কোরআনে বর্ণিত ছামুদ জাতির ইতিহাস | history of chamud nation | islamic post
২৩। সামুদ সম্প্রদায় সতর্ককারীদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।
২৪। তারা বলেছিল আমরা কি আমাদেরই একজনের অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী ও বিকারগ্রস্থ রূপে গণ্য হব।
২৫। আমাদের মধ্যে কি তারই প্রতি উপদেশ নাযিল করা হয়েছে? বরং সে একজন মিথ্যাবাদী দাম্ভিক।
২৬। এখন আগামীকালই তারা জানতে পারবে কে মিথ্যাবাদী, দাম্বিক।
২৭। আমি তাদের পরীক্ষার জন্য এক উটনি প্রেরণ করব। তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখো এবং সবর করো।
২৮। এবং তাদেরকে জানিয়ে দেও যে, তাদের মধ্যে পানির পালা নির্ধারিত হয়েছে এবং পালাক্রমে উপস্থিত হতে হবে।
২৯। অতঃপর তারা তাদের সঙ্গীকে ডাকলো, সে তাকে ধরল এবং বধ করল।
৩০। অতঃপর কেমন কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
৩১।আমি তাদের প্রতি একটিমাত্র নিনাদ প্রেরণ করেছিলাম, এতেই তারা হয়ে গেল শুষ্ক শাখা পল্লব নির্মিত দলিত খোয়ারের নেই। (সূরা- ক্বমার, আয়াত- ২৩-৩১)
হযরত সালেহ আ. তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর এবাদতের আহ্বান।
৬১। সামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহকে প্রেরণ করি, তিনি বললেন: হে আমার জাতি, আল্লাহর বন্দেগী করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য নাই। (সূরা- হূদ, আয়াত- ৬১)
৪৫। আমি সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ভাই সালেহ কে এই মর্মে প্রেরণ করেছি যে তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। অতঃপর তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে প্রবৃত্ত হল।
৪৬। সালেহ বললেন; হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা কল্যাণের পূর্বে দ্রুত অকল্যাণ কামনা করছ কেন? তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছো না কেন? সম্ভবত তোমরা দয়া প্রাপ্ত হবে। (সূরা- নমল, আয়াত- ৪৫,৪৬)
৭৩। সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহ কে, সে বলল; হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি প্রমাণ এসে গেছে। এটি আল্লাহর উটনী তোমাদের জন্য প্রমাণ। অতএব একে ছেড়ে দাও আল্লাহর ভূমিতে চরে বেড়াবে। একে অসৎ ভাবে স্পর্শ করবে না। অন্যথায় তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাকড়াও করবে।
৭৪। তোমরা স্মরণ করো, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে সরদার করেছেন। তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। তোমরা নরম মাটিতে অট্টালিকা নির্মাণ কর এবং পর্বত গাত্র খনন করে প্রকষ্ঠ নির্মাণ কর। অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। (সূরা- আ’রাফ, আয়াত- ৭৩,৭৪)
সালেহ আ. এর আহ্বানকে তারা সম্প্রদায়ের প্রত্যাখ্যান।
৭৫। তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা ঈমানদার দরিদ্রদেরকে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি বিশ্বাস করো যে সালেহকে তার পালনকর্তা প্রেরণ করেছেন? তারা বলল আমরা তো তার আনীত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী।
৭৬। দাম্ভিকরা বলল তোমরা যে বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছ, আমরা তাতে অস্বীকৃত। (সূরা- আ’রাফ, আয়াত- ৭৫,৭৬)
৬২। তারা বলল হে সালেহ, ইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ করো ? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহ্বান জানাচ্ছ, আমাদের এতে এমন সন্দেহ রয়েছে যে, মন মোটেই সারা দিচ্ছে না। (সূরা- হূদ, আয়াত- ৬২)
উটনীর বর্ণনা।
৬৪। হে আমার জাতি! আল্লাহর এই উটনী তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করে খেতে দাও এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করবেনা । নতুবা অতিসত্বর তোমাদেরকে আজাব পাকড়াও করবে।
৬৫। তবু তারা উহার পা কেটে দিলো, তখন সালেহ বললেন; তোমরা নিজেদের গৃহে তিনটি দিন উপভোগ করে নাও ইহা এমন ওয়াদা যা মিথ্যা হবে না। (সূরা- হূদ, আয়াত- ৬৪,৬৫)
১৫৫। সালেহ বললেন এই উটিনী, এর জন্য আছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্য আসে পানি পানের পালা নির্দিষ্ট এক একদিনের।
১৫৬। তোমরা একে কোন কষ্ট দিও না, তাহলে তোমাদেরকে মহা বিপদের আজাব পাকড়াও করবে। (সূরা- শু‘আরা, আয়াত- ১৫৫,১৫৬)
১৩। অতঃপর আল্লাহর রাসূল তাদেরকে বলেছিলেন আল্লাহর উটনী ও তাকে পানি পান করানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকো।
১৪। অতঃপর ওরা তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং উটনীটির পা কর্তন করেছিল। তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের উপর ধ্বংস নাজিল করে একাকার করে দিলেন। (সূরা- শম্স, আয়াত- ১৩,১৪)
হযরত সালেহ আঃ কে তার সম্প্রদায় হত্যার পরিকল্পনা।
৪৮। আর সেই শহরে ছিল এমন একজন ব্যক্তি যারা দেশময় অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়াতো এবং সংশোধন করত না।
৪৯। তারা বলল, তোমরা পরস্পরে আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ করো যে, আমরা রাত্রিকালে তাকে ও তার পরিবারবর্গ কে হত্যা করব। অতঃপর তার দাবিদারদেরকে বলে দেবো যে, তার পরিবার বর্গের হত্যাকান্ড আমরা প্রত্যক্ষ করিনি আমরা। নিশ্চয়ই সত্যবাদী।
(সূরা- নমল, আয়াত- ৪৮,৪৯)
হযরত সালেহ আ. এর সম্প্রদায়ের ধ্বংসের বর্ণনা।
৭৮। অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকালবেলায় নিজ নিজ গৃহে উপর হয়ে পড়ে রইল। (সূরা- আ’রাফ, আয়াত- ৭৮)
৬৬। অতঃপর আমার আযাব যখন উপস্থিত হলো, তখন আমি সালেহকে ও তদিয় সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে উদ্ধার করি এবং সেদিনকার অপমান হতে রক্ষা করি। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা তিনি সর্বশক্তিমান পরাক্রমশালী।
৬৭। আর ভয়ঙ্কর গর্জন পাপিষ্ঠদের পাকড়াও করলো, ফলে ভোর হতে না হতেই তারা নিজ নিজ গৃহসমূহে উপর হয়ে পড়ে রইল।
৬৮। যেন তারা কোনদিনই সেখানে ছিল না। জেনে রাখো, নিশ্চয় সামুদ জাতি তাদের পালনকর্তার প্রতি অস্বীকার করেছিল। আরো শুনে রাখো, সামুদ জাতির জন্য অভিশাপ রয়েছে। (সূরা- হূদ, আয়াত- ৬৬,৬৭,৬৮)
সামূদ জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে, কওমে ছামূদ-এর প্রতি ছালেহ আ. নবী হিসাবে প্রেরিত হন। কওমে ছামূদ আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত অর্থাৎ সিরিয়ায়।
বর্তমানে তাকে ‘মাদায়েনে ছালেহ’ বলা হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানা রূপ প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান রয়েছে। হযরত ছালেহ আ. তাওহীদের দাওয়াত দিলেন।
আরো পড়ুন>> ঘুষ গ্রহণের ভয়াবহ পরিনাম
তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজাসহ যাবতীয় শিরক ও কুসংস্কার ত্যাগ করে এক আললাহর ইবাদত ও তাঁর প্রেরিত বিধান সমূহের প্রতি আনুগত্যের আহবান জানালেন। কওমের দুর্বল লোকেরা তাঁর উপরে ঈমান আনলেও শক্তিশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁকে অস্বীকার করে।
আরো পড়ুন>> বনি ইসরাইলের অবাক করা আচরন
হযরত ছালেহ (আঃ)-এর দাওয়াতে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রদায়ের নেতারা স্থির করল যে, তাঁর কাছে এমন একটা বিষয় দাবী করতে হবে, যা পূরণ করতে তিনি ব্যর্থ হবেন এবং এর ফলে তাঁর দাওয়াতও বন্ধ হয়ে যাবে। সেমতে তারা এসে তাঁর নিকটে দাবী করল যে, আপনি যদি আল্লাহর সত্যিকারের নবী হন, তাহ’লে আমাদেরকে নিকটবর্তী ‘কাতেবা’ পাহাড়ের ভিতর থেকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উটনী বের করে দেখান।
আরো পড়ুন>> কোরআনে বর্ণিত আদ জাতির ঘটনা
এ দাবী শুনে হযরত ছালেহ (আঃ) তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, যদি তোমাদের দাবী পুরণ করা হয়, তবে তোমরা আমার নবুওয়াত ও আল্লার প্রতি ঈমান আনবে কি-না? জেনে রেখ! তার পরেও যদি তোমরা ঈমান না আনো, তাহ’লে আল্লাহর গযবে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে’। সবাই উক্ত শর্তে অঙ্গীকার করল। তখন ছালেহ আ. আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ পাক তার দো‘আ কবুল করলেন।
আরো পড়ুন>> কোরআনে বর্ণিত ইব্রাহিম আ. এর ঘটনা
অতঃপর পাহাড় থেকে উটনী বের হয়ে আসলা। লোকেরা ও তাদের গবাদি পশুরা যে কুপ তেকে পানি পান করত, এ উষ্ট্রীও সেই কূপ থেকে পানি পান করত। উষ্ট্রী যেদিন পানি পান করত, সেদিন কূপের সব পানি পান করে ফেলত। অবশ্য ঐদিন লোকেরা উষ্ট্রীর দুধ পান করত এবং বাকী দুধ দ্বারা তাদের সব পাত্র ভরে নিত। কিন্তু এই হতভাগাদের কপালে এত সুখ সহ্য হ’ল না। উষ্ট্রী যখন চরে বেড়াত, তখন তার বিশাল দেহ দেখে অন্যান্য গবাদি পশু ভয় পেত। ফলে তারা উষ্ট্রীকে মেরে ফেলতে চিন্তা করল। কিন্তু একাজে কেউ সাহস করল না।
আরো পড়ুন>> রাসূলের প্রতি সাহাবীদের অনুসরণ
ছামূদ গোত্রের দু’জন পরমা সুন্দরী নারী, যারা ছালেহ আ. এর বিদ্বেষী ছিল, তারা তাদের রূপ-যৌবনের প্রলোভন দেখিয়ে দু’জন যুবককে উষ্ট্রী হত্যায় রাযী করালো। অতঃপর তারা তীর ও তরবারির আঘাতে উটনী টির পা কেটে হত্যা করে । ছালেহ আ. এর ভবিষ্যদ্বাণী ১ম দিন পর কওমের সকলের মুখমন্ডল গভীর হলুদ বর্ণ ধারণ করল। কিন্তু তারা ঈমান আনল না বা তওবা করল না।
আরো পড়ুন>> কোরআনে বর্ণিত ইউসুফ জুলেখা ইতিহাস
বরং উল্টা ছালেহ আ. ও তার পরিবারবর্গ কে হত্যা করার জন্য খুঁজতে লাগল। দ্বিতীয় দিন সবার মুখমন্ডল লাল বর্ণ ও তৃতীয় দিন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেল। তখন সবই নিরাশ হয়ে গযবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। চতুর্থ দিন সকালে ভীষণ ভূমিকম্প শুরু হ’ল এবং উপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন শোনা গেল। ফলে সবাই যার যার স্থানে ধ্বংস হয়ে যায়।
***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।
Click Amazing
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।