও নেই। কোথাও গাছের পাতাও নড়ে না। প্রতিটি মানুষ এমন কি পশু-পাখিরও হাঁস-ফাঁস অবস্থা। ভ্যাপসা গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।


যেভাবে রাসূল সা. কে সাপ দ্বারা সাহায্য করলেন:

এই গরমে দুপুরের দিকে মুহাম্মদের হয়তো প্রাকৃতিক প্রয়োজন হয়েছিল। আর আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, এই সময় আপনার ভাতিজা লোকালয় ছেড়ে কোনো জঙ্গলে বা আড়ালে চলে যায়। আজও তাই গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে আমার নজরে পড়ে যায়। তাকে জঙ্গল-পাহাড়ের নির্জনে পৌঁছতে দেখে আমি ভাবলাম,


মুহাম্মদকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়ার এটাই মোক্ষম সুযোগ। অকস্মাৎ পাওয়া এই সুযোগকে কী হেলায় নষ্ট করা যায়? তাই তাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আমিও তার পিছু নিলাম। সুযোগ পেলেই মুহাম্মদকে হত্যা করে ফেলব। পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলাম নিঃশব্দে। হাতে ধারালো খঞ্জর। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার মেরুদণ্ড বরাবর ঢুকিয়ে দিব। তার জীবন লীলা সাঙ্গ করে দিব।


আমি যখন মুহাম্মদের একেবারে কাছাকাছি পৌছে গেলাম তখন হঠাৎ তাকিয়ে দেখি কোত্থেকে যেন একটি বিষধর কাল সাপ আমার মাথার উপর ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এত বড় সাপ আমি জনমেও দিখিনি। ছোবল মারার জন্য উদ্দত হয়ে ফণা তুলে ফুসফুস করছে। সাক্ষাৎ মৃত্যুকে সামনে পেয়ে আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার দশা হলো। আরেকটি কদম সামনে বাড়ালেই দংশন করবে। আর আমার মৃত্যু অবধারিত।

আরো পড়ুন>> জীবনের শেষ সময়ে রাসূলের নামাজ


ভয়ে-আতঙ্কে জমে গেলাম। আমার বুদ্ধি লোপ পেল। মুহাম্মদকে কতল করার কথা আর মনেই থাকল না। নিজের প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে উলটা পায়ে এমন ছুট লাগালাম যে, কোনো দিকে হুঁশ ছিল না। আমার জীবনে এমন সাপ কখনো দেখিনি। এখনো আমার বুক ধড়ফড় করছে। লাত-উয্যার দয়ায় প্রাণ নিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে এসেছি। আপনি না থামালে হয়তো এখনো আমার আতঙ্কে কাটত না ৷ সরদার! আপনিই বলুন, আমার মতো অবস্থায় পড়লে কোনো মানুষের কি হুঁশ-জ্ঞান থাকার কথা !

আবু জেহেল বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইল।

***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***

Leave a Reply