ঘুষ গ্রহণের ভয়াবহ পরিনাম | hgus grohoner voyaboho porinam | bangla tafsir

ঘুষ গ্রহণের ভয়াবহ পরিনাম | hgus grohoner voyaboho porinamইসলামী ইতিহাস

bangla tafsir | islamic post

ঘুষ গ্রহণের ভয়াবহ পরিনাম | hgus grohoner voyaboho porinam | bangla tafsir


আল্লাহ তালার বাণী–

= فمثله كمثل الكلب – ان تحمل عليه  يلهث او تتركه يلهث=


বাংলা তরজমা:-

“ফলে তাহার ( অর্থাৎ বাল্‌আমের ) অবস্থা কুকুরের মত হইয়া গেল। কুকুরের উপর তুমি বোঝা তুলিয়া দিলেও সে হাঁপাইতে থাকে, আর উহাকে (এমনিতে) ছাড়িয়া দিলেও সে হাপাইতে থাকে। (পারা নং- ৯, সূরা- আ’রাফ, আয়াত- ১৭৬ এর অংশ)


আয়াতে কারিমার আংশের তাফসীর:

এই আয়াতের তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করিয়াছেন যে, শাম দেশে বালআম ইবনে বাউরা নামক একজন নেতৃস্থানীয় আলেম ছিলেন। বাইতুল মুকাদ্দাস এর নিকটবর্তী কেনানের বাসিন্দা ছিলেন।


কোন কোন বর্ণনা মতে সে ছিল বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের একজন লোক। ফেরাউন যখন নীল দরিয়ায়  ডুবে ধ্বংস হয়ে গেল এবং হযরত মুসা আলাইহিস সালাম মিশর জয় করলেন। তখন বনী ইসরাঈলের প্রতি হযরত মুসা আলাই সাল্লাম এর নেতৃত্বে কওমে জব্বারিনদের সাথে জিহাদ করার আদেশ অবতীর্ণ হলো।


উক্ত আদেশে জাব্বারিন সম্প্রদায়ের লোকেরা ভীত সন্তুষ্ট হয়ে  দলবদ্ধভাবে বালআম ইবনে বাউরার নিকট গমন করে এবং তার কাছে দোয়া করার আবেদন করিল যে, আল্লাহ পাক যেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর সৈন্য বাহিনীকে আমাদের  সাথে মোকাবেলা হতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। 


বালআম ইবনে বাউরার “ইসমে আজম” জানা ছিল, ( ইসমে আজম )  ইহা দ্বারা যেই দোয়াই করিতো সব দোয়াই  কবুল হইতো। অতঃপর জাব্বারিন সম্প্রদায়ের লোকদের কথা শুনে বালআম ইবনে বাউরার  বলিল, হায় আফসোস! তিনি তো আল্লাহর নবী।


তাহার শহীদ আল্লাহর ফেরেশতাগণও রয়েছেন। কিভাবে আমি তার বিরুদ্ধে বদ দোয়া করতে পারি? এর পরিণামে তো  আমার দিন দুনিয়ার সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। 


তারা যখন হাল না ছেড়ে, বার বার আবদার করল, তখন সে বলল আচ্ছা আমি আল্লাহর নিকট হতে এই ধরনের দোয়া করার অনুমতি নিয়ে নিচ্ছি। অতঃপর সে ইস্তেখারা বা কোন  এক প্রকার আমল করল। উহার উত্তরে তাহাকে হেদায়েত দেয়া হল যে, সে যেন কিছুতেই এরূপ না করে।


অতঃপর সে তাদের কে বলে দিল যে, আমাকে বদদোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। একথা শুনে জাব্বারীন কওমের লোকেরা নিজেদের মাঝে পরামর্শ করে,  বালআম ইবনে বাউরার জন্য নিজেদের মধ্য থেকে  মাল-সম্পদ সংগ্রহ করে, লোকেরা তার নিকট বড় ধরনের হাদিয়া পেশ করলেন।


পকৃতপক্ষে সে মাল  ছিল ঘুষ। সম্পদের লোভ সামলাতে না পেরে  বালআম  উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করল। ওই লোকগুলো তার পিছনে লাগে থাকলো। অন্যদিকে বালআমের বিবি ও তাকে উক্ত ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছিল। ফলে সেই স্ত্রী ও মালের মহব্বতে অন্ধ হয়ে গেল এবং হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও বনি ইসরাঈলের বিরুদ্ধে বদ দোয়া শুরু করল। 


ওই সময় আল্লাহপাকের অপার কুদরতের এক আশ্চর্য মহিমা প্রকাশ পেল যে, সে তার মুখে হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম ও তাহার বাহিনীর বিরুদ্ধে যত রকম বদ দোয়া করিতো তা হযরত মুসা আলাই সাল্লাম ও এর বাহেনীর বিরুদ্ধে না হয়ে সব ঐ জাব্বারিন কওম এর বিরুদ্ধে বাহির হতে লাগলো।


ফলে লোকেরা চিৎকার  করে  উঠল এবং বলল যে, হে বালআম তুই তো আমাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করিতেছিস। তখন বালআম বলল; আমার জবান যে আমার আয়ত্তের বাহিরে চলে গিয়েছে। উহার পরিণতি এই হইল যে, আল্লাহর পক্ষ হতে ধ্বংসশীলা  কওম কে গ্রাস করল। 


আর বালআমের উপর এই অপরাধের কারনে আজাব চলে  আসল যে, তার জিব্বা লম্বা হয়ে তার বুকের উপর ঝুলে পরল। মহান আল্লাহ সেই আযাবের সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে বর্ণনা করেছেন।


অতঃপর বালাম বলিল, হে আমার কওম! হে আমার সম্প্রদায়! আমার তো দুনিয়া আখেরাত সবই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবে আমি তোমাদেরকে এমন একটি কৌশল বলে দিচ্ছি যাহা দ্বারা তোমরা মূসা আলাইহিস সালাম ও তার বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করতে পারবে।

আরো পড়ুন>> হযরত উসমান রা. এর ব্যবসা


তা এই যে, তোমাদের সুশ্রী-সুন্দরী মেয়েদের কে সুন্দর করে সাজিয়ে মূসা আলাইহিস সালাম এর বাহিনী অর্থাৎ বনি ইসরাইলের লস্করদের মধ্যে পাঠিয়ে দাও। তারা মুসাফির, বহুদিন যাবত ঘরের বাহিরে আছে। এই কৌশলের ফাঁদে পরে তরা যদি সুশ্রী মেয়েদের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে  তাহাদের উপর আল্লাহর কহর ও আজাব নাজিল হবে। তখন কিছুতেই তারা বিজয়ী হতে পারবেনা।


অতঃপর বালআমের এই শয়তানি ফন্দি বনি ইসরাঈলের পছন্দ লাগল। যার ফলে বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি অপকর্মের শিকার হল। হযরত মুসা আলাই সাল্লাম বিরত রাখার জন্য অনেক বুঝিয়েছেন কিন্তু সে মানেনি। ইহার পরিণামে তাদের উপর কঠিন আজাব অবতীর্ণ হলো এবং ৭০ হাজার বনি ইসরাইল মারা গেল। অতঃপর তাদের উভয়কে কতল করে শিক্ষা লাভের জন্য সকলের দর্শনীয় এক স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে সকলে তওবা করে, তখন এই আজাব মাহান আল্লাহ উঠিয়ে নিলেন।


সংক্ষিপ্ত নসিহতঃ-

লোভ মানুষ কে ধ্বংশ করে দেয়। সেটা অনেক প্রকার হতে পারে ১। মালের লোভ, ২। নারীর লোভ, ৩। সম্মানের লোভ, ৪। গাড়ি, বাড়ি, দুনিয়া ইত্যাদির লোভ। এই সমস্ত লোভ একজন মানুষকে অমানুষে রূপান্তরিত করতে পারে। যার ফলে তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয় ধ্বংস হয়ে যায়। লোভে পরে মানুষ অনেক সময়, অপরাধ কে অপরাধ মনে করে না। হারাম কে হারাম মনে করে না। সে চায় সব কিছু নিজের করে নিতে, কিন্তু একটি বারের জন্যও ভাবে না যে,

আরো পড়ুন>> জান্নাত পাওয়া ৪টি কাজ


আমি কিসের পিছনে দৌড়াচ্ছি? কি আমার অস্থিত্ব এবং কোথায় আমার গন্তব্য? কার জন্য হালাল-হারাম জাচাই-বাছাই না করে গাঘার মত খেটে যাচ্ছি? শেষ বিদায় বেলা কি বা কারা আমার সঙ্গী-সাথী হবে? তখন এই সম্পদ আমার কি উপকারে আসবে? অথবা আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ দ্বারা তার মৃত্যুর পর কি উপকার পাচ্ছে? আমিই বা আমার সন্তানদের দ্বারা কি আশা করতে পারি?


***আল্লাহ আমাদের সকল কে হেদায়াত নসিব করুন (আমিন)***


***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।


Leave a Reply