কে সেই ইমাম মাহদী? | who is imam mahdi?
যুগে যুগে ইমাম মাহদী দাবীদার
ইতিহাস সাক্ষ্য দিতেছে যে হযরত নবী করীম সা. -এর ইন্তেকালের পর ইমাম মাহদী হওয়ার দাবীদার বহুলোকের আবির্ভাব এই পৃথিবীতে ঘটিয়াছে এবং ঘটিতেছে। প্রকৃত মাহদীর আত্মপ্রকাশের পূর্বে বহুলোক মিথ্যা মাহদী সাজিয়া মানুষের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি করিতেছে।
তন্মধ্যে (১) মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, (২) সিরিয়ার এক বিভ্রান্ত যুবক, (৩) বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশালের জনৈক ভণ্ড মাওলানা, (৪) দক্ষিণ ইয়েমেনের একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী, (৫) ইরানে জনৈক শিয়া নেতা এবং (৬) ১৪০০ হিজরীর শুভলগ্নে পবিত্র কাবাগৃহ দখলকারী জনৈক মোহাম্মদ নামধারী যুবক ভণ্ড মাহদী রূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছিল।
তাদের শেষ পরিণতি:
কিন্তু তাহাদের কাহারও পরিণাম সুখের হয় নাই। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পায়খানায় পড়িয়া প্রাণ হারায়। সিরিয়ার বিভ্রান্ত যুবকটিকে বিষাক্ত বিচ্ছু কামড়াইতে কামড়াইতে হত্যা করে। ভণ্ড মাওলানাটি পেশাব-পায়খান চাটিতে চাটিতে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। বস্ত্র ব্যবসায়ীটিকে কুকুরে ছিড়িয়া কাড়িয়া উদনস্ত করে। শিয়া নেতাটি গুলীবিদ্ধ হইয়া প্রাণ হারাইয়াছে বা মাহদীর দাবী বিস্মৃত হইয়া পলায়ন করিয়াছে। অনুরূপভাবে ভণ্ড নবী দাবীদারগণের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মন্তুদ হইয়াছিল। সুতরাং পৃথিবীর এই ক্রান্তিলগ্নে প্রকৃত মাহদীর পরিচয় জানিয়া রাখা প্রতিটি মুমিন বান্দার অবশ্য কর্তব্য। প্রিয় পাঠক ও পাঠিকাগণ! আসুন আমরা এই দিকে দৃষ্টিপাত করি।
-কে সেই ইমাম মাহদী ? | bangla hadis | islamic post-
ইমাম মাহদীর মাতৃ-পিতৃ পরিচয়:
হযরত নবী করীম সা. ইরশাদ করিয়াছেন, যে ইমাম মাহদী রাসূলুল্লাহ সা.-এর বংশে এবং খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমাতুজ জোহরার (রাঃ) আওলাদের মধ্য হইতে আবির্ভূত হইবেন। তাহার মাতা পিতা বংশ সূত্র হযরত হাছন (রাঃ)-এর সহিত মিলিত হইবে।
আরো পড়ুন>> কেয়ামত কখন হবে ?
ইমাম মাহদীর শারীরিক বিবরণ:
তাহার শারীরিক গঠন ও অঙ্গাবয়ব একটু লম্বা ধরনের হইবে। যে কোন দলে বা যে কোন কাতারে দাড়াইলে তাহাকে সকলের ঊর্ধ্বে দেখা যাইবে। তাহার গায়ের রং খুবই উজ্জ্বল হইবে এবং শরীর হইবে নিখুঁত ও ছিমছাম। তাহার মুখমণ্ডলে একটি বিশেষ নূরের জ্যোতি বিকশিত থাকিবে। নাসিকা উন্নত ও চেহারা সুগঠিত হইবে। তাহা ছাড়া তাহার চেহারা হযরত নবী করীম সা. -এর চেহারার অনুরূপ হইবে এবং তাহার আদব-আখলাক রাসূল সা.-এর আখলাকের অনুরূপ হইবে। (মুসলিম ও আবু দাউদ)
ইমাম মাহদীর নাম পরিচয়:
তাহার নাম হইবে মোহাম্মদ। পিতার নাম হইবে আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম হইবে আমেনা। তাহার মুখে সামান্য তোতলামী জড়তা থাকিবে। এইজন্য কথা বলিবার সময় তাহার একটু কষ্টবোধ হইতে থাকিবে এবং কোন কোন সময় উক্ত কষ্টের দরুন তিনি বিরক্ত হইয়া স্বীয় উরুর উপর হাত মারিবেন। (আবু দাউদ)
ইমাম মাহদীর শিক্ষা জীবন:
ইমাম মাহদী নিয়মিতভাবে কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা বিশ্ব বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শিক্ষা করিবেন না। এমনকি কোন সামরিক প্রশিক্ষণও তিনি কোন সামরিক একাডেমী হইতে গ্রহণ করিবেন না। তাহার ‘এলমে লাদুন্নী’ অর্থাৎ খোদাপ্রদত্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান থাকিবে। নিয়মিত কোন পাঠশালায় যোগদান না করিয়াও তিনি অগাধ জ্ঞান-গরীমা ও মনীষার অধিকারী হইবেন। ভূগোল, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্প, কৃষি, সাহিত্য, চারু ও কারুকলা, প্রকৌশল বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, সমর বিজ্ঞান, অস্ত্রচালনা, সৈন্য পরিচালনা, বক্তৃতা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি প্রভূত জ্ঞান ও বিবেচনার অধিকারী হইবেন। পৃথিবীর সর্ব বিষয়ের জ্ঞানের আধাররূপে তিনি আবির্ভূত হইবেন। (সারাংশ মেশকাত ও আবু দাউদ)
আরো পড়ুন>> ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন
ইমাম মাহদীর বাল্য, কৈশোর ও যৌবন:
দুস্তর আরব মরুর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি বাল্যকাল অতিবাহিত করিবেন। ছাগল ও মেষ চরান এবং উট নিয়ন্ত্রণ করার মত কাজ তাহাকে কখনও কখনও করিতে হইবে। এই সকল কাজের ভিতর দিয়া তিনি ধৈর্য, সহনশীলতা ও কর্তব্যপরায়ণতার শিক্ষা লাভ করিবেন।
যখন তিনি কৈশোরে পদার্পণ করিবেন তখন কৃষি কাজ ছাড়াও আরব উপদ্বীপে বিভিন্ন অঞ্চল তিনি আপনমনে পরিভ্রমণ করিবেন। বিশেষ করিয়া দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল, দুস্তর মরুভূমি, নির্জন সমুদ্র সৈকতে বিচরণ করিতে তিনি আনন্দ বোধ করিবেন।
তাহার যৌবন লাভের পর নিকটাত্মীয় বা দূরতমক প্রতিবেশীদের নজরের বস্তু হিসাবে তিনি পরিগণিত হইবেন না, তাহাকে অযোগ্য ও বুদ্ধিহীন এবং উপার্জন করিতে আক্ষম ভাবিয়া কেহই তাহার সহিত বন্ধুত্বের যোগসূত্র স্থাপন করিতে আগ্রহী হইবে না।
আরো পড়ুন>> যে যুদ্ধের ইতিহাসে এখনো মানুষ আশ্চর্য
এই নিঃসঙ্গতার ভিতর দিয়াই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান আহরণ করিতে থাকিবেন। আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে সর্ববিষয়ের উপযুক্ততা তাহার মধ্যে ফুটিয়া উঠিতে থাকিবে। পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মাদীনা শরীফেই তিনি অধিক সময় অতিবাহিত করিবেন। কিন্তু তাহার চল্লিশ বৎসর পরিপূর্ণ হওয়ার আগে কেহই তাহাকে চিনিতে পারিবে না।
বিশ্বের শক্তিশালী জাতিসমূহ যেমন- খৃষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী, পৌত্তলিক, সমাজতন্ত্রী ইত্যাদি শক্তি-সামর্থ্য, জ্ঞান- বিজ্ঞান সম্বন্ধে তিনি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের দ্বারা ওয়াকেফহাল হইবেন। কখন, কোথায়, কিভাবে কেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে, তাহার কার্যকারণ সম্বন্ধে তিনি পরিপূর্ণ সচেতন থাকিবেন। এই জ্ঞানোন্নত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হিসাবে তিনি পরিবর্ধিত হইবেন। (সারাংশ: লুমআত ফতহুল বারী-কিতাবুল ফেতান)