ইসলামে মায়ের মর্যাদা | islame mayer morjada | islamic post

ইসলামে মায়ের মর্যাদা | islame mayer morjada

ইসলামে মায়ের মর্যাদা

bangla hadis | islamic post

ইসলামে মায়ের মর্যাদা | islame mayer morjada | islamic post


ইসলামে মায়ের মর্যাদা-

হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় আলকামা নামক এক ব্যক্তি ছিল। সে ছিল অত্যান্ত পরহেজগার ও দানশীল লোক। একবার সেই কোন এক প্রকার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। তখন  তার স্ত্রী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে, নিবেদন করিলেন,


ইয়া রাসূলুল্লা ! (সা.) আমার স্বামী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার অবস্থা দেখলে মনে হয়, হয়তো তার অন্তিম সময় চলে এসেছে। অতএব, হুজুর দয়া করে তার জন্য কিছু দোয়া-দরূদ বলেদিন, (যা  আমল করলে তার ঈমানের সহিত মৃত্যু হওয়ার সৌভাগ্য লাভ হবে।) 

x

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হযরত আলী, হযরত সালমান, হযরত আম্মার ও হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম কে বলিলেন; “তোমরা গিয়ে দেখো তো আমার আলকামার কি অবস্থা?”


রাসূল সা. এর নির্দেশ অনুসারে তারা  হযরাত আলকামা রা. এর  বাড়িতে গেলেন এবং তার নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে কালেমা ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করতে বললেন। কিন্তু তার জবান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে কালেমা উচ্চারণ করতে সক্ষম হচ্ছিল না। কোন কথাই সে উচ্চারণ করতে পারল না। 

 

এই অবস্থা দেখে হযরত আলী রা. ও অন্যদের প্রবল ধারণা হলো যে, আলকামা মৃত্যু পথের যাত্রী এবং তার কথা বলার শক্তি রহিত হয়ে গেছে। তখন হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে আলকমার অবস্থা অবগত করানোর জন্য হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূল সা. এর খেদমতে পৌঁছে আলকামার অবস্থার বিবরণ দিলেন। আর বললেন; আমরা তাকে কালেমা পাঠ করাতে খুব চেষ্টা করেছি কিন্তু সে কিছুতেই উচ্চারণ করতে পারছে না। 


নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন যে, আলকামার পিতা-মাতা জীবিত আছে কি না? বলা হল; তার পিতার মৃত্যু হয়েগেছে কিন্তু তার মাতা জীবিত আছেন, তবে খুবই বৃদ্ধা ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তখন তিনি হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে বলিলেন আলকামার মায়ের নিকট আমার সালাম পৌঁছে দাও এবং তার মাকে জিজ্ঞাসা কর যে, তিনি আমার নিকট আসতে পারবে কি না? যদি এখানে আসার শক্তি তার থাকে তবে তুমি সঙ্গে তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসো। আর যদি আসতে আপারগ হয় তবে আমি নিজেই তার নিকট যাব। 


হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আলকামার মায়ের নিকট রসূল সা. এর সালাম পৌঁছালেন এবং রসূল সা. এর নিকট যাওয়ার মত শক্তি তার কাছে আছে কিনা জানতে চাইলেন? আলকামার মা এই খবর শুনে বলে উঠলো। নবীজির জন্য আমার জান কুরবান, আমি নিজেই তার পাক কদমে হাজির হবো। এই বলে বৃদ্ধা লাঠিতে ভর করে কোন মতে ছেচরাইয়া রসূলের খেদমতে হাজির হয়ে সালাম আরজ করিলেন।


তিনি সালামের জবাব দেওয়ার পর বৃদ্ধা কে বললেন, আপনার পুত্র আলকামা কি রকম লোক তা বলুন এবং সত্য কথা বলুন কোন মিথ্যা বলবেন না, যদি মিথ্যা বলেন; তাহলে আমি বুঝতে পারবো। কারণ আমার নিকট ওহী নাজিল হয়। ওহীর মাধ্যমে সত্য বিষয় আমাকে জানানো হবে। 


অতঃপর বৃদ্ধা বলল; আমার ছেলে আলকামা বড়ই চরিত্রবান, এবাদতগুজার ও রোজাদার ব্যক্তি, আর দানশীল হিসেবে তো এই যুগের অদ্বিতীয় লোক। হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন এই সব গুণ আছে বুঝলাম, কিন্তু আপনার সঙ্গে তার আচার ব্যবহার কি রকম?  বৃদ্ধা বললেন হুজুর, আমি তাহার উপর অত্যান্ত নাখোশ আছি। সে আমার সঙ্গে বহু  দুর্ব্যবহার করেছে এবং তার স্ত্রীকে আমার উপর কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য দিয়ে আমাকে তার তাবেদার বানিয়েছে। এই জন্য আমি তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট, ইহা ছাড়া অভিযোগ করার মত অন্য কোন দোষই তার নাই। 


এই কথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইলেন, মায়ের নারাজির কারনেই তার জবান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাসূল সা. বললেন; আপনি আপনার সন্তান  আলকামাকে ক্ষমা না করলে তার কালিমা নসিক হবে না। কিন্ত তিনি বললেন, আমি তাকে ক্ষমা করবো না।  


অতঃপর, তার মায়ের মুখে এ কথা শুনে রাসূল সা.  হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে হুকুম দিলেন অনেকগুলি জ্বালানি কাঠ জমা করে উহাতে আগুন ধরাও। সেই আগুনে আলকামা কে পোড়াতে হবে। ইহা শুনে আলকামার মা বলতে লাগলেন হুজুর আমার পুত্র আমাদের দেহের একটা টুকরা। তাকে আমার চোখের সামনে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে।  ইহা আমি কিভাবে বরদাশ করব? আমি কেমন করে ধৈর্য ধারণ করব? 


আলকামার মায়ের কাতরস্বরের  এই কথাগুলো শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলিলেন- ”ওগো, আল্লাহর আজাব ইহার চাইতেও কঠিন। আপনার পুত্র কঠোর আজাবে ভুগিবে। ইহা যদি আপনার অপছন্দ হয়, তবে তার ব্যাপারে আপনার মনে যে কষ্ট রয়েছে তা ভুলে যান।

আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর মেরাজ সফর


তাকে মাফ করে দিন এবং তার উপর স্বীয় সন্তুষ্টের কথা ঘোষণা করুন। তা না হলে আমি আল্লাহর পাক জাতের কসম করিয়া বলিতেছি, আপনার পুত্রের ফরজ কিংবা নফল, কোন নামাজই কবুল হবে না এবং অন্যান্য যত এবাদত বন্দেগী সে করেছে তাকে আল্লাহ হতে  রক্ষা করতে পারবে না।” 

আরো পড়ুন>> এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন


প্রণপ্রিয় পুত্রের  দুর্গতির কথা শুনে, আলকামার মা বললেন; ইয়া রাসুলুল্লাহ, সা. আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তাহার উপর খুশি হয়ে গেলাম।” 

আরো পড়ুন>> হযরত আলীর হত্যাকারীর শাস্তি


অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে হুকুম দিলেন, এবার গিয়ে দেখো আলকামার কি অবস্থা? হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঘরের দরজায় পৌঁছে শুনতে পাইল আলকামা জোরে জোরে কালেমা ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করতেছে। 

আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর স্বপ্নের বর্ণনা


মোট কথা, ঐ দিনই আলকামার ইন্তেকাল হলো। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বাড়িতে তাসরিফ আনিলেন এবং মাইয়াতের গোসল দিবার ও কাফন পড়াবার হুকুম দিলেন। অতঃপর তার দাফন কার্য শেষ হলে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কবরস্থানে দাঁড়িয়ে সমবেত আনসার ও মুজাহিদদের সম্বোধন করে বললেন, ”হে মুজাহিদ ও আনসারগণ! যে ব্যক্তি মায়ের তুলনায় স্ত্রীকে শ্রেষ্ঠ মনে করে তার উপর আল্লাহর লানত। তাহার ফরজ কিংবা নফল কোন নামাজ কবুল হইবে না।” 


সংক্ষিপ্ত নসিহতঃ-

এই জন্যই পিতা-মাতার খেদমত ও তাজিম করা, সন্তানের একান্ত কর্তব্য। যে সন্তান তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার নামাজ, রোজা বা অন্য কোন এবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। বাস্তবিকই, পিতা-মাতার খেদমত করী সন্তানের দুনিয়া এবং আখেরাত, উভয় জগতেই মুখ উজ্জ্বল হবে। 


*আল্লাহ্ আমাদের সকলকে পিতা-মাতার খেদমত করার তৌফিক দান করুন (আমিন)।

 ***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply