দাজ্জালের পরিচয় জেনে আতংকিত হবেন | dajjal somporke janun | bangla hadis

দাজ্জালের পরিচয় জেনে আতংকিত হবেন | dajjal somporke janun

dajjal

bangla hadis | islamic post


দাজ্জালের জন্ম রাসূল সা. এর যমানাতেই হয়েছিল। হাররার যুদ্ধের পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আল্লাহ পাক তাকে মহাসমুদ্রের কোন এক গুপ্ত দ্বীপে আবদ্ধ রেখেছেন। যখন তার আত্ম-প্রকাশের সময় হবে, তখন সে খোরাসান হতে বের হয়ে সমস্ত পৃথবী, চল্লিশ দিনের মধ্যে সফর করবে এবং যেখানে যাবে সেখানেই সে নরহত্যা ও ব্যাপক লুটতরাজ করবে। কিন্তু সে মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করিতে পারিবে না।


ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইহুদী তাহার অনুসরণ করবে। সে আনেক অলৌকিক কাণ্ড দেখাবে । এমনকি সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে এবং তাহার কপালে কাফের শব্দ লেখা থাকিবে।


দাজ্জালের পিতা-মাতা:হযরত আবু বাকারাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূল সা. এরশাদ করেন- দাজ্জালের পিতা-মাতা সন্তান বিহীন ত্রিশ বৎসর অতিবাহিত করবে। তারপর তাদের একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। তার চক্ষু নিদ্রা যাবে কিন্তু তার হৃদয় নিদ্রা যাবে না।

তারপর হযরত রাসূল সা. আমাদের নিকট তার পিতা-মাতার বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, তার পিতা-মাতার দেহ হবে দীর্ঘ, মাংস হবে চোখা, তার নাসিকা হবে চঞ্চু সদৃশ। তার মাথা হবে স্থূলকায় এবং হস্তদ্বয় হবে দীর্ঘ।

হযরত আবু বাকারহ (রাঃ) আরও বর্ণনা করেন: আমরা মদীনার ইহুদী পরিবারে এরকম এক সন্তান জন্মগ্রহণের কথা শুনেছিলাম। তখন আমি এবং জোবায়দা বিন আওয়ম তার পিতামাতার নিকট গেলাম। তাদের অবয়ব অবিকল হযরত রাসূলে করীম সা. এর বর্ণনার মত দেখলাম।


আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, তোমাদের কি কোন পুত্র সন্তান আছে? তারা বলল, আমরা ত্রিশ বৎসর যাবৎ সন্তান বিহীন ছিলাম। তারপর আমাদের একটি ছেলে হয়েছে, তার চক্ষু টেরা, দাঁতগুলো ধারালো এবং সে অল্প উপকার করে। তার চক্ষু নিদ্রা যায়, কিন্তু তার হৃদয় নিদ্রা যায় না। তারপর আমরা তাদের নিকট হতে ফিরে আসার সময়, তাদের ছেলেকে রৌদ্রে একটি কাপড় দ্বারা আবৃত দেখলাম কিন্তু তার শব্দ আছে। সে তার মস্তক অনাবৃত করে বলল, তোমরা কি বল! তারপর বললাম, আমরা যা বলেছি, তা কি তুমি শুনেছ? সে বলল, হ্যাঁ, আমরা দুই চক্ষু নিদ্রা যায়, কিন্তু আমার হৃদয় নিদ্রা যায় না। আল-হাদীস (তিরমিযী)


হযরত জবের (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, মদীনায় একটি ইহুদী স্ত্রী একটি ছেলে প্রসব করেছিল, তার চক্ষু অন্ধ এবং তার দাঁত সম্মুখ ভাগে প্রসারিত। হযরত রাসূলে করীম সা. ভয় করিলেন যে, দাজ্জাল হতে পারে। তিনি তাকে শব্দ প্রদানকারী একটি মূল্যবান বস্ত্র দ্বারা আবৃত দেখলেন! তার মাতা হযরত নবী করীম সা. কে ডেকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, হে আবুল কাশেম! [মহানবী সা. কে আবুল কাশেমও বলা হত] এমন সময় হযরত ওমর (রাঃ) বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, আমি তাকে হত্যা করি। রাসূল সা. বললেন, যদি সে দাজ্জালই হয়, তুমি তার হত্যাকারী নও। তাহার হত্যাকারী মারইয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ)।

আরো পড়ুন>> হাদিসে বর্নিত কেয়ামতের আলামত


যদি সে তা না হয়, চুক্তিতে আবদ্ধ কোন লোককে হত্যা করা তোমার জন্য সঙ্গত হবে না। হযরত রাসূলে করীম সা.তাকে দাজ্জাল বলিয়া ভয় করতে লাগলেন। আল-হাদিস (শারহে ছুন্নাহ)

দাজ্জাল এর বর্তমান অবস্থান: হযরত ফাতেমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মোয়াজ্জেমকে নামাজের জন্য আজান দিতে শুনে। মসজিদে এসে হযরত রাসূলে করীম সা. এর সহিত নামাজ পড়লাম। যখন তিনি নামাজ শেষ করলেন তখন হাসি মুখে মিম্বরের উপর উঠিয়া বলিলেন- প্রত্যেক লোকই তাহার স্ব স্ব স্থানে আবস্থান কর।তোমাদের কে এজন্য ডেকেছি যে, তামীম খৃষ্টান ছিল সে এসে ইসলাম গ্রহণ করল।


সে আমাকে এমন একটি গল্প বলেছে যাহা তোমাদের কে আমি পূর্বেই বলেছি। তামিম বলেছে , সে লাখাম ও জোযাম গোত্রের ত্রিশ জন লোক নিয়ে সমুদ্রে একটি জাহাজে আরোহণ করল। এক মাস পর্যন্ত সমুদ্রের তরঙ্গ নিয়ে জাহাজটি খেলতে লাগল।

আরো পড়ুন>> ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন


অতঃপর একটি দ্বীপে তাদেরকে সূর্যাস্তের সময় নামিয়ে দিল। তারা একটি নৌকায় চড়ে দ্বীপের ভিতর গেল। এন সময় বেশ ঘন কেশ বিশিষ্ট একটি জন্তু তাদের সাথে সাক্ষাৎ করল। অনেক বেশি কেশের জন্য তারা বুঝতে পারল না যে, তাহারা জিজ্ঞাসা করল, তুমি কে?


সে বলল, আমি গুপ্ত দূত। এখানে অবস্থিত ঐ লোকটির নিকট তোমরা যাও। কেননা সে তোমাদের অনুসন্ধানের জন্য বেকুল হয়ে আছে। যখন ঐ লোকটির কথা বলল, আমরা তার নিকট হতে চলে গেলাম। মনে করলাম, এটি শয়তান।


অতঃপর আমরা দ্রুতবেগে ঐ খানকাতে প্রবেশ করলাম। তন্মধ্যে একটি বৃহৎ শরীর বিশিষ্ট লোককে দেখলাম । এইরূপ শরীর পূর্বে আমরা কখনো দেখি নাই। তার হাত গলার সহিত দৃঢ়ভাবে বেধে রাখা হয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার জন্য আক্ষেপ, তুমি কে?

আরো পড়ুন>> কেয়ামত কখন হবে ?

সে বলল, আমাকে জানার ক্ষমতা তোমাদের আছে? তোমরা কে তা আমাকে জানাও। তারা বলল, আমরা আরবের লোক। সমুদ্রে জাহাজে উঠেছিলাম। কিন্তু সমুদ্র আমাদের সহিত একমাস খেলা করল। অতঃপর আমরা এই দ্বীপে প্রবেশ করলাম। ঘন কেশ বিশিষ্ট একটি প্রাণী আমাদের সহিত সাক্ষাৎ করে বলল, আমি গুপ্ত দূত। খানকায় অবস্থিত ঐ লোকটির কাছে যাও। আমরা দ্রুতবেগে তোমার নিকট চলে আসলাম।


সে জিজ্ঞাসা করল, বাইছানের খেজুর গাছ সম্বন্ধে আমাকে জানাও। তারা কি ফল উৎপাদন করে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, শীঘ্রই তা উৎপাদন করবে না।


সে জিজ্ঞাসা করল, সাইবেরিয়ার হৃদ সম্বন্ধে আমাকে জানাও। সেখানে কি পানি আছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ পানি আছে। সে বলল, শীঘ্রই পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে।


সে পুনরায় বলল, যোগরের প্রস্রবণ সম্বন্ধে আমাকে জানাও। এই প্রস্রবণে কি পানি আছে? বললাম পূর্ণ পানি আছে এবং তার অধিবাসীগণ এটার পানি নিয়ে কৃষিকাজ করে।


সে জিজ্ঞাসা করল, মূর্খদের নবী সম্বন্ধে আমাকে জানাও । সে কি করেছে? আমরা বললাম, সে মক্কা হতে বের হয়ে ইয়াছরেবে এসেছে।


সে জিজ্ঞসা করল, সে তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছে? আমরা তকে জানালাম যে, আরববাসীগণ তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে। সে তাদের উপর জয়লাভ করেছে এবং তারা তাঁর বাধ্যগত হয়েছে।


সে বলল, সাবধান! তাঁকে মান্য করা তাদের পক্ষে উত্তম । আর তোমাদেরকে এই কথা জানাই যে, নিশ্চয়ই আমি এক চক্ষু বিশিষ্ট দাজ্জাল এবং শীঘ্রই আমাকে বের হতে আদেশ দেওয়া হবে।

আমি বের হয়ে দুনিয়া ভ্রমণ করব। এমন কোন শহর থাকবে না যে স্থানে আমি চল্লিশ দিনের মধ্যে যাব না শুধু মক্কা ও মদীনায় আমাকে যেতে দেওয়া হবে না।

আরো পড়ুন>> কে সেই ইমাম মাহদী?


এই দুই নগরের কোন নগরে যখন আমি প্রবেশ করতে যাব তরবারি হস্তে একজন ফেরেশতা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে প্রবেশ করতে বাধা দিবে। ইহার প্রত্যেক পার্শ্বেই আমাকে প্রতিরোধ করার জন্য ফেরেশতা থাকবে।


রাসূল সা. তাঁর লাঠির দ্বারা মিম্বরের উপর আঘাত করে বললেন- ইয়া তাইবা, ইয়া তাইবা। অর্থাৎ মদীনাবাসী সাবধান! আমি কি তোমাদেরকে ইহার সংবাদ দেই নাই? লোকজন বলিল, হ্যাঁ! তিনি বলিলেন- সতর্ক হও, সে শাম দেশের সমুদ্র বা ইয়েমেনের সমুদ্রে আছে। বরং সে পূর্বদিক হতে আসবে। তারা জিজ্ঞাসা করল, কোথা হতে ? তিনি তার হাত দ্বারা পূর্ব দিকে সংকেত করলেন। আল-হাদিস (মুসলিম)


আবদ্ধ দাজ্জাল চুল ছিঁড়তেছে: হযরত ফাতেমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তমীম দারী বলেছিল, হঠাৎ একদিন একটি স্ত্রীলোককে আমি আমার পার্শ্বে দেখতে পেলাম। সে তার কেশ বিন্যাস করতেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? সে উত্তর করিল, আমি গুপ্ত দূত। ঐ স্থানে যাও। আমি তখন ঐ স্থানে গিয়া দেখলাম একজন লোক তার চুল টানতেছে। শিকলে আবদ্ধ এবং আসমানে ও জমীনের মধ্যবর্তী স্থানে থেকে কষ্ট করতেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম— তুমি কে? সে উত্তর দিল, আমি দাজ্জল । আল-হাদিস (তিরমিযী)


খোরাসান হইতে দাজ্জাল বহির্গত হইবে; হযরত ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলে করীম সা. রলেছেন— খোরাসান নামক এক পূর্বদেশ হবে। লোকজন (বিশেষ করে ইহুদী, খৃষ্টান ও সত্তর হাজার কালো পাগড়ীধারী ভণ্ড মুসলমান) তার আনুসরণ করবে। তাহাদের মুখ হইবে দ্বিগুণ চর্বিযুক্ত ঢাল স্বরূপ । আল-হাদিস (তিরমিযী)


হযরত এরশাদ বিন হোছায়েন (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলে করীম সা. বলেছেন- যে দাজ্জাল সম্বন্ধে শুনে, সে যেন তার নিকট হতে নিজকে দূরে রাখে। আল্লাহর শপথ, কোন লোক তার নিকট নিজেকে মোমিন ভেবে আসবে, কিন্তু সন্দেহযুক্ত ঈমানের দরুন সে তার অনুসরণ করবে। আল- হাদিস (আবু দাউদ)  


**** আল্লাহ আমাদের সকল কে দাজ্জালের ফেৎনা থেকে হেফাজত করুন। (আমিন) ****

*** ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply