মুছা ও খিজির আ. এর ঘটনা | history of musa and khijir
bangla hadis | islamic post
মুছা ও খিজির আ. এর ঘটনা | bangla hadis | islamic post –
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা নবী করীম সা. হতে বর্ণনা করেছেন, একদিন হযরত মূসা আ. বনী ইসরাঈলদের মধ্যে ওয়াজ-নসীহত করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি অপেক্ষা বড় আলেম আর কেউ আছে কি? এবং সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে?
উত্তরে হযরত মূসা আ. বললেন, আমি সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী বা বড় আলেম। কারণ মূসা আ. নবী ছিলেন এবং দ্বীনের এলেম নবীদের সমান কারো হয় না, কিন্তু সরাসরি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করা আল্লাহ্ তায়ালা পছন্দ করলেন না। তাই আল্লাহ তা’য়ালা মূসা আ. এর প্রতি ওহী পাঠালেন “হে মূসা! পারস্য ও রোমের মধ্যবর্তী দু’নদীর মিলন স্থানে আমার বান্দাদের মধ্য আমার এমন এক বান্দা আছেন, যিনি তোমার অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী ও আলেম।
হযরত মূসা আ. আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, ইয়া আল্লাহ! কিভাবে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হতে পারে। আমাকে তা বলে দিন। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বললেন, তোমার থলির মধ্যে একটি ভাজা মাছ নিয়ে সফর কর। যে স্থানে গিয়ে ঐ মাছটি জীবিত হবে এবং তোমার কাছ থেকে নিখোঁজ হয়ে যাবে তার আশপাশেই আমার ঐ জ্ঞানী বান্দাকে পাবে।
অতঃপর হযরত মূসা আ. তাঁর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর সঙ্গী ও খাদেম হিসেবে ইউশা বিন নুনকে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং সঙ্গে করে থলিতে একটি ভাজা মাছ নিলেন হযরত মূসা আ. খাদেমকে বলে দিলেন, মাছটি নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথেই তুমি আমাকে খবর দিবে। খাদেম বলল, আপনি আমাকে বেশী কাজের দায়িত্ব দেননি।
তারপর তারা উভয়ই সমুদ্রের কিনারায় চলতে চলতে এমন এক স্থানে পৌঁছলেন, যেখানে একটি পাথর ছিল। সেখানে পৌছে তাঁরা উভয়েই পাথরের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। মাছটি জীবিত হয়ে থলি হতে নদীর মধ্যে লাফিয়ে পড়ল। আল্লাহ্ কুদরতে এ মাছটি নদীর পানিতে যতদূর চলল, পানির মধ্যে একটি ছিদ্র হয়ে গেল। খাদেম ভাবলেন, হযরত মূসা আ.-এর নিদ্রা ভঙ্গ করব না, আবার তারা ঘুম থেকে উঠে চলতে আরম্ভ করলেন।
আরো পড়ুন>> তাওবা করার উপকারিতা
দিন রাত চলে যখন ভোর হলো, তখন মূসা আ. খাদেমকে বললেন, এবার চলতে চলতে খুব ক্লান্তিবোধ করছি, এবার নাশতা আন, হযরত মূসা আ. মাছের ঐ ঘটনার পূর্বে কোন রূপ ক্লান্তি বোধ করেননি। যেহেতু মাছের ঘটনার স্থানটি আল্লাহ্র নির্দেশিত গন্তব্যস্থান ছিল। সে স্থান অতিক্রম করার পরই তাঁর ক্লান্তি বোধ হতে লাগল।
খাদেম বলল, হায়! আপনি তো কিছুই জানেন না । আমরা যখন পাথরের উপর মাথা দিয়ে শুয়েছিলাম, তখন মাছের এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমি তা আপনার নিকট বর্ণনা করতে ভুলে গেছি। শয়তানই হয়তো তা উল্লেখ করতে আমাকে ভুলিয়ে রেখেছে। খাদেম মাছের পূর্ণ ঘটনা বললেন, মাছের চলার পথে পানির মধ্যে ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে, এতে তাঁরা উভয়ই আশ্চর্যান্বিত হলেন।
আরো পড়ুন>> আল্লাহ কেন সূর্য সৃষ্টি করলেন?
মূসা আ. বললেন, এটাইতো সে স্থান, যে স্থানের খোঁজে আমরা বের হয়েছি। তারপর তারা পুনরায় উল্টা পথে ফিরলেন এবং সেই পাথরের বরাবর এসে দেখলেন, গভীর সমুদ্রের পানির উপর সবুজ রংয়ের মখমলের বিছানায় আল্লাহ্র এক বান্দা আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন।
হযরত মূসা আ. তাকে দেখতে পেয়ে সালাম করলেন। যেহেতু তিনিই খিযির আ.। সালাম শুনে হযরত খিযির আ. বললেন, এ জমিনে সালাম কোথা থেকে আসলো? উত্তরে তিনি বললেন, আমি মূসা আ.। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বনী ইসরাইলের নবী মূসা আ.? তিনি বললেন হ্যাঁ।
আরো পড়ুন>> সমুদ্রের অজানা রহস্য
অতঃপর মূসা আ. বললেন, আমি কি আপনার সাথে থাকতে পারি এ উদ্দেশ্যে যে, আপনার আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ জ্ঞান হতে আমাকে কিছু শিক্ষা দিবেন? তিনি বললেন, আপনি আমার সাথে চলতে পারেন, কিন্তু ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। কারণ আল্লাহ্ পাক আমাকে এমন এক প্রকার এলেম দান করেছেন যার রহস্য আপনি অবগত নন, এবং আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে অন্য প্রকার এলেম দান করেছেন যা আমি আপনার মতো তত জানি না।
অতঃপর মূসা আ. বললেন, আমি আপনার সাথে ধৈর্যধারণ করেই থাকব। আমি আপনার কোন কাজের বিরোধিতা করব না। তখন খিযির আ. মূসা আ. কে বলে দিলেন আপনি আমার নিকট কোন বিষয় জিজ্ঞেস করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি তা আপনার কাছে ব্যক্ত করি।
আরো পড়ুন>> কেন আমরা পর্দা করব?
তারপর তারা নদীর কিনারা ধরে চলতে লাগলেন। নদী পার হওয়ার জন্য তাদের কাছে কোন নৌকা ছিল না এবং পার হওয়ার জন্য কোন নৌকার সন্ধান পাচ্ছেন না, এমন সময় একটি নৌকা তাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, তাঁরা নৌকার মাঝির সাথে নদী পার করে দেয়ার জন্য আলাপ করলেন। নৌকার মাঝি খিযির আ.-কে চিনতে পেরে বিনা পয়সায় নদী পার করে দিবে বলে নৌকায় উঠালেন। নৌকা চলার সময় একটি চড়ুই পাখি নৌকার এক মাথায় এসে বসে সমুদ্রের মধ্য হতে একবার কি দু’বার তার ঠোঁট দিয়ে পানি পান করল।
হযরত খিযির আ. বললেন, হে মূসা! এ চড়ুই পাখিটি ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র হতে যতটুকু পানির অংশ এনেছে আমার ও আপনার সমস্ত এলেম আল্লাহ তা’য়ালার এলেমের তুলনায় ততটুকুও হবে না।
নৌকা যখন অপর তীরে ভিড়ল তখন খিযির আ. নৌকার একখানা তক্তা খুলে ফেললেন, এতে মূসা আ. সহ্য করতে না পেরে বললেন, এরা আমাদেরকে বিনা পয়সায় নৌকায় উঠিয়েছিল আর আপনি তাদের নৌকা ভেঙ্গে বা খুলে ফেললেন যাতে নৌকা তার যাত্রীদেরকে নিয়ে ডুবে যায়। এটা আপনি ভাল করেননি।
তখন খিযির আ. বললেন, আমি আগেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। হযরত মূসা আ. বললেন, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন। আমার অপরাধের জন্য আমাকে অবাধ্য মনে করবেন না। মূসা আ. এবার প্রকৃতভাবে ভুলে গিয়েছিলেন।
তারপর তারা পুনরায় পথ চলতে লাগলেন। একস্থানে গিয়ে তারা দেখলেন একটি সুন্দর চেহারার বালক অন্য বালকদের সাথে খেলাধুলা করছে। হযরত খিযির আ. উক্ত সুন্দর বালকটির মাথার খুলি উঠিয়ে মেরে ফেললেন।
আরো পড়ুন>> যুবকের দরূদ পড়ার আশ্চর্য ঘটনা
হযরত মূসা আ. বললেন, কোন কারণ ছাড়া আপনি একটি মাসুম বেগুনাহগার একটি বালকের জীবন শেষ করে দিলেন? আপনি বড়ই অন্যায় কাজ করেছেন। হযরত খিযির আ. বললেন, আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম, আপনি ধৈর্য রাখতে পারবেন না। এবার একটু শক্তভাবে বললেন। হযরত মূসা আ বললেন, তৃতীয়বার কিছু জিজ্ঞেস করলে আমাকে আর আপনার সাথে রাখবেন না । তখন আমারও আর কোন ওজর আপত্তি থাকবে না।
অতঃপর পুনরায় তারা পথ চলতে লাগলেন। তারা একগ্রামের অধিবাসীদের কাছে এসে পৌঁছলো এবং গ্রামবাসীদের কাছে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলেন কিন্তু গ্রামবাসীরা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারা ঐ গ্রামে দেখতে পেলেন একটি পুরাতন প্রাচীর ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে হযরত খিজির আ. প্রাচীরটি হাতে ধরে সোজা করার ন্যায় ইশারা করলেন, আল্লাহর কুদরতে সাথে সাথে সোজা হয়ে গেল।
তখন হযরত মূসা আ. বলে উঠলেন, গ্রামবাসীরা আমাদের মেহমানদারী করল না। অথচ আপনি ইচ্ছা করলে এ কাজের জন্য তাদের নিকট হতে পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন। তখন খিযির আ. পরিষ্কার বলে বসলেন, এবারই আপনার সাথে আমার চলাচল শেষ হলো, আপনি ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন এখন বিদায়।
এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে বা যা দেখে আপনি ধৈর্যহারা হয়েছেন, তার প্রত্যেকটির রহস্য আমি বলে দিচ্ছি শুনুন।
মাঝির নৌকার ব্যাপার হলো, ঐ দেশে এক স্বৈরাচারী জালেম বাদশাহ আছে, সে কোন ভাল এবং নিখুত নৌকা দেখলেই ছিনিয়ে নেয়। উক্ত নৌকার মাঝি অর্থাৎ মালিক অত্যন্ত গরীব, তাই আমি উক্ত নৌকার তখ্তা ভেঙ্গে খুতযুক্ত করে তা রক্ষার ব্যবস্থা করেছি।
তারপর ছেলে হত্যার রহস্য হল, ছেলেটি অনিবার্যরূপে কাফের হতে চলেছিল, অথচ তার মাতা-পিতা মুসলমান আমার ধারণা হল এ ছেলের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পিতামাতাও কাফের হয়ে যাবে। তাই আমার ইচ্ছা হল, আল্লাহ তা’য়ালা এ ছেলের পরিবর্তে তাদেরকে স্নেহের যোগ্য কোন নেক সন্তান দান করবেন।
আর দেয়াল সোজা করার রহস্য হল দেয়ালটির মালিক হলো দু’জন এতিম ছেলে। তাদের পিতা খুব পরহেজগার ছিলেন। তিনি তার ঐ শিশু দুটির জন্য কিছু ধন দৌলত ঐ দেয়ালের নীচে পুতে রেখে গিয়েছেন। আল্লাহ পাক চাহেন ঐ ধন-সম্পদ হেফাযত করতে, তাই আমি দেয়াল ঠিক করে তা হেফাযত করলাম । যাতে এতিম শিশুরা বড় হয়ে তাদের ঐ গুপ্ত সম্পদ বের করে নিতে পারে।
এ সমস্ত ঘটনার প্রতি আল্লাহ পাকের ইঙ্গিত ছিল। আমার ইচ্ছায় কিছুই করিরি। এটাই হলো উক্ত ঘটনাসমূহের রহস্য। উক্ত এলেম আপনার জানা ছিল না যার জন্য আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি। (ছহীহ্ বোখারী শরীফ-৯৬)
*** আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। (আমিন)***
*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।