ডাকাত দলের হেদায়াত পাওয়া | dakat doler hedayet paoya | islamic post

 ডাকাত দলের হেদায়াত পাওয়া | dakat doler hedayet paoya

ডাকাত দলের হেদায়াত

islamic history and culture | islamic post

ডাকাত দলের হেদায়াত পাওয়া | dakat doler hedayet paoya | islamic post


ডাকাত দলের হেদায়াত পাওয়া:-

একবার এক ডাকাত দল ঘটনা ক্রমে কোন এক শহরে গিয়ে পৌঁছলো। শহরের লোকেরা যেন তাদের পরিচয় না পায় এবং তারা কারো নিকট ধরা না পরে সে  বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সতর্কতার সহিত চলার সিদ্ধান্তে পৌঁছল। তবে নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করবে।


তৎসম্পর্কে দলের সরদার বলল; তোমরা সকলে দরবেশ সেজে নাও। সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করল, সরদার তা কিরূপ করে সাজবো? সরদার জবাব দিল; নিজেদের সব কয়টি জামা কাপড় রঙ্গাইয়া লও এবং হাতে এক ছড়া তসবি লইয়া সর্বক্ষণ সুবাহানাল্লাহ, সুবাহানাল্লাহ, জপতে থাকো। যেখানেই যাও না কেন সুবাহানাল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু উচ্চারণ করিও না। 



এই পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সকলে দরবেশী বেশ ধারণ করল। শহরের এক পান্তশালায় গিয়ে আস্তানা গাড়ল এবং সর্দারকে কেন্দ্র করে দলের অন্যান্যরা তার চারদিকে ঘিরে বসল। আর সরদার নিজেও লম্বা এক ছড়া তসবি হাতে নিয়ে দলীয় লোকদের আবেষ্টনীর মাঝে বসে পড়লেন।  সুবাহান আল্লাহ ছাড়া কারো মুখে অন্য কোন কথা নাই। 



এভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই সাড়া শহরে সংবাদ ছড়িয়ে পরল যে, অমুক পান্থনিবাসে মস্ত বড় একজন দরবেশের আগমন হয়েছে। যার মুখে আল্লাহর জিকির ছাড়া আর কিছুই উচ্চারিত হয় না। 



শহরের লোকেরা দূর-দূরান্ত হতে তাদের নিকট ভক্তিভরে সেই দরবেশের সাথে ’মুসাফা’ করতে  এবং নিজ নিজ মকছুদ পূর্ণ হওয়ার জন্য দোয়ার আবেদন জানাতে লাগলো। এইভাবে শহরের সব জায়গায় দরবেশের শুনাম শুখ্যাতি ছড়িয়ে পরলো।


একদিন সেই শহরের বাদশা স্বয়ং একদা লোক-লস্কর সঙ্গে নিয়ে দরবেশের আস্তানায় এসে হাজির হলেন এবং অত্যন্ত বিনীতভাবে দরবেশের সমীপে আরজ করলেন; হুজুর, মেহেরবানী করিয়া আপনি আমাদের এই শহরে পদার্পণ করায় আমরা আনন্দিত ও নিজেদেরকে খুবই গৌরবান্বিত মনে করছি। কেননা, আপনার আশীর্বাদের অংশ আমরাও লাভ করিব। হুজুর, অনুগ্রহ করে আপনার সঙ্গীদের সকলকে নিয়ে আমার দরিদ্রালয়ে আজিকার দাওয়াত কবুল করুন। 

আরো পড়ুন>> ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন


দরবেশ বিনা দ্বিধায় দাওয়াত কবুল করলো, যথাসময়ে সাঙ্গ পাঙ্গদের সাথে নিয়ে বাদশার বাড়িতে উপস্থিত হল। বাদশার একমাত্র পুত্র-সন্তান দীর্ঘদিন যাবত প্যারালাইসিস রোগে ভুগছিল। সম্ভাব্য সকল রকম চেষ্টা সত্ত্বেও তার চিকিৎসা হয় নি।

আরো পড়ুন>> সত্যিই কি চাঁদ দ্বিখন্ডিত?


দরবেশের আহার-পর্ব সমাপ্ত হলে, বাদশা দরবেশের নিকট সবিনয় নিবেদন জানালেন, হুজুর আপনি আল্লাহর দরবারে মকবুল; দয়া করে আমার এই প্যারালাইসিস গ্রস্ত ছেলেটির জন্য দোয়া করুন। যাতে আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন। এই ছেলেটি ছাড়া আমার আর কোন সন্তান সন্ততি নেই, যাকে দেখে আমি নিজেকে শান্তনা দিব।

 আরো পড়ুন>> যে যুদ্ধের ইতিহাসে এখনো মানুষ আশ্চর্য 


বাদশার এই করুন ফরিয়াদ শুনে দরবেশ সাহেব স্বীয় সঙ্গীদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়ার জন্য হাত উঠালেন এবং নিতান্ত আজেযী ও কাকুতি মিনতির সাথে এই বলে ফরিয়াদ করল: ”আয় মেরা পরওয়ারদেগার! আমরা সকলেই যদিও গোনাহ্গার, কিন্তু তোমারই সৃষ্ট বান্দা।

আরো পড়ুন>> বৃদ্ধার মুখে রাসূলের মুজিযার বর্ণনা


লোকেরা ভক্তি বিশ্বাস নিয়ে আমাদের দোয়া ভিক্ষা চায়, তাই আপনার এই কয়েকজন গোনাহগার তোমার দরবারে হাত উঠিয়েছি। তোমার দরবার ছাড়া আর কোথায় আমরা কাদিব?


তুমি দয়া করিয়া আমাদের ইজ্জত রক্ষা কর।” এই বলে সকলে অজর নয়নে আল্লাহর দরবারে কাঁদতে লাগলো। দরবেশ বেশি ডাকাত দলের এই করুন কান্না দেখে রহমতে এলাহীর অকৃল সমুদ্র উথলে উঠল। তাহাদের দোয়া শেষ না হতেই করুণাময় বাদশার দীর্ঘদিনের প্যারালাইসিস গ্রস্ত ছেলে  সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠলো। 



আল্লাহ তায়ালার অভাগকরা করুণা দেখে দরবেশ মনে মনে বলতে লাগল; আমরা নিজেদের আসল পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্যে ভন্ড দরবেশ সেজেছিলাম, আর ইহাতেই এমন ফল লাভ হলো! আমাদের দোয়ায় আল্লাহ এতো কিছু করলেন!


সুতরাং যদি খানি অন্তরে আল্লাহকে সন্তুুষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমরা জিকির-আজকার করতাম এবং সত্য-সত্যই আবেদ হতে পরতাম, তবে না জানি কতই না ফায়দা হইত! এসব কথা ভাবিতে ভাবিতে মাতালের মতো হয়ে আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বনি তুলে শহর হতে দূরে এক নিরব স্থানে খাঁটি দিলে মহান আল্লাহর ইবাদাত ও বন্দেগীতে মাশগুল হয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দিলেন। বর্ণিত আছে যে, ঐ দলের সকলেই ওলীয়ে কামেল হয়ে ইন্তেকাল করেন। 


সংক্ষিপ্ত নসিহত:-

জীবনে চলার পথে ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, প্রকাশ্যে, গোপনে, ছোট, বড়, অনেক ধরনের গোনাহ্ আমাদের দ্বারা হয়ে যায়। অনেক সময় কিছু কিছু গুনাহে আমরা অভ্যস্থ হয়ে যাই। যার ফলে আমরা আমাদের জীবন কে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাই। হেদায়াতের রাস্তা থেকে অনেক দূরেসরে যাই।


তবে আমাদের উচিত সর্বদা কোন না কোন ভাবে নিজেদের কে ভালো কাজের সঙ্গে জরিয়ে রাখা। কখনো কোন প্রকার ভালো কাজের  ‍সুযোগ আসলে হাত ছাড়া না করা। কেননা, আমরা জানিনা আমাদের কোন কাজটি মহান প্রভুর নিকট পছন্দ হয়ে যাবে, এবং তিনি আমাদের হেদায়ায়াত দান করে কবুল করে নিবেন।


***আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়াত দান করুন (আমিন)***


***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

3 Comments

Leave a Reply