চাঁদ ও নক্ষত্র সৃষ্টি করার কারণ | chad sristir karon
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
تَبْرَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَ جَعَلَ فِيهَا سِرجًا وَ قَمَرًا منيرا-
অর্থাৎ সেই মহান মহিমাময় আল্লাহ, যিনি আকাশে কক্ষপথ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে বড় বড় নক্ষত্র ও উজ্জ্বল চাঁদ সৃষ্টি করেছেন । (সূরা ফুরকান : ৬১)
চাঁদ ও নক্ষত্র সৃষ্টি করার কারণ | islamic post | al quran bangla tafsir-
চাঁদ ও নক্ষত্রের প্রয়োজনীয়তা:
মহান আল্লাহ পাক রাতকে অবকাশ ও বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। বাতাসকে শীতল ও আরামদায়ক করেছেন। তিনি রাতকে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার করে সৃষ্টি করেননি। বরং তাতে শান্তিদায়ক, কোমল ও স্নিগ্ধ আলোর সমাবেশ ঘটিয়েছেন। কারণ, মানুষকে অনেক সময় রাতেও কাজ করতে হয়। আর নিশ্ছিদ্র অন্ধকার রাতে কাজ করা অসম্ভব।
আরো পড়ুন>> আল্লাহ কেন সূর্য সৃষ্টি করলেন?
গ্রীষ্মকালে অত্যাধিক গরমের কারণে বা সময়ের অভাবে দিনের অনেক কাজই অসমাপ্ত থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে সে কাজ রাতেই সমাপ্ত করতে হয়। এ সময় চাঁদের আলো অতিশয় সহায়ক। মুসাফিররাও রাতের কোমলতা ও স্নিগ্ধতায় স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারে। অনেক সময় নক্ষত্র ভরা আকাশে (অর্থাৎ পূর্ণিমার) চাঁদের স্নিগ্ধ ও মিষ্টি আলো মানুষের মনকে আনন্দে আপ্লুত করে দেয়।
প্রতিটি মাসের কিছু কিছু রাতে আকাশে চাঁদ অনুপস্থিত থাকে। অন্ধকার আকাশে মিট মিট করে তারকা জ্বল জ্বল করে। তারকার হালকা স্নিগ্ধ আলো কিছুটা হলেও চাঁদের অভাব পূরণ করে। পূর্ণিমা বা তার আগে ও পরের রাতগুলোতে এক ঝাঁক তারকার মাঝে আকাশে পরিপূর্ণ চাঁদ ভেসে উঠে।
তখন সারা পৃথিবীতে আলোর বন্যা বয়ে যায়। সব কিছুকে স্বপ্নীল আবেশে ভরে তোলে। মানুষ সেই আলোর মাধুর্যতায় ও স্নিগ্ধতায় আত্মহারা হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ পাকের এই অসম্ভব সৃষ্টি কুশলতার প্রতি লক্ষ্য করো, তিনি রাতের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারকে চাঁদ ও তারকার স্নিগ্ধ আলো দ্বারা দূর করেন, যাতে মানুষ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে দিশেহারা হয়ে না পড়ে।
আরো পড়ুন>> সমুদ্রের অজানা রহস্য
আলোদান ছাড়াও চন্দ্র ও নক্ষত্রে নিহিত রয়েছে বহু নিগূঢ় রহস্য। মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টির নৈপুণ্য। চন্দ্র-নক্ষত্রের আবর্তন-বিবর্তন দ্বারা বছর ও মাসের হিসেবও নির্ণিত হয় এবং কৃষ্টি ও আচার অনুষ্ঠানের অনেক তাৎপর্য এর গতি-বিধির সঙ্গে সংশিষ্ট।
জলে বা স্থলে ভ্রমণকারীদের জন্য চাঁদ ও নক্ষত্রের দিক নির্দেশনা বিরাট এক অবলম্বন। আধার রাতে গভীর অরণ্যে বা বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে কিংবা বিশাল সাগরের বুকে চাঁদ ও নক্ষত্র দ্বারা দিক নির্ণয় করা দিশেহারা পথিকের জন্য অতিশয় সহজসাধ্য ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوْمَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلمتِ الْبَرَ وَالْبَحْرِقَدْ فَصَّلْنَا الْأَيَتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ সেই আল্লাহ তারকাসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যেন অন্ধকার (রাতে) জলে-স্থলে তোমরা পথ-নির্দেশ লাভ করতে পারো। (সূরা আনআম : ৯৭)
আকাশে চাঁদের অবস্থান:
চাঁদের আবর্তন ও বিবর্তন, উদয় ও অস্ত, হ্রাস ও বৃদ্ধি এবং কোন কোন রাতে একেবারেই অনুদয় কিংবা গ্রহণ কবলিত হয়ে সৃষ্টির অন্তরালে চলে যাওয়া, এ সমস্তের মধ্যেই রয়েছে মহান আল্লাহ পাকের অপার কুদরত ও সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য। মানুষের পক্ষে সেই নিগূঢ় রহস্যের জাল ভেদ করা শুধু কষ্টসাধ্যই নয়, অসম্ভবও বটে।
তাছাড়া চাঁদ আকাশের ভাসমান অপরাপর তারকাগুলোর সঙ্গে গতির সামঞ্জস্যতা বজায় রেখেই স্বীয় কক্ষপথ পরিভ্রমণ করে। স্থুল দৃষ্টিতেও যা স্পষ্ট প্রতীয়মান। চাঁদ যদি এরূপ সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিশীল না হয়ে ভিন্নতর হতো, তাহলে এমন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সময়ের ভারসাম্যতা রক্ষা করে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কক্ষপথের নির্দিষ্ট দূরত্ব পরিভ্রমণ করা তার পক্ষে সম্ভব হতো না।
আরো পড়ুন>> আকাশ থেকে খাবার অবতরন
]মহান আল্লাহ তায়ালা চাঁদকে অনেক উর্ধ্বে স্থাপন করেছেন, যাতে তার গতির ঝলক আমাদের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত না করে এবং ঝলসে না দেয়।
যেমন— মহান আল্লাহ পাকের অপার সৃষ্টি বিদ্যুতের ঝলক আমাদের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করে, ঝলসে দেয়। আল্লাহ তায়ালা চাঁদের এসব নেতিবাচক বা ক্ষতিকর বিষয় হতে আমাদেরকে নিরাপদ দূরত্বে হেফাজত করেছেন। অন্যথায় চাঁদ যদি আমাদের অতি নিকটে হতো বা তার দ্রুতগতি আমাদের দৃষ্টির মধ্যে থাকতো তাহলে হয়ত এমন সব বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতো যা আমাদের কল্পনারও বাহিরে। এজন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা চাঁদকে এক বিশেষ ধারায় সৃষ্টি করেছেন এবং প্রয়োজন অনুসারে দূরত্বে স্থাপন করেছেন।
আকাশের অন্যান্য নক্ষত্র:
আকাশে এমন কিছু নক্ষত্র আছে যেগুলো বছরের কোন কোন রাতে দেখা যায় আবার কোন কোন রাতে দেখা যায় না। যেমন- সুরাইয়া, জুয়া, শুয়া ইত্যাদি। যদি এসব নক্ষত্র সব সময় আকাশে দেখা যেত, তাহলে মানুষ এগুলো দ্বারা বর্তমানে যে উপকার লাভ করছে তা থেকে বঞ্চিত হত।
আর মহান আল্লাহ তায়ালা কিছু নক্ষত্রকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যা বছরের প্রতি রাতেই দেখা যায়। যেমন- সপ্তর্ষিমণ্ডল বা সাত-সিতারা। এগুলো বিভিন্নভাবে মানুষের উপকারে আসে। প্রতি রাতেই এই সাত- সিতারা আকাশে উদিত হয়। আধার রাতে ভ্রমণকারীরা এগুলোর মাধ্যমে বিশেষ সাহায্য লাভ করে থাকে।
আকাশে ভাসমান তারকাগুলো যদি গতিশীল না হতো, স্বীয় কক্ষপথ পরিভ্রমণ না করতো এবং একই স্থানে স্থির হয়ে থাকতো, তাহলে এখন তাদের গতিশীলতা দ্বারা মানুষ যেসব কল্যাণ ও দিক-নির্দেশনা লাভ করছে সে সব থেকে মানুষ বঞ্চিত হতো। যেমন- এখন অন্ধকার রাতে ভ্রমণকারীরা সফরের সময় বিভিন্ন মঞ্জিল অতিক্রম করতে এসব গতিশীল তারকাগুলো হতে দিক নির্দেশনামূলক সাহায্য লাভ করে। এ ছাড়াও এসব গতিশীল নক্ষত্রগুলোর প্রতি ঋতুতে পরিক্রমার ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত বিভিন্ন উপকার লাভ করে থাকে।
আরো পড়ুন>> লোভের ভয়াবহ পরিনাম জানলে বিস্মিত হবেন
মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর অসীম কুদরত ও অপার মহিমায় আকাশকে সুদৃশ্য ও মজবুত করে সৃষ্টি করেছেন এবং যথোপযুক্ত স্থানে স্থাপন করেছেন, যা হাজার হাজার বছরেও এতটুকু দুর্বল হয়নি বা ভেঙ্গে পড়েনি এবং তাতে কোন বিপর্যয়ও ঘটেনি। আকাশে যদি সামান্যতম বিশৃংখলা ঘটতো বা ভারসাম্যে তারতম্য দেখা দিতো তাহলে হয়ত পৃথিবীতে ভয়ানক বিপর্যয় দেখা দিত এবং এর অধিবাসীদের জীবন সংকটাপন্ন হতো। আর সৃষ্টির স্থিতি ও গতিতে ব্যত্যয় ঘটতো। কিন্তু এখানেই মহান স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য যে, তাঁর নিপূন সৃষ্টি-কুশলতায় এ বিশ্বজগত একই নিয়মে একই গতিতে পরিচালিত হয়ে চলেছে।
***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***