উটের সাথে রাসূল সা. এর কথা বলা | uter sathe rasuler kotha bola | islamic post

উটের সাথে রাসূল সা. এর কথা বলা | uter sathe rasuler kotha bola  

উট

islamic post | bangla hadis 

উটের সাথে রাসূল সা. এর কথা বলা | islamic post | bangla hadis

একবার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও যাচ্ছিলেন। সাথে সাহাবায়ে কেরামের একটি বিশাল দল। উভয় জগতের সম্রাট হয়েও তিনি ছিলেন সাধারন মানুষের মতই। মাটিতে হাঁটতে, চলতে, মাটির কাছাকাছি থাকতে তিনি সবসময় ভালোবাসতেন। ‘মাটির সৃষ্টি মানুষকে, মাটিতেই যেতে হবে, মাটিই হবে শেষ ঠিকানা’ এই সত্য তিনি কখনো বিস্মৃত হতেন না। তাই পারতপক্ষে তিনি মাটিতে নেমেই চলতেন।


রাজ্যশাসনে, প্রজানিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ, অত্যাচার বা কঠোরতা নয়, তিনি মন দিয়ে মন জয় করতেন। হৃদয় দিয়ে হৃদয় শাসন করতেন। তার রাজত্বে কেউ প্রজা নয়, সবাই আল্লাহর বান্দা, আশরাফুল মাখলুকাত। রাজকীয় সমারোহে নয়, তিনি চলছেন পায়ে হেঁটে, অতি সাধারণ মুসাফির বেশে। সাথের সাহাবীদের চলনেও আড়ম্বরতার কোনো ছোঁয়া নেই। শক্তি, ক্ষমতা, দম্ভ ও বড়ত্বের কোনো প্রকাশ নেই।


চলতে চলতে অবাক বিস্ময়ে সবাই অবলোকন করলেন, হঠাৎ কোত্থেকে ছুটন্ত একটি উট হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ে সিজদা করতে আরম্ভ করল। অবনত মস্তকে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে পায়ের উপর শ্রদ্ধা নিবেদন করতে লাগল।

আরো পড়ুন>> জীবনের শেষ সময়ে রাসূলের নামাজ


উটটির দু’ চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে সিজদা করার যদি অবকাশ থাকে, তাহলে তো এই উটের চেয়ে আপনাকে সিজদা করার আমরাই বেশি হকদার।


সিজদা করার বিধান-

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করতে বলতাম, তাহলে মহিলাদের বলতাম, স্বামীদের সিজদা করতে।


উটের সাথে রাসূল সা. এর কথা-

এরপর হুযূর বললেন, তোমরা কি জানো? এই উটটি আমার কাছে কি নালিশ নিয়ে এসেছে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জানি না। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন।

আরো পড়ুন>> আবু জেহেল কেন নবীজীকে ভয় পেত?


তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, উটটি আমার নিকট নালিশ নিয়ে এসেছে। তার অভিযোগ হলো, সে দীর্ঘ অনেক বৎসর যাবৎ বিরামহীনভাবে তার মালিকের খেদমত করেছে। কখনো অলসতা করে সময় নষ্ট করেনি। মালিককে সন্তুষ্ট রাখতে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছে। যত কঠিন কাজই দিয়েছে সব করেছে। যৌবনে তাকে তার মালিক বেশি বেশি খাবার দিয়েছে, সেও ততোধিক কাজ করেছে। কারণ তখন তার দেহে প্রাণশক্তি ছিল, তেজ ছিল, সাহস ও তাকত ছিল। কর্মক্ষমতা ও স্পৃহা ছিল।


এখন যখন উটটি বৃদ্ধ হয়ে গেছে, শরীরের চামড়া ঢিলা হয়ে গেছে, আগের মতো কাজ করতে পারছে না। সেই শক্তি, তেজ, সাহস হারিয়ে ফেলেছে। তখন তার মালিক খাবার কমিয়ে দিয়েছে। তাও নিয়মিত সময়মতো দেয় না। অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটে।


আজ মালিকের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান। মেহমান আসবে। এ উপলক্ষে একটি ছুরি নিয়ে সে তাকে জবেহ করতে উদ্যত হয়েছে। তাই প্রাণ বাঁচাতে উটটি আমার কাছে ছুটে এসেছে। যেন আমি তার জীবন বাঁচানোর ব্যবস্থা করি।


এরপর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের মালিককে ডেকে পাঠালেন। সে উপস্থিত হলে তার সামনে সমস্ত ঘটনা তুলে ধরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, উটটি যা বলেছে তা কি সত্যি?

আরো পড়ুন>> রাসূলের ইশারায় গাছের চলাচল


উটের মালিক বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! খোদার কসম করে বলছি, সে যা বলেছে সবই সত্য। একবিন্দু মিথ্যার ছোঁয়া নেই। অস্বীকার করার উপায় নেই। তার প্রতি আমার আচরণ এমনই ছিল।


হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার মন চায় এই উটটি আমি তোমার কাছ থেকে কিনে নিই। সে প্রাণ বাঁচাতে আমার কাছে ছুটে এসেছে। আমার কাছে থাকতে চাচ্ছে।


লোকটি তখন খুশি মনে তা হাদিয়া হিসাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পেশ করে নিজের সৌভাগ্য বাড়িয়ে নিল।


***ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, ফলো ও শেয়ার করুন এবং আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করে আমাদের পাশে থাকুন। ধ্যন্যবাদ***


Leave a Reply