নাফরমানের কবরের আজাব | naformaner koborer ajab | bangla hadis

নাফরমানের কবরের আজাব | naformaner koborer ajab | bangla hadis

কবরের আজাব

নাফরমানের কবরের আজাব | naformaner koborer ajab | bangla hadis –


হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মাইয়েতকে কবরে রাখার পর তার কাছে কালোবর্ণের নীলচক্ষু বিশিষ্ট দুইজন ফেরেশতা আসেন। তাদের একজনকে মুনকার ও অপরজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মাইয়েতকে জিজ্ঞেস করে, ‘এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার অভিমত কি?’


মাইয়েত মুমিন হলে সঠিক উত্তর দেয়, ফলে তার জন্য কবর জান্নাতের বাগানে পরিণত হয়। আর যদি মাইয়েত নাফরমান ও মুনাফিক হয়, তাহলে সে মুনকার নাকীরের প্রশ্নের জবাবে বলে লোকদের যা বলতে শুনেছি আমি তাই বলেছি। তার জবাব শুনে ফেরেশতাদ্বয় বলেন, ‘আমরা ভাল করেই জানতাম যে তুমি এধরনের জবাব দেবে।’


অতঃপর জমিনকে বলা হয়, ‘এ ব্যক্তিকে চাপ দাও।’ ফলে জমিন তাকে এমনভাবে চাপ দেয় যে, একদিকের পাঁজর অপর দিকে চলে যায়। কিয়ামত পর্যন্ত সে উক্ত আযাবে অবস্থান করতে থাকে।

একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন, ‘উমর! মানুষ যখন তোমাকে কবরে রেখে মাটি দিয়ে চলে আসবে এবং তোমার নিকট কবরের পরীক্ষক ফেরেশতাগণ এসে উপস্থিত হবে, তখন তোমার কি অবস্থা হবে?

আরো পড়ুন>> বেপর্দা মহিলার কবরের আজাব


তাদের আওয়াজ বজ্রের মত হবে। চোখ হবে দৃষ্টিশক্তি হরণকারী বিদ্যুতের ন্যায়। তাদের অবস্থা তোমাকে প্রকম্পিত করবে এবং তারা তোমার সাথে বিচারকের ন্যায় কথাবার্তা বলবে, তখন তোমার কি অবস্থা হবে?


উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, তখন কি আমার জ্ঞান ঠিক থাকবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হাঁ, আজ তোমার জ্ঞান যে অবস্থায় আছে, সেদিনও একই অবস্থায় থাকবে।’ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তর শুনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘তাহলে (পরিস্থিতি) সামলে নিতে পারব ইনশাআল্লাহ।


নাফরমান কাফেরদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “শরীরের রগ সহকারে তাদের রূহ বের করা হয়। আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থান ও আসমানের সকল ফেরেশতা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। তার জন্য আসমানের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক দরজার ফেরেশতা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকবে যেন তার রূহ আমাদের পাশ দিয়ে উঠানো না হয়। (মরনে কে বাদ কিয়া হোগা)

আরো পড়ুন>> কেয়ামত কখন হবে ?


হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিঃসন্দেহে (মুমিন) মৃত ব্যক্তি কবরে পৌঁছার পর নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে বসে থাকে। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘তুমি কোন ধর্মের অনুসারী? সে উত্তর দেয়, আমি ইসলামের অনুসারী ছিলাম।


আবার প্রশ্ন করা হয়, তোমর আকীদা মতে ইনি কে? সে উত্তর দেয়, ইনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তিনি আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট মোজেযা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন এবং আমরা তাকে সত্য বলে স্বীকার করেছিলাম।


তারপর তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘তুমি কি কখনো আল্লাহকে দেখেছ? সে উত্তর দেয় (দুনিয়াতে) কারও পক্ষেই আল্লাহ তায়ালাকে দেখা সম্ভব নয় । আমি কি করে দেখব?


অতঃপর তার সামনে জান্নামের দিকে একটি জানালা খুলে দেওয়া হয় । সেই জানালা দিয়ে সে দেখতে পায় জাহান্নামের মধ্যে জ্বলন্ত কয়লাগুলো একটি আরেকটিকে গ্রাস করছে। তখন এই জাহান্নামের ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পর তাকে বলা হবে, চিন্তা কর, আল্লাহ পাক তোমাকে কত বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন।

আরো পড়ুন>> আল্লাহর ভয়ে যে চোখ কাঁদে

অতঃপর জান্নাতের দিকে একটি জানালা খুলে দেওয়া হয়। সেই জানালা দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও অন্যান্য নেয়ামতসমূহ দেখতে পায়। তখন তাকে বলা হবে, এটা হল তোমার ঠিকানা। দুনিয়াতে তুমি ঈমানদার ছিলে ঈমানের উপর তোমার মৃত্যু হয়েছে এবং ঈমানের উপরই তুমি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠবে।’


অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নাফরমান ব্যক্তি অত্যন্ত ভীত শঙ্কিত হয়ে তার কবরে উঠে বসে, আর তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি দুনিয়ায় কোন ধর্মের উপর ছিলে? সে উত্তরে বলে ‘আমার জানা নেই।


পুনরায় তাকে (নবী কারীম সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করা হয়, ‘ঐ ব্যক্তি কে?’ সে উত্তর দেয়, তার সম্পর্কে অন্যান্য লোক যা বলেছে, আমিও তাই বলেছি।’


অতঃপর জান্নাতের দিক থেকে তার সামনে একটি জানালা খুলে দেওয়া হয়। ফলে উক্ত জানালা দিয়ে সে জান্নাতের সুন্দর সুন্দর ও নয়নাভিরাম দৃশ্যসমূহ দেখতে পায়। তখন তাকে বলা হয়, চিন্তা কর, তুমি আল্লাহর নাফরমানি করার কারণে আল্লাহ পাক তোমাকে কেমন নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন>> ইসলাম সম্পর্কে অজানা কিছু প্রশ্নের উত্তর


এরপর তার সামনে জাহান্নামের দিক থেকে একটি জানালা খুলে দেওয়া হয়, আর সে দেখতে পায় যে, জান্নামের জ্বলন্ত অঙ্গারগুলো কীভাবে একেঅপরকে গ্রাস করছে।


অতঃপর তাকে বলা হয়, এটাই হলো তোমার ঠিকানা। দুনিয়াতে থাকার সময় তুমি পরকালের প্রতি সন্দেহ নিয়ে জীবিত ছিলে, সন্দেহ অবস্থায়ই তোমার মৃত্যু হয়েছে আর কিয়ামতের দিন সেই সন্দেহ নিয়েই তুমি কবর থেকে উঠবে। (মিশকাত শরীফ)


*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।


Leave a Reply