আকাশ থেকে খাবার আসার ঘটনা | asman theke khabar asa | islamic post

আকাশ থেকে খাবার আসার ঘটনা | asman theke khabar asa

islamic post

islamic post | bangla tafsir

history of jesus | islamic post | bangla tafsir –

হযরত মরিয়ম তাঁর হৃদয়ের টুকরা ও চোখের পুতুল শিশু ঈসা আ.– কে পরম যত্নে লালন-পালন করতে লাগলেন। যতদিন তিনি দোলনায় পালিত হচ্ছিলেন, ততদিন বনী ইস্রাঈলগণ তাঁর দোলনার কাছে এসে বসে যেত আর তিনি তাদেরকে তৌরাত পাঠ করে শুনাতেন। যখন তিনি বালেগ হলেন, তখন আল্লাহর তরফ হতে তাঁর উপরে অহী নাযিল হল যে, হে ঈসা! তুমি বনী ইস্রাঈল সম্প্রদায়কে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে থাক।


এ আদেশ মোতাবেক তিনি সেদিন হতে তাদেরকে আল্লাহর পথে চালিত হবার জন্য উপদেশ দিতে শুরু করলেন। বনী ইসাঈলগণ কিন্তু সবকিছু বুঝে শুনে তাঁর দাওয়াত ও উপদেশাবলী প্রত্যাখ্যান করল। তারা বলল, ঈসা! তুমি কি আমাদেরকে আমাদের পূর্ব-পুরুষদের ধর্ম বাদ দিয়ে তোমার প্রচারিত নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে বল? আমরা স্পষ্টতঃই বুঝেছি, তুমি নবুয়তের দাবী তুলে আমাদের উপর নিজের প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইছ; কিন্তু জেনে রেখ আমরা তেমন নির্বোধ নই ।


হযরত ঈসা (আঃ) তাদের কথা শুনে খুবই দুঃখিত হলেন। তারপর তিনি তাদের নিকট হতে শহর ছেড়ে গ্রামের পথে যাত্রা করলেন। গ্রামে পৌছে তিনি কতকগুলো লোককে কাপড় কাঁচতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কাপড় ধুইছ কেন? বরং তার পূর্বে তোমরা নিজেদের অন্তর পরিষ্কার করে লও। তারা বলল, হুযুর! কাপড় তো পরিষ্কার করি সাবান দ্বারা, কিন্তু অন্তর কি দিয়ে পরিষ্কার করব?


হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, তোমরা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ঈসা (আঃ) রুহুল্লাহ’ এ কলেমাটি পাঠ কর। এতেই তোমাদের অন্তর পরিষ্কার হবে।


তারা কলেমাটি পাঠ করে তাদের অন্তর পরিষ্কার করল। এরপর তারা অন্যান্য লোকদের কাছে গিয়ে তাদেরকে নিজ নিজ অন্তর পরিষ্কার করে নিতে অনুরোধ করল। এ লোকজনই হযরত ঈসা (আঃ)-এর হাওয়ারী বা সাহায্যকারী দলে পরিণত হল।

আরো পড়ুন>> বনি ইসরাইলের অবাক করা আচরন


এরপর হযরত ঈসা (আঃ) তথা হতে রওয়ানা হয়ে সমুদ্র তীরবর্তী জেলেদের নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন যে, তারা মাছ শিকার করছে। তিনি তাদের কাছে নিজের নবুয়তের কথা প্রকাশ করলেন। তারা শুনে বলল, নবীগণ অনেক অনেক অলৌকিক কার্য-কলাপ দেখিয়ে থাকেন। তুমি যদি নবী হয়ে থাক তবে তদ্রূপ কিছু প্রদর্শন করে নবুয়তের প্রমাণ দাও।


তাদের এ কথার জবাবে হযরত ঈসা (আঃ) যা বললেন তা পবিত্র কোরআনের ভাষায় এরূপ:

‘আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখী বানিয়ে তাতে ফুঁক দিব। তাতে আল্লাহর হুকুমে তা পাখী হয়ে উড়ে যাবে। আর আল্লাহর হুকুমে আমি জন্মান্ধকে চক্ষুষ্মান করতে পারি, কুষ্ঠ রোগীকে নিরোগ করতে পারি। মৃতকে জীবিত করতে পারি, আর তোমার ঘরে কি খেয়েছ, ও কি কি রেখেছ তাও বলে দিতে পারি, যেন, এ তোমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে যায়। অবশ্য যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর আমার হাতে তৌরাত যা কিছু এসেছে, তা আমি স্বীকার করি এবং তার হারামকৃত কোন কোন জিনিস আমি তোমাদের জন্য নিদর্শন নিয়ে এসেছি, অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও তাঁর অনুগত হও।


আকাশ থেকে খাবার অবতরন :

জেলেগণ বলল, হে মরিয়মের ছেলে ঈসা! তোমার প্রভু কি আসমান হতে আমাদের জন্য খানার খাঞ্চা পাঠাতে পারবেন? তিনি বললেন, – ঈমান আনতে ইচ্ছুক হও এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর।


তারা বলল, আমাদের ইচ্ছা হল, আমরা আসমানের খানা খেয়ে আমাদের মনকে বুঝিয়ে লই। আর তার সাথে জেনে লই যে, তুমি আমাদেরকে সত্য কথাই বলছ এবং আমরা এবিষয়ে সাক্ষী হয়ে থাকব।

আরো পড়ুন>> লোভের ভয়াবহ পরিনাম জানলে বিস্মিত হবেন


এরপর হযরত ঈসা (আঃ) ময়দানে গিয়ে অনাবৃত মাথায় উর্ধদিকে হাতোত্তলনপূর্বক দোয়া করলেন, হে আমার প্রতিপালক! তুমি মহাজ্ঞানী ও চরম দর্শক। আমার প্রিয় লোকজন যা চাইছে, দয়াপূর্বক তা দান করে বাধিত কর।


তখন ফেরেশতা জিব্রাঈল এসে শুনিয়ে দিলেন, আল্লাহতায়ালা বলছেন যে, তোমরা যা চেয়েছ, আমি তা তোমাদের জন্য নাযিল করছি। অবশ্য যে অকৃতজ্ঞ হবে তাকে আমি এরূপ শাস্তি প্রদান করব যে, তদ্রূপ শাস্তি কেউ কোনদিনই ভোগ করেনি।

আরো পড়ুন>> কোনআনে বর্ণিত ঈসা নবীর ইতিহাস


এর পর নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য পরিপূর্ণ একখানা খাঞ্চা আসমান হতে অবতীর্ণ হল। তার ঢাকনা তুলে দেখা গেল, তাতে পাচখানা রুটি ও একটি বড় ভুনা মাছ রয়েছে। এছাড়া কিছু তরকারী, পাঁচটি আনার, কিছু খোর্মা, কয়েকটি জলপাই । কিছু লবণ ও আরও কতিপয় খাদ্যদ্রব্য রয়েছে।


এ আশ্চর্য কোন ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই চারদিক হতে অসংখ্য লোক এসে তথায় সমবেত হল। তারা সবকিছুই দেখল, কিন্তু কেউ কিছুই আহার করল না। তাদের সন্দেহ হল যে, এ যাদুঘটিত ব্যাপারও তো হতে পারে। তখন তারা বলল, হে ঈসা! তোমার অলৌকিক ক্ষমতাবলে তুমি এ ভুনা মাছটিকে জীবিত করে দেখাও তো দেখি।


হযরত ঈসা (আঃ) কিছু দোয়া পাঠ করে মাছটির উপরে ফুঁক দিলেন । আল্লাহর হুকুমে তখনই তা জীবিত হয়ে সমবেত লোকদের মধ্যে এমন প্রবল বেগে লাফিয়ে পড়ল যে, তাতে সঙ্গে সঙ্গে সত্তরজন লোক নিহত হল এবং আহত হল আরও বহুসংখ্যক। হযরত ঈসা (আঃ) মাছটির উপর আবার একটি দম করল, তা আবার ভুনা মাছে পরিণত হল।

আরো পড়ুন>> তাওবা করার উপকারিতা


এরপর হযরত ঈসা (আঃ) উক্ত খাঞ্চা হতে খাদ্য নিয়ে সকলের সামনে খেতে বসলেন। কিছু গরীব ও অক্ষম লোককেও ডেকে তাঁর সাথে আহারে বসালেন। অর্থশালী— ধনী লোকজন শরীক না হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখতে লাগল। যে সকল গরীব লোকেরা তা আহার করল, তারা ধনী হয়ে গেল; আর যারা রোগী ও দুর্বল ছিল তারা সুস্থ ও সবল হল। পরক্ষণেই অনেকেই তা খেতে আরম্ভ করল। সারাদিন ধরে বহুলোক তা আহার করল তারপর খাঞ্চাখানা আকাশে উঠে গেল। যারা ঐ খাদ্য খেল না, পরে তারা খুবই অনুতাপ করল। মহান আল্লাহ তায়ালার মর্জীতে পরদিন আবার উক্ত খাঞ্চাখানা আসমান হতে নেমে আসল। সেদিন ধনী- দরিদ্র নির্বিশেষে প্রায় সত্তর হাজার লোক পেট ভরে খানা খেল। কিন্তু খাঞ্চার খাদ্য পূর্বানুরূপই রয়ে গেল। এভাবে পরপর তিনদিন আসমান হতে খানার খাঞ্চা আসা-যাওয়া করল এবং প্রত্যেকেই তৃপ্তি সহকারে আহার করল।


বনী ইস্রাঈলগণ হযরত ঈসা (আঃ)-এর এ অলৌকিক ক্ষমতা দেখে বিস্ময়াভিভূত হল এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই তখনই তাঁর প্রতি ঈমান আনল। যারা ঈমান আনল না তাদের মধ্যে কারও আকৃতি শূকরের মত হয়ে গেল। পক্ষান্তরে, যারা ঈমান আনল, তাদের ‍প্রতি নানাভাবে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে লাগল।


***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply