আবু তালিবের ঘাটির কষ্টের বর্ণনা | abutaliber ghatir koster bornona | islamic post
নবুওয়াতের প্রথম দিক থেকেই রাসূল সা. মুসলমানদের নিয়ে খুবই কষ্টে জীবন যাপন
করতেন। মক্কার কাফেরেরা বিভিন্ন ভাবে জুলুম নির্যাতন করত। একপর্যায়ে কুরাইশদের সকল গোত্র এবং আশপাশের ছোট ছোট গোত্রগুলো মিলে মুসলমানদের সাথে সামাজিক বয়কট ঘোষনা করল। কেউ মুসলিমদের সাথে কোন প্রকার লেনদেন, বেচাকেনা, যোগাযোগ
ইত্যাদি কিছুই করতে পারবে না।
আবু তালিবের ঘাটি
অবশেষে রাসূল সা. এর নবুওয়াত প্রাপ্তির ৭ম বছর মুসলমানদের
জীবনে ঘটে যায়একটি মর্মান্তিক ঘটনা। নবীজি সা. ও তার ঈমানদার সাথীদের মক্কা থেকে বের হতে বাধ্য করল। মক্কার বাহিরে পাহাড়ের ঘাঁটিতে গিয়ে সকল মুসলমান আশ্রয় নিলেন।
এটি “আবু তালিবের ঘাঁটি” বা চৌহদ্দী নামে প্রসিদ্ধ ছিল। সেখানে মুসলমানদের সাহায্য-
সহযোগিতা , যোগাযোগ ইত্যাদির জন্য মক্কার একটি প্রাণীও যেন যেতে না পারে, সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হতো। স্বাভাবিক জীবন যাপনের কোন উপকরণ সেখানে ছিল না।
কঠিন পিপাসায় সবাই কাতর হয়ে যেত, লাগাতার অনাহারে তাদের স্বাস্থ্য ও মনোবল চরমভাবে ভেঙে যেতে লাগলো। দুধের বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে কান্নাকাটি করতো। তাদের এই কান্না দেখে আসমান–জমিন ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।
কিন্তু নিষ্ঠুর কুরাইশ কাফের সরদারের মনে এক মুহূর্তের জন্য মায়া হয়নি। তারা বরং মজা করে মুসলমানদের অসহায়ত্বের দৃশ্য অবলোকন করত। তাদের অন্তরগুলো এত পাষাণ ও কঠিন হয়ে গিয়েছিল যে, নিষ্পাপ শিশুদের বিলাপের দিকে তাকিয়েও মনে কোন প্রকার দয়া জন্মেনি । এই কঠিন অবস্থায় বয়কটে একটু শিথিলও করতে পারতো।
কিন্তু তারা তা করল না, বরং একবার হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা এর এক আত্মীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে পাহাড়ের ঘাটির দিকে রওনা হলে, নির্দয় কোরাইশ কাফেরের দল তাকেও আটকে দিয়ে বলল, অসম্ভব তোমাকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না। তারা মুসলমানদের খাবার তো দিলতোই না।
কেউ দিতে চাইলে তাকেও আটকে দিত, এমন মানবেতর জীবন যাপনের তিন তিনটি বছর কাটাতে হলো। সেই ত্যাগের ইতিহাস শুনে ও পড়ে উম্মত আজও আবেগে কান্না করে। অবশেষে মাজলুম মুসলমানদের জন্য আসল
আল্লাহর গায়েবি সাহায্য।
আল্লাহর গায়েবি সাহায্য
মহান রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন কুরাইশ কাফেররা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামাজিক বয়কট করে যে চুক্তিপত্র কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিল, তার পুরোটাই পোকায় খেয়ে ফেলেছে। শুধুমাত্র আল্লাহর নামটি বাকি রয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি তার প্রিয় চাচা আবু তালিবকে অবহিত করলেন। অতঃপর আবু তালিব কুরাইশ সর্দারকে গিয়ে বললেন, দেখো মোহাম্মদ বলেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে যুক্তিপত্রটি তোমরা কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিলে তার পুরোটাই পোকায় খেয়ে ফেলেছে, সেখানে শুধু আল্লাহ শব্দটি বাকি আছে । যদি তার কথা সত্য হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বয়কট তুলে নেওয়া
উচিত।
কুরাইশ সর্দার কাবা ঘরে গিয়ে দেখল, সত্যি পুরো চুক্তিপত্র পোকায় খেয়ে ফেলেছে। শুধু “আল্লাহ” শব্দটি যে অংশে লেখা ছিল সেটি খায়নি। তারা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার সত্যতা খুঁজে পেল, তখন মক্কার কাফেরদের মধ্যে ফাটল দেখা দিল, কুরাইশ সর্দারকে কেউ কেউ বলতে লাগলো। এই বয়কট আর দীর্ঘায়িত হতে দেয়া যাবে না।
আরো পড়ুন>> নবীজীর হাত থেকে পানির নহর
আমরা আমাদের রক্তের সম্পর্কের লোকজন, আত্মীয়-স্বজনদের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। নিষ্পাপ শিশুদের গগণবিদায়ী আর্তনাদ আর সহ্য করতে পারবো না। আমরা আরামে পেট ভরে খাব, আর তারা ক্ষুধার্ত-পিপাসার্ত থেকে অসহায় জীবন যাপন করবে এ হতে পারে না। এটা কোন মানুষ্যত্ব হতে পারেনা ।
আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর মক্কা বিজয়ের দিন
আমরা অবশ্যই তাদের সাথে দেখা-সাক্ষ্যাৎ করব। তারা
এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবে এবং সমস্থ সুযোগ সুবিধা গ্রহন করবে।
আরো পড়ুন>> রাসূলের প্রতি সাহাবীদের অনুসরণ
অতঃপর নবুয়তের ১০ বছর আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূল (সা.) ও তার
সাহাবীদেরকে সেই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তিদান করেছেন।
ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন কিছু জানতে:
Visit – https://www.rihulislam.com/
***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবের উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।