হালাল খাবারের ফায়দা | halal khabarer fayda | islamic post

 হালাল খাবারের ফায়দা | halal khabarer fayda

হালাল খাবার
islamic post


হালাল রিযিকের দ্বারা ইবাদতের তাওফীক্ব লাভ হয়, অন্তরে নূর সৃষ্টি হয়। ইলমে বরকত হয়, মনে সৎসাহস সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে হারাম রিযিক দ্বারা অন্তর কালো হয়, ইবাদতে অনীহা আসে ও কাপুরুষতা বৃদ্ধি পায়।


ভারতের দেওবন্দে এক সাধারণ দিনমজুর ছিল। নাম তাঁর শাহজী আব্দুল্লাহ। কাঁচা ঘাস বিক্রি করে সংসার চালাতেন। প্রতিদিন এক বোঝা ঘাস নিয়ে বাজারে আসতেন। একদাম ছয় পয়সায় বিক্রি করতেন।


নীতিবান লোক ছিলেন। মানুষ মনে করতো শাহজীর ঘাস কিনে মহিষকে খাওয়ালে দুধ বেশি হবে। ঘরে বরকত হবে। তাই সকলে তার ঘাস কিনতে আগ্রহী ছিল। চাহিদা যতই বাড়ুক তিনি দাম বাড়াতেন না। যে আগে আসতো তার কাছেই বিক্রি করতেন।


প্রতিদিনের এ আয়কে তিনি তিন ভাগে ভাগ করতেন। দুই পয়সা গরীব-মিসকীন, অসহায় বিধবাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। দুই পয়সা সংসারে খরচ করতেন, আর দুই পয়সা জমা করতেন। এভাবে বছরে সাতটাকার চেয়ে কিছু বেশি পয়সা জমা হতো। এ দ্বারা তিনি বছরে একবার আলিম- উলামাদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন।

আরো পড়ুন>> আকাশ থেকে খাবার অবতরন


দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী রহ. বলেন, আমরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকতাম শাহজীর ঘরে দাওয়াত কবে হবে। কেননা, সেখানে একবেলা খানা খেলে ৪০ দিন পর্যন্ত অন্তরে নূর থাকতো, মন চাইত নামায পড়ি, তিলাওয়াত করি, যিকির করি।


হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী রহ.-এর অপর এক ঘটনা, তিনি এক বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলেন। যখনই প্রথম লুকমা মুখে দিলেন, তখন তিনি অনুভব করলেন যে খানার মধ্যে কোন ঝামেলা আছে। সম্ভবত হারাম আমদানী দ্বারা এ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।


খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারলেন ঠিকই খানা হালাল আমদানী দ্বারা তৈরি হয়নি; বরং তা ছিল হারাম। তিনি খুব চিন্তিত হলেন তাওবা ও ইস্তিগফার পড়লেন। তারপরও হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী রাহ. বলেন, এ এক লুকমা হারাম খাবারের প্রভাবে দুই মাস পর্যন্ত আমার অন্তরে এই খেয়াল পয়দা হতো যে, অমুক গুনাহ’র কাজ করি তমুক গুনাহ’র কাজ করি। এ হলো হারাম রিযিকের প্রভাব।

আরো পড়ুন>> এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন 


ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. ইমাম শাফি’ঈ রহ.-এর শিষ্য ছিলেন। একবার শাফি’ঈ রহ. মিশর থেকে পত্র লিখলেন ইমাম আহমাদের নিকট। লিখলেন, আহমাদ! অনেক দিন হয় তোমার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। একবার সময় করে এসে বেড়িয়ে যাও।


ইমাম আহমাদ চিঠি পাওয়া মাত্র জবাব দিলেন, আমি অমুক তারিখে আসছি। উত্তর পাওয়া মাত্র ইমাম শাফি’ঈ আমীর-‘উমারাহ, ভক্ত-মুরীদান নিয়ে শহরের বাইরে চলে আসলেন তাঁর ইস্তিকবালের জন্য। যথাসময় ইমাম আহমাদ রহ. আগমন করলেন।


সকলে তাকে অভ্যর্থনা সহকারে এগিয়ে নিয়ে এলেন। সিদ্ধান্ত হলো, ইমাম শাফি’ঈ’র বাসায় মেহমানদারী হবে। রাতে যখন তাঁর সামনে খানা হাজির করা হলো, তখন তিনি উদরপূর্ণ করে খানা খেলেন। ‘ইশার নামাযান্তে খাস কামরায় থাকার ইন্তেজাম করা হলো।

আরো পড়ুন>> নবীজীর হাত থেকে পানির নহর


ইমাম শাফি’ঈ রহ.-এর সন্তানেরা আনন্দ-খুশিতে বিভোর। যামানার বিখ্যাত ইমাম তাদের ঘরে মেহমান। কিন্তু খাওয়া দেখে তারা কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো- এত বড় এক জন নামী-দামী আলিম এভাবে উদরপূর্ণ করে উপসে খাওয়া খেল! যাই হোক, রাতের বেলা তারা ঘরের দরজায় বদনা ভরে পানি রেখে দিল, যেন তিনি রাতে উঠে জরুরত সেরে ওজু করে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে পারেন।


সকাল বেলা দেখা গেল বদনার পানি যেভাবে রেখে ছিল। সেভাবে পড়ে আছে। এতে ইমাম শাফি’ঈ’র সন্তানদের মনে সন্দেহটা আরও বেড়ে গেল। তারা তাদের পিতা ইমাম শাফি’ঈকে বললো, কেমন ইমাম আর কেমন শাগরিদ; রাতে খানা খেলো যেন কয়েক দিনের ভুখা। আর রাতে তাহাজ্জুদ তো নিশ্চয় পড়েনি, পড়লে ওযূর দরকার হতো, পানিও খরচ হতো।


অথচ এই দেখুন, লোটাভরা পানি যেমনি রেখেছিলাম তেমনি রয়ে গেছে। কেমন বুযুর্গ আর কেমন ইমাম? ছেলে-মেয়েদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অবশেষে ইমাম শাফি’ঈ ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করলেন, আহমাদ! বলো তো, তোমার এ অবস্থা কবে থেকে? ইমাম আহমাদ বিষয়টা বুঝে ফেললেন।


তিনি বললেন, হযরত আজ অনেক দিন পর ‘ইশার ওজু দ্বারা ফজরের নামায পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এরপর তিনি ঘটনা খুলে বললেন, “আমি যখন আপনার দস্তরখানে খানা খেতে বসলাম, খানা হাজির করা হলো, তখন সারাটা ঘর যেন আলোয় ভরে গেল। খানার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যেন তার উপর আসমান থেকে নূর ও বরকতের বৃষ্টি হচ্ছে। তখন আমি চিন্তা করলাম প্রয়োজনে একসপ্তাহ ভুখা থাকবো তবু এ বরকত হাত ছাড়া করবো না, তাই আমি উদরপূর্ণ করে খানা খেয়েছি। এতে আমার দুইটি ফায়েদা হয়েছে। ১. আমলী আর ২. ইলমী। আমলী ফায়দা হচ্ছে, আজ আমি ‘ইশার ওযূ দ্বারা তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামায পড়েছি। তাই আমার ওযূর পানির দরকার হয়নি। আর ইলমী ফায়দা হলো আমি খাটে শুয়ে শুয়ে একটি আয়াত থেকে একশত মাসআলা উদঘাটন করেছি— যা এ যাবৎ আমার বুঝে আসছিল না।


*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।


Leave a Reply