হযরত উসমান রা. এর ব্যবসা | hazrat usman ra. er bebsa | islamic post

হযরত উসমান রা. এর ব্যবসা | hazrat usman ra. er bebsa

ইসলামিক পোস্ট

bangla hadis | islamic post

মদিনায় দুর্ভিক্ষ:

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর জমানায় একবার ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিযেছিল । খাদ্য শস্য না পাওয়ার  কারণে সাধারণ লোকজন ক্ষুদার্থ ও অসহায় হয়ে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন- হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ নিত্যদিন আমাদের হাহাকার বেড়েই চলছে। সেইজন্য আমাদের জীবন যাপনে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আপনি আল্লাহ তা’আলার দরবারে দোয়া করুন: মহান রব যেন  আমাদের উপর হতে এই বিপদ সরিয়ে নেয়। অথবা বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পক্ষে কি করা কল্যাণজনক হবে, তা নির্দেশ করুন। আমরা আপনার সকল কথা মানতে প্রস্তুত।


আবু বকর সিদ্দীক রা. এর পরামর্শ:

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বললেন- আপনারা বেশ  ভাল কথাই বলেছেন। আপনারা সকলে আগামী দিন ভোর বেলায় এখানে আসবেন; তখন আমরা সকলে মিলে মহান আল্লাহ্র দরবারে বিপদমুক্তির জন্য দোয়া করবো ।

হযরত ওসমান রা. এর আশ্চর্য আচরণ:

ঘটনাক্রমে ঐদিন রাতের বেলা হযরত ওসমান রা. এর ব্যবসায়ী মালা-মাল মদীনার বাহির হতে হাজার হাজার মন খাদ্য-শস্য ও তরি-তরকারী নিয়ে মদীনায় ফিরে আসলো। দুর্ভিক্ষের দিনে বিপুল পরিমাণ খাদ্য-শস্য আমদানী হয়েছে। এই খবর পরদিন ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সারা শহরে ছড়িয়ে পরে। ফলে, অগণিত লোকজন খাদ্য-শস্য ক্রয়ের উদ্দেশ্যে হযরত ওসমান রা. এর নিকট হাজির হলো। হযরত ওসমান রা. ক্রেতা ব্যক্তিদের কে জিজ্ঞেস করলেনঃ বর্তমান এই সময় আমার নিকট ব্যতিত মদিনায় অন্য কারো নিকট বিক্রি করার মত পর্যাপ্ত খবার নেই, এমতাবস্থায় আপনারা কি দামে আমার কাছ থেকে খাদ্য-শস্য কিনতে পারবেন? 

আরো পড়ুন>> আল্লাহর সাথে ব্যবসা

ওসমান রা. এর কথার উত্তরে লোকজন বলল: আমরা আপনাকে প্রতি ধড়া ১ টাকা হারে পরিশোধ করবো । তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন; আরও কিছু মূল্য বাড়াতে পারেন না? তাহারা বললঃ এর বেশি মূল্য দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। 


তখন হযরত ওসমান রা. বললেন, আমি আমার এই খাদ্য-শস্য তাকেই দিব, যে আমাকে প্রতি ধড়ার মূল্য ৭০০ টাকা দিবে ।

আরো পড়ুন>> হাদিসে বর্নিত কেয়ামতের আলামত


হযরত ওসমানের মুখে খাদ্য-শস্যের এই অসম্ভব মূল্যের কথা শুনে লোকজন হতাশ মনে ফিরে গেল । এই ঘটনার অল্প কিছুক্ষণ পরই তিনি সকলকে ডেকে এনে সমস্ত খাদ্য-শস্য তাদের মধ্যে বিনামূল্যে আল্লাহ্ ওয়াস্তে বিতরণ করে দিলেন ।


লোকজন আশ্চর্যান্বিত হয়ে ওসমান রা. কে জিজ্ঞাসা করল- হুযূর, একটু আগেই তো আপনি বললেন যে, ধড়া প্রতি ৭০০ টাকা মূল্য যে দিবে, আপনি তাকে এই শস্য দিবেন। অথচ এখন বিনামূল্যেই সকল খাবার বিলিয়ে দিলেন ! ইহার রহস্য কি?


তিনি বললেন- আমি আমার এই শস্য তাকেই তো দিয়েছি যিনি ১ এর বদলে ৭০০ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন । আমি বিশ্বাস করি, এক ধড়ার মূল্য আমি ৭০০টাকাই পাব।


ইবনে আব্বাস রা. এর স্বপ্ন ও আল্লাহর প্রতিদান:

এই ঘটনার দুইদিন পর হযরত ইবনে আব্বাস রা. স্বপ্নে দেখলেন: হযরত রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব তাড়াহুড়া ও ব্যস্ততার সহিত কোথাও যাচ্ছিলেন। রাসূল সা. কে দেখে ইবনে আব্বাস রা. খুব আনন্দিত হলেন এবং কিছুটা ব্যবধান হতে এই বলে আরজ জানালেন- ইয়া রাসূল আল্লাহ সা.! আমাদের মাঝে একটুখানি তারশরীফ রাখুন। অনেকদিন যাবৎ আাপনার সাক্ষাৎ লাভের আরজু পোষণ করে আসছি। তাছাড়া আপনার নিকট হতে কয়েকটি কথাও আমার জানার আছে । হযরত হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।


আরো পড়ুন>> কেন আমরা পর্দা করব?


আল্লাহ তা’আলা আমাকে ফরমাইলেন- হে আমার প্রিয় হাবীব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ওসমান (রাঃ) আমার রাস্তায় বিপুল পরিমাণ মাল ব্যয় করেছে, আর উহার বিনিময়ে আমি বেহেশতের মধ্যে কত কি নিয়ামত তার জন্য তৈরি করে রেখেছি, আপনি তা দেখে আসুন। সুতরাং আমি ঐ সব নিয়ামত দেখার জন্য যাচ্ছি। পথিমধ্যে তোমার সাথে আলাপ করতে গেলে আমার সেখানে পৌঁছিতে বিলম্ব হয়ে যাবে । 


সংক্ষিপ্ত নসিহত:

আল্লাহ তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল এবং সুধকে হারাম করেছেন।

(আল-কোরআন)

সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীর হাশর, নবীগণ, সিদ্দীকগণ ও শহীদগণের সাথে হবে।

(আল-হাদিস)

ব্যবসায়ীদের হাশর হবে পাপাচারদের সাথে, তবে যারা সৎ, মানুষকে ঠকায়না এবং ওজনে কম দেয় না তাদের ব্যাতিত।

(আল-হাদিস)


উপরোক্ত ঘটনা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ব্যবসা আমাদের জন্য হালাল। কিন্তু মিথ্যা বলে নয়, ওজনে কম দেওয়ার মাধ্যমে নয়, মানুষ কে ঠকিয়ে নয়। ব্যবসা করতে হবে সৎ ভাবে, আমাদের সৎ ব্যবসা পরিচালান মাধ্যমে যেন আমরা হাশরের ময়দানে নবী, সিদ্দীক ও শহীদগণের থাকতে পারি।


আরো পড়ুন>> যুবকের দরূদ পড়ার আশ্চর্য ঘটনা


হায়! আফছোস…., বর্তমানে ছোট বড় অনেক ব্যবসায়ী অস্থায়ী দুনিয়া উপার্যনের লোভে স্থায়ী পরকাল ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন পণ্য নিজেদের গোডাউনে জমা রেখে অধিক লাভের আশায় ক্রেতাদের নিকট বলেবেড়ায় উৎপাদন নেই, আমদানী নেই ইত্যাদি।


সেই জন্যে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কষ্টের বোঝা আরোও ভারি হয়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে তারা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। ফায়দা হয় শুধু এক শ্রেণীর মানুষের। তবে তারা দুনিয়াবাসীদের থেকে চালাকি করলেও মহান আল্লাহর কাছ থেকে রেহাই পাবেনা। তারা যতই ফন্দি করুক, মহান তাদের সব কিছু দেখেন এবং জানেন।


আমি জানি, আমার এই কথা তাদের পর্যন্ত পৌঁছবেনা, কিন্তু আমার দোয়া হয়তো পৌঁছবে। তাই দোয়া করি আল্লাহ যেন সকল কে হেদায়াত দান করেন।


*আল্লাহ আমাদের ওসমান রা. এর মাতো দান করার তৌফিক দিন (আমিন)*

***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply