আল্লাহ কেন সূর্য সৃষ্টি করলেন? | allah keno surjo sristi korlen?
আল্লাহ কেন সূর্য সৃষ্টি করলেন? | bangla tafsir | islamic post –
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন মজীদে এরশাদ করেন-
وَ جَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَ جَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا .
বাংলা অনুবাদ: সূর্যকে আল্লাহ তায়ালা একটি উজ্জল প্রদ্বীপরূপে (হিসেবে) সৃষ্টি করেছেন। (সূরা নূহ : ১৬)
একমাত্র আল্লাহ পাকই উত্তমরূপে জ্ঞাত আছেন সূর্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও তার রহস্য সম্পর্কে। মানুষ তার স্বীয় মেধা, জ্ঞান-বুদ্ধি ও গবেষণা দ্বারা যা কিছু জানতে সক্ষম হয়েছে, নিম্নে তারই আলোচনা করা হল।
সূর্যের আবর্তন-বিবর্তনের কারণেই পৃথিবীর বুকে দেখা দেয় রাতের পর দিন, আবার দিনের পর রাত। রাত-দিনের পার্থক্যটা না থাকলে মানব জাতির যাবতীয় কাজ-কর্ম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। সুষ্ঠভাবে সংসারের কোন কাজই সম্পাদন করা সম্ভব হত না। অসম্ভব হয়ে পড়ত জীবিকা উপার্জন করা এবং কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়তো জীবন ধারণ।
সূর্যহীন হয়ে পৃথিবী যদি আধারেই আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো তাহলে কোন বস্তু অবলোকন করা বা তার রং পরখ করা অসম্ভব হয়ে পড়তো। সূর্যের আলো যদি না থাকতো তাহলে মানবজাতিসহ অন্যান্য প্রাণী যে খানা গোত্র, তা হজম হত না। ফলে অনিবার্যভাবে প্রাণীজগত অসুস্থ তথা বিপর্যোন্ত হয়ে পড়তো।
অনুরূপভাবে সূর্য যদি কখনোই অস্ত না যেত, রাতের আগমন না ঘটতো এবং বিরামহীন কেবল দিনই থাকতো, তাতে করেও মানব জাতিসহ প্রাণীকূল বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য হতো, সমগ্রদিনের পরিশ্রমের পর মানুষ স্বভাবতই রাতে বিশ্রাম নিয়ে শরীরের সমস্ত শ্রান্তি- ক্লান্তি বিদূরিত করে থাকে এবং আগামী দিনের কাজের জন্য দেহকে সুস্থ ও সতেজ করে। দেহ-মনে ফিরিয়ে আনে নতুন কাজের স্পৃহা-আমেজ ।
যদি সূর্যের অস্ত ও রাতের আগমন না ঘটতো তাহলে মানুষ অর্থ ও সম্পদের লালসায় অনবরত কাজ করতে থাকতো, বিশ্রাম নিত না। যার ফল শ্রুতিতে তাদের শরীর ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে অকর্মন্য হয়ে পড়তো। কাজ করার সার্বিক অনুভূতি উদ্যম নষ্ট হয়ে যেত এবং বিবিধ রোগ- ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আরো নিস্তেজ ও অসাঢ় হয়ে পড়তো শরীর।
আরো পড়ুন>> সমুদ্রের অজানা রহস্য
অনুরূপভাবে যে সব গৃহ পালিত পশু সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত- পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে, সে সব পশুকে রাতে তাদের ঘরে বেঁধে রাখা হয়, তারা যেন সারারাত বিশ্রাম নিয়ে আগামী দিন নতুনভাবে কাজ করার আমেজ ও শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। রাতের আগমন না ঘটলে বিশ্রামহীন অবিরত কাজ করে তাদের দেহও দুর্বল এবং অসাড় হয়ে পড়তো। শরীরের সকল শক্তি নষ্ট হয়ে যেত।
সূর্য অস্ত না গিয়ে অবিরাম উদয়মান থাকলে আরেকটি যে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিত, তাহল পৃথিবীর মাটি ও যাবতীয় আসবাব অসহনীয় গরম হয়ে যেত। তাপ-উত্তাপের কারণে পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষ ও অন্যান্য সমস্ত প্রাণীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে যেত।
সুতরাং এখন এ সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে যে, সূর্যের উদয় ও অস্ত উভয়টিই সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাণীজতের জন্য কল্যাণকর। অন্যথায় পৃথিবীতে সকল প্রাণীর স্থিতি ও শান্তি বিঘ্নিত হতো। পৃথিবীতে এর একটি উপমা হলো, মানুষ যখন একাধারে বৈদ্যুতিক বাতির উজ্জ্বল আলোতে বিরক্ত হয়ে উঠে তখন বাতি নিভিয়ে দিয়ে সস্তি লাভ করে।
আরো পড়ুন>> আকাশ থেকে খাবার অবতরন
আবার এক সময় বিরক্তিকর টানা অন্ধকার হতে মুক্তির জন্য আলো জ্বেলে দিয়ে প্রশান্তি লাভ করে। আগুন দ্বারা মানুষ নানা ধরনের খানা প্রস্তুত করে। আগুন দ্বারাই মানুষ অন্ধকারের অভিশাপ থেকে নাজাত লাভ করে । এমনি নানা ধরনের উপকার মানুষ এই আগুন থেকে পেয়ে থাকে। এভাবেই সৃষ্টির গতি-প্রকৃতি ও জীবনের সুষ্ঠুতা বহাল আছে। আলো-আঁধার আর তাপ-শৈত্য উভয়ের মধ্যেই জীবনের স্থিতি ও অস্তিত্ব বিদ্যমান। অন্যথায় পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব ও স্থিতি সম্ভবপর হতনা। এ দিকে ইঙ্গিত করে,
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছন-
وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيْهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَالْقِيْهِ فِي الْيَمِ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِ إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوْهُ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ.
বাংলা অনুবাদ: (হে মুহাম্মদ!) আপনি লোকদেরকে বলে দিন, যদি আল্লাহ পাক তোমাদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত অন্ধকার রাত করে দিতেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য প্রভূ কে ছিল, যে তোমাদেরকে আলো দান করতো? (সূরা কাসাস : ০৭)
সূর্যের উদয়-অস্তের মাঝে যেমন নিগূঢ় রহস্য নিহিত, তেমনি তার উদয় ও অস্তের ধারাবাহিকতায় ঋতুর যে বিবর্তন তার মাঝেও অসংখ্য রহস্য বিদ্যমান আছে। উদ্ভিদ ও জীব-জগতের জন্ম ও অস্তিত্বের প্রায় যাবতীয় সব কিছুই সূর্যের উদয় ও অস্তের স্থান ও কালের পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল।
আরো পড়ুন>> লোভের ভয়াবহ পরিনাম জানলে বিস্মিত হবেন
সময়মত ফুল ফোটা, ফল-ফলাদি পাঁকা ইত্যাদি এই বিবর্তনের উপরই নির্ভর করে। ঋতুর পরিবর্তনে রাত ও দিনের ছোট বড় হওয়াও এই রহস্যেরই অন্তর্ভুক্ত। সূর্য যদি সব সময় একই নিয়মে একই সময়ে উদিত হতো ও অস্ত যেত তবে দিন রাতের সময়ের মধ্যে কোন কম-বেশী হত না। অথচ মানুষের প্রকৃতির দাবী ঠিক এর বিপরীত। সে সব সময় পরিবর্তন ও নতুনত্বের পিয়াসী। এর মাঝেই সে আনন্দ ও প্রশান্তি লাভ করে।
প্রবাদ আছে যে, প্রত্যেক নতুনত্বেই আকর্ষণ ও স্বাদ আছে। সময় পরিমাপ আর সেই অনুসারে কাজ সমাধা করা সূর্যের বিবর্তন বা উদয় ও অস্তের উপরই নির্ভরশীল। লক্ষ্য করো, মহান আল্লাহ তায়ালা দিনকে জীবিকা উপার্জনের জন্য এবং রাতকে অবকাশ ও আরাম-বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তা ছাড়া ঋতুর বার্ষিক বিবর্তন, প্রত্যেক মৌসুমে আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদির মূল উৎস হলো, সূর্যের আবর্তন-বিবর্তন।
অপর পক্ষে আবহাওয়ার পরিবর্তনে তাপ ও শৈত্যের মাঝে তারতম্য ঘটে এবং অনিবার্যভাবে উদ্ভিদ ফসল ও ফল-ফুলের উপর তার প্রভাব পড়ে। যথাসময়ে মেঘ সৃষ্টি, বর্ষণ ও বৃষ্টি হওয়া, সূর্য ও মৌসূমের বিবর্তন বা পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। যদি সূর্যের নিয়মতান্ত্রিক উদয় ও অস্ত না ঘটতো তাহলে যথাসময়ে বর্ষণে বিঘ্ন ঘটত, যা জীব ও উদ্ভিদ জগতের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতো।
কেননা বর্ষণ ও বর্ষা মানব ও জীব- জগতের জীবন-ধারণের ক্ষেত্রে একান্ত সহায়ক। আর মানব আকৃতি- প্রকৃতিতে পরিবর্তন পরিবর্ধন এই ঋতুর বিবর্তনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। মানব প্রকৃতির হ্রাস-বৃদ্ধি, বিপর্যয়, উন্নতি ও স্থিতি ইত্যাদির মূলে রয়েছে সূর্যের বিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব।
মোটকথা, মানব-দেহ অসুস্থ্য হওয়া, সুস্থ হওয়া, দেহে শক্তির সঞ্চার হওয়া, কাজ-কর্মে উদ্যমতা সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি সূর্যের বিবর্তনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে বিজড়িত। এই সবকিছুই যথাসময়ে এবং পর্যায়ক্রমে প্রকৃতির ধারায় ঘটে চলছে।
আরো পড়ুন>> কেন আমরা পর্দা করব?
আর এ ঘটনার পিছনেই রয়েছে নিগূঢ় রহস্য ও যাবতীয় কল্যাণ। সৃষ্টির সামঞ্জস্যতা ও ধারাবাহিকতা দেখে স্রষ্টা ও তার সৃষ্টির নৈপুণ্যতার প্রতি কৃতজ্ঞতাবনত হওয়া ব্যতীত উপায় নেই। যার অসীম কুদরত ও সৃষ্টির চূড়ান্ত নৈপুণ্যে এই বিশ্বজগত নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে, তিনি মহান করুণাময় নিপুণ সৃষ্টিকর্তা।
সময়ের বার্ষিক আবর্তন এবং শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা প্রভৃতি ঋতুর আগমন-বিগমন সূর্যের স্বীয় কক্ষপথ পরিক্রমার উপর নির্ভরশীল। আর এই পরিক্রমা দ্বারা দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছরের গণনা করা হয়ে থাকে এবং মানুষসহ প্রতিটি বস্তুর বয়স নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
আবার লক্ষ্য করো, মহা কুশলী আল্লাহ তায়ালা সূর্যকে অতিশয় উচ্চে স্থাপন করেছেন। এটা তাঁর সৃষ্টির অপার কৌশল। সূর্যকে যদি তিনি একই স্থানে স্থির রাখতেন, তাহলে পৃথিবীর এক অংশই সূর্যের আলো ও তাপ পেতো, অন্য অংশ তা থেকে বঞ্চিত থাকতো। সারা পৃথিবীতে সমভাবে তার আলো বিকীর্ণ হতে পারতো না। এক অংশে নিরবচ্ছিন্নভাবে আলো ও তাপ পড়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠত এবং অন্য অংশ সব সময় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো এবং শীতল হয়ে যেতো।
কিন্তু মহান স্রষ্টার শান তা নয়। তিনি সূর্যকে বিবর্তন ও গতিশীল করে সৃষ্টি করেছেন। সূর্য উদয়ের পর পৃথিবীর যে অংশে তার আলো ও তাপ পড়ে অস্তের পর সে অংশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং অপর অংশ (যা ইতিপূর্বে অন্ধকার ছিল) আলো ও তাপ লাভ করে থাকে। এভাবে সূর্যের আলো ও তাপ পৃথিবীর সর্বত্র বিকীর্ণ হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন>> কোরআনে বর্ণিত ইব্রাহিম আ. এর ঘটনা
এবার রাত ও দিনের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করো। দিন ও রাতের নিয়মতান্ত্রিক বিবর্তন, ও পরিবর্তনের মাঝে নিগূঢ় রহস্য ও অসংখ্য মঙ্গল নিহিত আছে। এই নিয়মানুবর্তিতায় যদি সামান্যতম ব্যঘাত ঘটে তাহলে পৃথিবীর কোন প্রাণীই এর প্রতিক্রিয়ার বাইরে থাকবে না।
জীব হোক আর উদ্ভিদ হোক কম-বেশী সকলের উপরই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেমন— ধরা যাক, যত সময় পর্যন্ত দিনের আলো থাকবে তত সময় পর্যন্ত প্রাণী মাত্রই কোন না কোন কাজে লিপ্ত থাকবে। এতে তার শক্তি ক্ষয় হবে। কর্ম-উদ্যমতা হ্রাস পাবে; কিংবা পশু-পাখিগুলো জীবিকার তালাশে মাঠে-ঘাটে চরতে থাকবে।
আর দিনের দীর্ঘসূত্রতার ফলে এক সময় তাদের এই কর্মলিপ্ততা বা চরা শক্তিও ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আর যে কোন কিছুই সীমার বাহিরে চলে যাওয়ার অর্থ হলো, অনিবার্য ধ্বংস। এবার উদ্ভিদ জগতের কথা ধরো, তাদের উপর যদি অবিরত আলো ও তাপ পড়তে থাকে তাহলে সেগুলো শুকিয়ে যাবে বা জ্বলে ভষ্ম হয়ে যাবে। অনুরূপ যদি অনবরত রাত থাকে এবং সূর্যের আলো ও তাপ না থাকে তাহলে মানুষ ও সকল জীবের জীবিকা আহরণের ক্ষেত্রে সীমাহীন সমস্যার যে সৃষ্টি হবে তা বলাই বাহুল্য। প্রকৃতি শীতল হয়ে নিস্তেজ ও অসাড় হয়ে পড়বে। সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদের পক্ষে জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনকি সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
*** ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলো করে আমাদের সাথে থাকুন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে বন্ধুদের নিকট ছড়িয়ে দিন।