রাসূল সা. এর মক্কা বিজয়ের ঘটনা | rasuler mokka bijoyer history | islamic post
আসুন! আমাদের প্রিয় নবীজির জীবনের মহানুভবতা দেখতে চান? তাহলে মক্কা বিজয়ের দিনের ঘটনা পড়ুন। নবীজি বিজয়ী হয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন। আজ তিনি বিজয়ী সুলতান। সঙ্গে আছে শত শত বীর যোদ্ধা। শত্রুরা ( মক্কার কাফেরেরা ) দুর্বল, অসহায়। একদিন তারাই অত্যাচারের পাহাড় ভেঙে মুসলমানদেরকে তাদের জন্মভূমি থেকে হিজরত করতে বাধ্য করেছিল। সুতরাং আজ প্রতিশোধ নেয়ার পালা। কিন্তু নবীজি তা না করে কি করেছেন? অত্যন্ত বিনম্র ও শান্তিপূর্ণভাবে বাহনের পিঠে সিজদাবনত হয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে মক্কায় প্রবেশ করলেন।
মক্কার কাফেরদের আতঙ্ক।
রাতে আতঙ্কে উৎকন্ঠায় মক্কার নারীদের ঘুম আসছিল না। হায়! আজ আমাদের না জানি কি উপায় হবে? তারা হযরত বেলাল রা. এর সাথে কি আচরণ করেছিল তা মনে পড়েগেল। হযরত সুমাইয়ার রা. কে নির্মম অত্যাচার করে শহীদ করার ঘটনা তাদের মনে পড়েগেল। আরো অন্যান্য সাহাবাদের অত্যাচার নির্যাতনের লোমহর্ষক আচরণগুলোর মনে পড়ে গেল। অতীতের স্মৃতিচারণ করে করে তাদের জীবনের আশা ফুরিয়ে যাচ্ছিল।
রাতের শেষ প্রহর। চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে নারীরা তাদের পুরুষদের বলল, মক্কার প্রতিটি অলি-গলি নিথর-নিস্তব্ধ। কোন হৈ-চৈ নেই, বিজয়ের উল্লাস নেই।বিজয়ী সেনারা কারো ঘরে হানাও দিচ্ছে না। না কোন ঘর থেকে আত্মচিৎকার ভেসে আসছে! মুসলমানরা তাহলে গেল কোথায়? তারা কি করছে? পুরুষরা বলল, হয়তো তারা পরবর্তী করণীয় বিষয় নিয়ে পরামর্শ করছে। নারীরা বলল, এভাবে ঘরে বসে থেকো না। একটু বাহিরে গিয়ে দেখো ওরা কোথায়? কি করছে? এমন যেন না হয় যে, তারা হঠাৎ আমাদের ঘরে হামলা করে বসে, আমাদের ইজ্জত সম্মান লুটে নেয়, আমাদের হত্যা করে। কে জানে, আগামী দিনের সূর্যের আলো আমরা দেখতে পাবো কি-না? কিছুই বলা যাচ্ছে না।
তারপর পুরুষরা কম্পিত পায়ে ঘর থেকে বের হলো। দেখল, রাস্তা, অলি-গলি নীরব-নিস্তব্ধ। একজন মুসলিম সৈন্য কোথাও নেই। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে তাদেরকে পাওয়া গেল কাবা ঘরের চৌহদ্দিতে। কাবার পাদদেশে এক বিস্ময়কর দৃশ্য। সকল সাহাবায়ে কেরাম সেখানে। কেউ তাওয়াফ করছে, কেউ হাজরে আসওয়াদ চুমু খাচ্ছেন। কেউ মাকামে ইব্রাহিমীতে সিজদায় পড়ে আছেন। সবার চোখ অশ্রুসিক্ত। মুখে মহান আল্লাহর প্রশংসার তাসবিহ। একটি বিজয়ী জাতি লুটপাট ছেড়ে এ কেমন আচরণ করছে? এমন অনুপম দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কেউ কি কখনো দেখেছে?
মক্কার পৌত্তলিকরা এ বিস্ময়কর আচরণ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না, এরা কোন যুদ্ধবাজ জাতী নয়। এরা মহান আল্লাহর দরবারে সেজদাকারী খোদাভীরু জাতি। এরা অত্যাচারের প্রতিশোধ নেয়, ক্ষমা আর উদারতা দিয়ে। ঘোষণা হলো, নবীজি সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাদের অন্তরগুলোকে ইমানের আলোয় আলোকিত করে দিলেন। উষার আলো ফুরতেই মানুষ দলে দলে এসে ইসলাম গ্রহণ করল।
প্রিয় নবীর চাচা হামযা রা. এর হত্যা কারিণী।
নবীজির প্রিয় চাচা হযরত হামজার মৃতদেহ কেটে কলিজা চর্বন কাহিনী হিন্দাও রহমতের নবীর দরবারে এসে উপস্থিত হলো। বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে মুসলমান বানিয়ে নিন।
হে হিন্দা! তুই তো হযরত হামজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কলিজার টুকরো টুকরো করে হার বানিয়ে গলায় পড়েছিলি। আজ সেই বাজি কেন হেরে গেলি? আজ এখনো কেন এসেছিস? তুই তো খুব আগুন ঝরিয়ে বলতি, প্রতিশোধ নেব, প্রতিশোধ! কিন্তু আজ এখানে হাঁটু গেড়ে কেন বসে আছিস? হ্যাঁ বন্ধুরা! দুজাহানের বাদশা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উন্নত চরিত্র ও সাহাবায়ে কেরামের অত্মদানের ফলাফল ছিল এটি। তাদের ধৈর্য, উদারতা, খোদাভীরুতা ও কল্যাণকামিতা অত্যাচারীদের পাষাণ হৃদয়গুলোকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছিল। দর্প-অহঙ্কার ও হঠকারিতা সবকিছু গুড়িয়ে গিয়েছিল সে সোনালি কাফেলার পদতলে। হিন্দা সেখানে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।
আরো পড়ুন>> রাসূল সা. এর স্বপ্নের বর্ণনা
কালিমা পড়ার পর রাসূল সা. এর প্রতি ভালোবাসা।
আরো পড়ুন>> এক গ্লাস দুধে শতাধিক লোকের ভোজন
নবীজির সিদ্ধান্ত সমগ্র পৃঠিবী বাসীর জন্য উপদেশ ছিল।
নবীজির মক্কা বিজয়ের পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাটি কেমন এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল, যা গোটা আরব বাসির হৃদয় জয় করে নিয়েছিল। এতটা ক্ষমা ও উদারতা তারা আর কখনো দেখিনি।
আরো পড়ুন>> সাপ দ্বারা রাসূল সা. কে সাহায্য
আজ পৃথিবীর এক জাতি অন্য জাতির উপর বিজয় লাভ করলে কি করে? কেমন আচরণ করে? তথাকথিত সভ্য ও সমৃদ্ধ দেশগুলোর অতীত ইতিহাস একটু পড়ে দেখুন; তারা যখন কোন দেশ জয় করেছিল, তখন বিজিতদের সঙ্গে তাদের আচরণ কেমন হয়েছিল? আপনি হতাশ হবেন। তাদের প্রতি আপনার ঘৃণা হবে, ধিক্কার দিতে বাধ্য হবেন। পক্ষান্তরে আমাদের বিশ্বনবীর বিজয়-পরবর্তী কর্ম-আদর্শও দেখুন, হৃদয়ে জুড়িয়ে যাবে। ভক্তি ও কৃতজ্ঞতায় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠবে। (সুবাহানাল্লাহ)
***ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন এবং সওয়াবেরে উদ্দেশ্যে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।