তাওবা করার উপকারিতা | tauba korar upokarita
bangla tafsir | islamic post
মানুষের জীবন গুনাহে জর্জরিত। এমন কোন মানুষ নাই যার কোন গুনাহ নাই। একমাত্র আম্বিয়ায়ে কেরামের সুমহান জামা’আত ব্যতীত। কেননা সমস্ত নবী নবুওয়ত প্রাপ্তির আগে ও পরে সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্ত থাকেন। তারা মা’সূম, নিষ্পাপ। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কোন নবী থেকে কোন গুনাহ সংঘটিত হয়নি এবং হতেও পারে না।
নবীদের ব্যাপারে চার মাযহারের উলামায়ে কেরাম এই ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’আতের আকীদাও তাই। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের গুনাহ সংঘটিত হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। গুনাহ সংঘটিত হওয়া কোন আশ্চর্য বা অস্বাভাবিক বিষয় নয়; বরং আশ্চর্য হলো গুনাহ’র উপর অটল অবিচল থাকা, তাওবা না করা।
এ কারণে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কারীমে বার বার বান্দাকে তাওবার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে:
يَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةٌ نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيَأْتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهرُ
আয়াতের অনুবাদ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ’র কাছে তাওবা কর, আন্তরিক তাওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দকর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (সূরা তাহরীম: ৮)
অন্যত্র ইরশাদ করেন:
وَتُوبُوا إِلَى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
আয়াতের অনুবাদ- “মু’মিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ’র সামনে তাওবা কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও। ” (সূরা নূর: ৩১)
আরও ইরশাদ হচ্ছে:
قُلْ يعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
আয়াতের অনুবাদ- “বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহ’র রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার: ৫৩)
এসব আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, গুনাহ’র সাথে মানুষের ফিতরাতের সম্পর্ক। গুনাহ করার প্রবণতা মানুষের স্বভাবের মধ্যে রয়েছে। সুতরাং মানুষ থেকে গুনাহ, অপরাধ সংঘটিত হওয়া আশ্চর্যের বিষয় নয়। আশ্চর্য হলো গুনাহ করে তার উপর অবিচল থাকা, তাওবা না করা। এ কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বার বার ডেকে বলেন-“হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা গুনাহ করে নিজেদের উপর জুলুম করেছ, অবিচার করেছ, তারা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমরা খাঁটি তাওবা করলে আমি তোমাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেবো । আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (প্রাগুক্ত)
মানুষ যত গুনাহই করুক না কেন, যদি মৃত্যুর এক মুহূর্ত আগেও খাঁটি তাওবা করে, তা হলে তার সারা জীবনের যাবতীয় গুনাহ তিনি মাফ করে দেবেন।
আরো পড়ুন>> বেপর্দা মহিলার কবরের আজাব
মুসলিম শরীফের এক হাদীছে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “বনী ইসরাঈলে একব্যক্তি ছিল যে ৯৯ জন মানুষ হত্যা করেছিল। এমন সময় একদিন তার মনে আল্লাহ’র ভয় হলো। পরকালের চিন্তা আসল। তখন সে লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে, এমন কোন ব্যক্তি আছে যার কাছে আমি জিজ্ঞেস করবো যে, আমার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি-না?
লোকেরা এক পাদ্রীর সন্ধান দিল। যাও, তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। লোকটি ঐ পাদ্রীর কাছে গিয়ে নিজের সকল অপরাধ খুলে বললো এবং জিজ্ঞেস করলো আমার ক্ষমার কোন সুযোগ আছে কি-না?
পাদ্রী সব বৃত্তান্ত শুনে বললো, সর্বনাশ, এত বড় অপরাধ! না তোমার ক্ষমার কোন সুযোগ নাই। লোকটা নিরাশ হয়ে ঐ পাদ্রীকেই হত্যা করে ফেললো। এভাবে একশত মানুষ খুন করার পর সে আবারও লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে, ভাই এমন কোন লোক আছে যার কাছে আমি আমার তাওবার বিষয় জিজ্ঞেস করবো?
আরো পড়ুন>> হযরত আলীর হত্যাকারীর শাস্তি
তখন লোকেরা পুনরায় তাকে আরও এক বড় আলিমের সন্ধান দিল । তখন ঐ লোকটি বড় আলিমের নিকট গিয়ে বললো, আমি এ পর্যন্ত একশত মানুষ হত্যা করেছি। এখন আমার তাওবার কোন সুযোগ আছে কি-না?
আলিম সাহেব তাকে বললেন, “কেনই বা নাই! অবশ্যই আছে, যাও, অমুক বস্তিতে গিয়ে দেখ, কিছু লোক আল্লাহ’র ইবাদতে মশগুল রয়েছে। তুমিও তাদের সাথে গিয়ে ইবাদতে শামিল হয়ে যাও। আল্লাহ তাওবা কবুল করবেন।
একথা শুনে লোকটা বস্তির পথ ধরে চলতে লাগলো। কিছুদূর অগ্রসর হতেই মৃত্যুর ফেরেশতা তার সামনে হাজির হলো এবং যথারীতি তার জান কবজ করলো। যখন লোকটির মৃত্যু হয়ে গেল, তখন দুইদল ফেরেশতা সেখানে হাজির হলো।
একদল রহমতের ফেরেশতা আর এক দল আযাবের ফেরেশতা। তারা দুই দল ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। রহমাতের ফেরেশতা বললো, এ লোক আমাদের, একে আমরা নিয়ে যাব। আযাবের ফেরেশতা বললো, এ লোক সারা জীবন কঠিন অপরাধে লিপ্ত ছিল, একে আমরা নিয়ে যাব।
আরো পড়ুন>> ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন
এমন সময় আল্লাহ সালিশ হিসেবে তৃতীয় এক ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা এসে বললো, আচ্ছা এক কাজ করো, এই ব্যক্তি যে জায়গা থেকে রওয়ানা হয়েছে এবং যেখানে যাবে এর মাঝে যে দিকে পথ কম হবে তাকে সেদিকের অন্তর্ভূক্ত করা হবে। অর্থাৎ, তাওবার উদ্দেশ্যে সফর করে যদি বস্তির নিকটবর্তী হয়ে যায় তা হলে তাকে রহমাতের ফেরেশতা নিয়ে যাবে। আর তা না হলে আযাবের ফেরেশতা নিয়ে যাবে।
এরপর যখন জমিন মাপা শুরু হলো তখন যদিও তাওবার রাস্তার দূরত্ব বেশি ছিল, তবুও যেহেতু লোকটি খালেছ তাওবার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল তাই আল্লাহ জমিনের ঐ অংশকে হুকুম দিলেন জমিন সংকীর্ণ হয়ে যাও। সাথে সাথে জমিন সংকীর্ণ হয়ে গেল। দেখা গেল যে জায়গার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছে তার দূরত্ব কম, তখন রহমাতের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে গেল। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তার তাওবাকে কবুল করলেন এবং সে জান্নাতবাসী হয়ে গেল।’
সুতরাং অপরাধ যতই হোক না কেন, আল্লাহ’র নিকট ক্ষমার দরজা সর্বদাই উন্মুক্ত। নিরাশ আর হতাশার কিছুই নাই। প্রয়োজন কেবল একমনে একধ্যানে আল্লাহ’র নিকট ইস্তিগফার করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাওবা করা।
*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।