আবু জেহেল কেন নবীজীকে ভয় পেত? | ‍abu jehel keno nobijike voy peto? | islamic post

 আবু জেহেল কেন নবীজীকে ভয় পেত? | ‍abu jehel keno nobijike voy peto?

ইসলামিক পোস্ট

islamic post | islamic hisyory

আবু জেহেল কেন নবীজীকে ভয় পেত? | islamic post | islamic hisyory –

ঐতিহাসিক ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন-

একবার একটি গ্রাম্য লোক কিছু উট নিয়ে মক্কা নগরীতে আসল। আবু জেহেল তার থেকে উটগুলো খরিদ করে নিল। যখন সে উটের মূল্য চাইল তখন আবু জেহেল তা পরিশোধ করতে টালবাহানা শুরু করল। সেও হাল ছাড়ে না, আবু জেহেলের মনও গলে না। এমনি করতে করতে কয়েকদিন পার হয়ে গেল।


অবশেষে নাছোড় বান্দা লোকটি অতিষ্ট হয়ে হেরেমে চলে আসল। সেখানে কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় লোকজন বসা ছিল। সে তাদের কাছে অভিযোগ পেশ করল। তখন তারা বলল, আমরা কিছুই করতে পারব না।


ঐ সময় হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরেমের একপাশে বসা ছিলেন। তারা হুযূরের দিকে ইশারা করে বলল, তুমি তার কাছে যাও সেই তোমাকে সাহায্য করবে। গ্রাম্য লোকটি হুযূরের সামনে উপস্থিত হয়ে আগাগোড়া ঘটনা বর্ণনা করল।


ঘটনা শুনে হুযূর লোকটিকে সাথে নিয়ে সোজা আবু জেহেলের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। এই অবস্থা দেখে কুরাইশদের নেতারা খুব খুশী হলো। আজ খুব মজা হবে এই মনে করে তারা একজনকে লোক হুযুরের পেছনে পাঠিয়ে দিল যেন সে এসে পুরা ঘটনার বর্ণনা দিতে পারে।

আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর স্বপ্নের বর্ণনা


এদিকে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু জেহেলের বাড়িতে পৌঁছে আওয়াজ দিলেন। আবু জেহেল ভেতর থেকে জওয়াব দিল কে? হুযূর বললেন, ‘মুহাম্মদ’। এ কথা শুনে অস্থির হয়ে সঙ্গে সঙ্গে আবু জেহেল বের হয়ে আসল।


আবু জেহেলকে দেখেই হুযূর বললেন;

এ লোককে তার উটের মূল্য পরিশোধ করে দিন আবু জেহেল ভেতরে গেল এবং বিনা বাক্যব্যয়ে গ্রাম্য লোকটিকে তার মূল্য দিয়ে দিল। এ অবস্থা দেখে কুরাইশ নেতাদের পক্ষ থেকে পাঠানো লোকটি হেরেমের দিকে দৌড়ে গেল। সে সরদারদের বিস্তারিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলতে লাগল।


হায় আল্লাহ! আজ আমি যা দেখেছি তা কেউ কখনো দেখেনি। আবু জেহেল যখন ঘর থেকে বের হলো, তখন মুহাম্মদকে দেখেই তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আর মুহম্মদ যখন বলল লোকটির টাকা আদায় করে দাও, তখন মনে হলো আবু জেহেলের ধড়ে প্রাণ নেই।

আরো পড়ুন>> এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন


এই অবস্থায় উমাইয়া ইবনে খালফ এবং অন্যান্য মুশরিকরা আবু জেহেলকে তিরস্কার করল। তাকে লজ্জা দিয়ে বলল, ‘তুমি মুহাম্মদের সামনে এমন অসহায়ের মতো আচরণ করেছ। সন্দেহ হচ্ছে যে, তুমি মুহাম্মদের দলে ভিড়ে যাচ্ছ।’


তখন আবু জেহেল দেবতাদের কসম খেয়ে বলল,

আমি কোনোদিন মুহাম্মদের অনুসারী হব না। কিন্তু আমি দেখেছি, ডানে এবং বায়ে বল্লম নিয়ে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছিল বরং আমি নিশ্চিত ভাবেই বুঝতে পারছিলাম যে, আমি যদি তার হুকুমের সামান্য খেলাফ করি, তাহলেই তারা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।


কাজী আবুল হাসান ‘ইলাউন নবুওত’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন,

আবু জেহেলের লালন-পালনে একজন এতিম ছিল। একদিন সেই এতিম বালকটি তার কাছে আসল। পরনের কাপড় ছিল ছেঁড়া। প্রয়োজন মেটানোর জন্য পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে কিছু চাইল। কিন্তু আবু জেহেল তার দিকে ভ্রুক্ষেপই করল না। ছেলেটি নিরাশ হয়ে হেরেমে আসল এবং সেখানে উপস্থিত কুরাইশদের নিকট কান্নাকাটি করে তার অভিযোগ জানাল। তখন কুরাইশরা ঠাট্টাচ্ছলে হুযূরের দিকে ইশারা করে ছেলেটিকে বলল,

আরো পড়ুন>> সাপ দ্বারা রাসূল সা. কে সাহায্য


‘ঐ যে দেখছ, ঐ লোকটির কাছে যাও । সেই আবু জেহেলের থেকে তোমার হক আদায় করে দেবে।’ ইয়াতীম ছেলেটি কুরাইশদের কথার মারপ্যাচ বুঝতে না পেরে সরল মনে হুযূরের দরবারে উপস্থিত হলো এবং পুরা ঘটনা খুলে বলল। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৎক্ষণাৎ তাকে সাথে নিয়ে আবু জেহেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে ডাকলেন। আবু জেহেল বেরিয়ে এসে হুযূরকে অভ্যর্থনা জানাল। হুযূর ইয়াতীমের হক আদায় করতে বললেন। সাথে সাথে আবু জেহেল ভেতরে গেল এবং অসহায় ইয়াতীমের সমুদয় মাল তাকে ফিরিয়ে দিল।


এই ঘটনায় মুশরিকরা আবু জেহেলকে তিরস্কার করে বলল যে, সেও মুহাম্মদের ষড়যন্ত্রে ফেসে গিয়েছে। মুহাম্মদের ভক্ত হয়ে গিয়েছে। তার কথামতোই কাজ করে।


আবু জেহেল দেবতাদের কসম খেয়ে বলল,

আমি আমার ধর্মত্যাগ করিনি। মুহাম্মাদের ভক্তও হইনি। কিন্তু আমি দেখলাম যে, মুহাম্মদের ডানে বামে কতগুলো বল্লম উদ্যত হয়ে আছে। যদি আমি তার কথার সামান্য বিরোধিতা করি, তাহলে তা আমার শরীরে বিধে যাবে।’

আরো পড়ুন>> নবীজীর হাত থেকে পানির নহর


এই সমস্ত ঘটনায় পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, আবু জেহেলের মতো ইসলামের কট্টর দুশমন পর্যন্ত হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উন্নত চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের ছটায় কত প্রভাবিত ছিল। এই অবস্থা শুধু আবু জেহেলেরই ছিল না বরং অন্যান্য কাফের এবং ইসলামের দুশমনদের অবস্থা এর ব্যতিক্রম ছিল না।


এই কারণেই দেখা যায় যে কুরাইশদের সরদাররা হেরেমের ভেতর নামায আদায় করা থেকে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাঁধা দিতে পারেনি এবং প্রকাশ্যে কোরআন শরীফ পাঠ থেকেও বিরত রাখতে পারেনি।


অথচ এর দুটির কোনোটাকেই তারা সহ্য করতে পারত না। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যতীত অন্য কোনো মুসলমান এই দুটির কোন একটি করারও সাহস পেতেন না। কেউ যদি দুঃসাহস দেখাতেন তাহলে কঠিন শাস্তি তার জন্য অবধারিত ছিল। এর কারণ ছিল হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্বের শক্তিশালী প্রভাব যা তাঁকে আল্লাহ তাআলা মু’জিযাস্বরূপ দান করেছিলেন।


*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।


Leave a Reply