কোরআনে বর্ণিত ইব্রাহিম নবীর ইতিহাস | history of ibrahim nabi | islamic post

 

কোরআনে বর্ণিত ইব্রাহিম নবীর ইতিহাস | history of ibrahim nabi 

 

ibrahim a.

 

islamic history | islamic post

 

কোরআনে বর্ণিত ইব্রাহিম নবীর ইতিহাস | history of ibrahim nabi

১২৪। যখন ইব্রাহিমকে তার পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না। 

 

 

১২৫। যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম। আর তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা তোমার গৃহকে তাওয়াফকরী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।

 

 

১২৬। যখন ইব্রাহিম বললেন, পরওয়ারদেগার এই স্থানকে তুমি শান্তিদান কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে, তাদেরকে ফলের দ্বারা রিজিক দান করো। বললেন; যারা অবিশ্বাস করে, আমি তাদেরও কিছু দিন ফায়দা ভোগ করার সুযোগ দেবো, অতঃপর তাদেরকে বল্পয়োগে দোযখের আযাবে ঠেলে দেবো; সেটা নিকৃষ্ট বাসস্থান।

 

 

১২৭। স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ. কাবাগৃহের  বৃত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিল, পরওয়ারদেগার আমাদের থেকে কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী সর্বজ্ঞ। (সূরা- বাক্বারা, আয়াত- ১২৪- ১২৭)

 
 

৭৫। আমি এরূপভাবেই ইব্রাহিমকে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহ দেখাতে লাগলাম যাতে সে দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে যায়। 

 

 

৭৬। অনন্তর যখন রজনী অন্ধকারতার উপর সমাচ্ছন্ন হলো, তখন সে একটি তারকা দেখতে পেল, বলল ইহা আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হলো তখন বলল; আমি অস্তমিতদেরকে ভালোবাসি না।

 

 

৭৭। অতঃপর যখন চন্দ্রকে ঝলমল করতে দেখলো, বললো এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন বলল যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পদপ্রদর্শন না করে তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।

 

 

৭৮। অতঃপর যখন সূর্যকে চকচক করতে দেখল, বলল; এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতঃপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যে সব বিষয়কে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত।

 

 

৭৯। আমি এক মুখী হয়ে স্বীয় আনন ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিক নই।

 

 

৮০। তার সাথে তার সম্প্রদায়ের বিতর্ক করল। সে বলল; তোমরা কি আমার সাথে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে বিতর্ক করছো? অথচ তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। তোমরা যাদেরকে শরিক করো, আমি তাদেরকে ভয় করি না তবে আমার পালনকর্তাই যদি কোন কষ্ট দিতে চান। আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্তূকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন।  তোমরা কি চিন্তা করো না? (সূরা- আন’আম, আয়াত- ৭৫– ৮০)

 

 
 

 কাবা ঘরের ভিত্তি স্থাপন এর বর্ণনা।

 

 

kaba



 

১২৭। স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম ও ইসমাইল কাবা গৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল।  তারা দোয়া করেছিল; পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। 

 

 

১২৮। পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ বড় করো এবং আমাদের বংশধর থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু ।

 

 

১২৯। হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবে। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। (সূরা- বাক্বারা, আয়াত- ১২৭-১২৯)

 

 
 

 হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর গুণাবলী।

১২০। নিশ্চয়ই ইব্রাহিম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর আনুগত্য এবং তিনি শেরক কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।

 

 

১২১। তিনি তার অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিল এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। 

 

 

১২২। আমি তাকে দুনিয়াতে দান করেছি কল্যাণ এবং তিনি পরকালেও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।(সূরা-হিজর, আয়াত- ১২০- ১২২)

 

 
 

 ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর মেহমানদারীর বর্ণনা।

৫১। আপনি তাদেরকে ইব্রাহিমের মেহমানদের অবস্থা শুনিয়ে দিন। 

 

 

৫২। যখন তারা তার গৃহ আগমন করলো এবং বলল: সালাম। তিনি বললেন আমরা তোমাদের ব্যাপারে ভীত। 

 

 

৫৩। তারা বলল; ভয় করবেন না। আমরা আপনাকে একজন জ্ঞানবান ছেলে সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি।

 

 

৫৪। তিনি বললেন; তোমরা কি  আপনাকে সত্য সুসংবাদ দিচ্ছি, যখন আমি বার্ধক্যে পৌঁছে গেছি? 

 

৫৫। তারা বলল; আমরা আপনাকে সত্য সুসংবাদ দিচ্ছি অতএব আপনি নিরাশ হবেন না। (সূরা- হিজর, আয়াত- ৫১-৫৫)

 

 
 

২৪। আপনার কাছে ইব্রাহিমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?

 

 

২৫।  যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল; সালাম, তখন সে বলল; সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। 

 

 

২৬। অতঃপর সে ঘরে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ষ মোটা গোবৎস নিয়ে হাজির হলো। 

 

 

২৭। সেটি তাদের সামনে রেখে বলল; তোমরা আহার করছো না কেন? 

 

 

২৮। অতঃপর তাদের সম্পর্কে মনে মনে ভীত হলো, তারা বলল; ভীত হবেন না। তারা তাকে একটি জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সংবাদ দিল।(সূরা- যারিয়াত, আয়াত- ২৪- ২৮)

 

 
 

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম এর সম্প্রদায়ের ঘটনা।

৫১। আর আমি ইতিপূর্বে  ইব্রাহিমকে তার সৎপন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত ও ছিলাম। 

 

 

৫২। যখন তিনি তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বললেন, এই মূর্তি গুলো কি? যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছো? 

 

 

৫৩। তারা বলল; আমরা আমাদের বাপ দাদাকে এদের পূজা করতে দেখেছি।

 

 

৫৪। তিনি বললেন; তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছে এবং তোমাদের বাপ দাদারাও। 

 

 

৫৫। তারা বলল: তুমি কি আমাদের কাছে সত্য সহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুহল করছো? 

 

 

৫৬। তিনি বললেন; না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা।

 

 

৫৭। আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব। 

 

 

৫৮। অতঃপর তিনি সেগুলোকে চূর্ণ করে দিলেন। ওদের প্রধানটি ব্যতীত যাতে তারা তার কাছে প্রত্যাবর্তন করে। 

 

 

৫৯। তারা বলল;আমাদের উপস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করলো? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম।

 

 

৬০। কতক লোক বলল; আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি। তাকে ইব্রাহীম বলা হয়।

 

 

৬১। তারা বলল; তাকে জনসম্মুখে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখে। 

 

 

৬২। তারা বলল; হে ইব্রাহিম তুমি কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার করেছ?

 

 

৬৩। তিনি বললেন; না। এদের প্রদানই তো এই কাজ করেছে। অতএব তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তারা কথা বলতে পারে। 

 

 

৬৪। অতঃপর মনে মনে চিন্তা করল এবং বলল; লোক সকল, তোমরাই বে ইনসাফ। 

 

 

৬৫। অতপর তারা ঝুকে গেল মস্তক নত করে: তুমি তো জানো যে এরা কথা বলে না। 

 

 

৬৬। তিনি বললেন; তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকারও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না?

 

 

৬৭।  ধিক তোমাদের জন্য এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত কর ওদের জন্য, তোমরা কি বুঝ না? (সূরা- আম্বিয়া, আয়াত- ৫১-৬৭)

 

 
 

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামকে অগ্নিতে নিক্ষেপ।

২৪। তখন ইব্রাহিমের সম্প্রদায়ের এছাড়া কোন জবাব ছিল না। তারা বলল, তাকে হত্যা করো অথবা অগ্নিদণ্ড কর। অতঃপর আল্লাহ তাকে অগ্নি থেকে রক্ষা করলেন। (সূরা- আনকাবূত, আয়াত- ২৪)

 

 
 

হযরত ইসমাইল আলাইহিস সাল্লামকে কুরবানীর।

৯৯। সে বলল: আমি আমার পালনকর্তার দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন। 

 

 

১০০। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক সৎপুত্র দান করো। 

 

 

১০১। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। 

 

 

১০২। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম তাকে বলল; বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবাই করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখো। সে বলল: পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। 

 

 

১০৩। যখন পিতা পুত্র উভয়ের অনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তাকে জবেহ করার জন্য শায়িত করল। 

 

 

১০৪। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম; হে ইব্রাহীম।

 

 

১০৫। তুমি তো স্বপ্নকে সত্বে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের কে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

 

 

১০৬। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। 

 

 

১০৭। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু। (সূরা- ছাফ্ফাত, আয়াত- ৯৯- ১০৭)

 

 
 

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম এর পিতা আযর।

৪১। আপনি এই কিতাবে ইব্রাহিমের কথা বর্ণনা করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবী। 

 

 

৪২। যখন তিনি তার পিতাকে বললেন; হে আমার পিতা, যে শোনে না, দেখেনা এবং তোমার উপর কার আসে না, তার এবাদত কেন কর? 

 

 

৪৩। হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা তোমার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ কর। আমি তোমাকে সরল পথ দেখাবো। 

 

 

৪৪। হে আমার পিতা, শয়তানের এবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময় এর অবাধ্য। 

 

৪৫। হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময় এর একটি আজাব তোমাকে স্পর্শ করবে অতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে। 

 

৪৬। পিতা বলল, হে ইব্রাহিম তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরাইয়া নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।আরো পড়ুন>> কোরআনে বর্ণিত ছামুদ জাতির ঘটনা

 

 

৪৭। ইব্রাহিম বললেন; তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান। 

 

৪৮। আমি পরিত্যেগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমার আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত কর তাদেরকে। আমি আমার পালনকর্তার এবাদত করব। আশা করি আমার পালনকর্তার এবাদত করে আমি বঞ্চিত হব না। (সূরা- মারইয়াম, আয়াত- ৪১-৪৮)

 

 

নমরুদে এর বর্ণনা।

২৫৮। তুমি কি সেই লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বদানুবাদ করেছিল ইব্রাহিমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহিম যখন বললেন আমার পালনকর্তা হলেন, তিনি যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বললো, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহিম বললেন নিশ্চয়ই তিনি সূর্যকে উদিত করেন এবং পূর্ব দিকে থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে কাফের হতভম্ভ হয়ে গেল। আর আল্লাহ সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা- বাক্বারা, আয়াত- ২৫৮)

 

 
 

চারটি পাখির ঘটনা।

২৬০। আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহিম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে? বললেন; তুমি কি বিশ্বাস করো না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি কিন্তু দেখতে এজন্য চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখি ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে না, অতঃপর সেগুলোর দেহের এক একটি অংশ ভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাকো তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো,  নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমাশালী, অতি জ্ঞান সম্পন্ন। (সূরা- বাক্বারা, আয়াত- ২৬০)

 

 

 

 

ইব্রাহীম আ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী 

হযরত নূহ আ. এর ১১তম অধঃস্তন পুরুষ ইবরাহিম আ. দুজনের মাঝে প্রায় ২০০০ বছরের ব্যবধান ছিল। সালেহর আ. প্রায় ২০০ বছর পরে ইবরাহিম আ. এর ঘটে। ইবরাহীম আ. ইরাকের বসরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’ শহরে জন্মগ্রহন করেন। সেখানের রাজা ছিলে নমরুদ। নমরুদ প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করেন। ইবরাহিম আ. দেখলেন তার জাতি মূর্তি, নক্ষত্র ইত্যাদি পূজায় ব্যস্ত। তাদের কাছে আল্লাহর একত্ববাদ অকল্পনীয়। এ পরিস্থিতে ইবরাহিম আ. তাদের সত্যের দাওয়াত করলেন। কিন্তু তারা উপহাস ও অবাধ্যতা করল। জাতি তার কথায় কর্নপাত করল না।

 

হযরত ইব্রাহিম আ. এর পিতা আযর মূতি তৈরী করে তা বাজারে বিক্রি করতো। তিনি তার পিতাকে বল্লেন, মূতি-পূজা করা শিরক। এক আল্লাহর ইবাদত করুন। নিজের হাতে তৈরী করা করা মূর্তি আপনার কোন লাভ-ক্ষতি করতে পারবে না। দুনিয়া/আখেরাতের সফলতা পেতে হলে, আপনাকে অবশ্যই এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। এতে তার পিতা রাগ করে বলেনা; তুমি যদি এই মূতিগুলোর নিন্দা করতে থাক, তাহলে আমি তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করবো।

 

এরপরও তিনি সকলের নিকট দাওয়াত চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ইব্রাহিমের কথা রাজ-দরবার পর্য্যন্ত পৌছে। তখন রাজা উপাধি ছিল নমরুদ। সে নিজেকে খোদা দাবী করতো। নমরুদ চিন্তা করলো,যদি ইব্রাহিমের আ. দাওয়াত এভাবে চলতে থাকে, তাহলে রাজত্ব শেষ হয়ে যাবে। কাজেই নমরুদ ইব্রাহিম আ.কে হাজির করার জন্য বলেন।

 

নমরুদ নবীকে প্রশ্ন করলেন, কেন তুমি বাপ-দাদার ধর্মের বিরোধিতা ও আমাকে খোদা মানতে অন্বীকার করছো ? নবী বলেন, আমি এক আল্লাহর ইবাদৎ করি। নমরুদ বলল, তোমার খোদার এমন গুন বর্ননা কর যেটা আমার মধ্যে নাই ? নবী বলেন, আমার মহান আল্লাহ জীবন –মৃত্যুর মালিক। নমরুদ জীবন-মৃত্যুর মালিক একথা প্রমান করার জন্য রাজ-দরবারে একজনকে হত্যা করলো।একজন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মানুষকে তার দন্ড মাফ করে দিয়ে বলল্লো জীবন-মৃত্যু নমরুদের হাতে।নবী বলেন মহান আল্লাহ সূূর্যকে পূর্ব থেকে উত্তোলন করেন। তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে করে দেখাও।

 

একথায় নমরুদ হতবাক হয়ে পড়ল। নমরুদ অপমানে রাগান্বিত হয়ে উঠলো। যদিও তাদের কোন যুক্তি ছিলনা। কোন উপায় না পেয়ে, কাফেরগণ মিলে ইব্রাহীম আ. কে আগুনে জালিয়া দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলো। তখন আপন পিতা নবীর শত্রুতে পরিনত হল। একটা নির্দিষ্ট স্থান বাছাইয়ের পর নমরুদ আগুন জ্বালালেন। অতঃপর নবীকে আগুনে ফেলে দিলেন।

 

মহান আল্লাহ আগুনকে নবীর জন্য ঠান্ডা আরাম দায়ক হয়ে যেতে বলেন। আগুনের কুন্ড থেকে নবী বের হয়ে আসলেন। একমাত্র স্ত্রী সারা ও ভাতিজা লুত ছাড়া কেউ তার দাওয়াত গ্রহন করেনি। নবী অন্যত্র গিয়ে আল্লাহর বানী প্রচারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। ইবরাহীম আ নি:সন্তান ছিলেন।

 

একদিন ইবরাহীম আ. আল্লাহর কাছে একটি সন্তানের জন্য দোয়া করলেন। আল্লা নবীর দোয়া কবুল করলেন। হযরত হাজেরার গর্ভে হযরত ইসমাইলের জন্ম হলে। আল্লাহর আদেশে হযরত ইব্রাহিম (আ:) বিবি হাজেরা আর ইসমাইলকে নিয়ে বহুদূরে কাবা পাশের স্থানে ও জমজম কূপের বর্তমান স্থানে তাদেরকে রাখলেন। এটি ছিল অনাবাদী, জনবানব শূন্য, পানিবিহীন একটা জায়গা।

 

প্রান বাচানোর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর একটা জায়গা। হযরত ইব্রাহিম আ. সামান্য পানি ও খেজুর, বিবি হাজেরার পাশে রেখে,  আল্লার  ‍হুকুমে নবী সেখান থেকে চলে আসলেন। আল্লাহ তাদের জন্য সেখানে জমজম কূপ, খাবার ও জনবসতীর সৃষ্টি করলেন। ইব্রাহিম আ. রাতে স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহ বলছেন, তুমি তোমার একমাত্র পুত্রকে কুরবানী কর।

 

তিনি হযরত ইসমাইলকে(আ:) স্বপ্নের কথা ও আল্লাহর নির্দেশ বর্ননা করলেন।পুত্রের সম্মতি পেয়ে কুরবানি করার জন্য দু’জনেই গভীর জংগলের দিকে অগ্রসর হলেন। পিতা পুত্রের সম্মতি পেয়ে জবেহ করার জন্তুর মত পুত্রের হাত-পা বেধে, ছেলেকে কুরবানী করার জন্য উদ্যত হলেন।সাথে সাথে ওহী আসলো “হে ইব্রাহিম!তুমি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করে দেখায়েছ।

 

নি:সন্দেহে এটা বড় কঠিন পরীক্ষা ছিল।এখন ছেলেকে ছেড়ে দাও আর তোমার পাশে যে দুম্বাটি দাড়ানো আছে, সেটা কুরবানী কর।“ হযরত ইব্রাহিম (আ:) আল্লাহর শোকর আদায় করে, দুম্বা কুরবানী করলেন। মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম আ.কে কাবাতুল্লাহ নির্মান করার জন্য আদেশ করলেন।

 

তারা বাপ বেটা বাইতুল্লাহ তৈরীর কাজ শুরু করে দিলেন। ‘বাইতুল্লাহ’ নির্মিত হবার পর আল্রাহ ইব্রাহিমকে আ. বলেন,এটা ইব্রাহিমী ধর্মের কেবলা ও তার সামনে মাথা নত করার প্রতীক। সুতরাং ‘কাবাতুল্লাহ’কে তাওহীদের কেন্দ্র হিসাবে সাব্যস্ত করা হল। তখন উভয়েই দুয়া করলেন হে পরওয়ারদেগার, আমাদের বংশধর থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর। আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো।

 

নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী। তাদের মধ্য থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। ( যে দোয়ার ফল যার ফল আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সা.) যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি পরক্রমশালী হেকমতওয়ালা।

***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

 

Daily Visit –  https://rihulislam.com/

Leave a Reply